রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করার দাবি নাগরিক সমাজের

নিজস্ব প্রতিবেদক •


কক্সবাজারের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সকল ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের দাবি জানিয়েছেন কক্সবাজারের নাগরিক সমাজ।

শনিবার (৫ জুন) বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে কক্সবাজার পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে উখিয়া-টেকনাফসহ কক্সবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবেশ পুনরুদ্ধারে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

কক্সবাজারে কর্মরত স্থানীয় ও জাতীয় ৫০ টিরও বেশি সংস্থার নেটওয়ার্ক কক্সবাজার সিভিল সোসাইটি এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ) এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার যৌথভাবে এই মানব বন্ধনের আয়োজন করে।

মানববন্ধন ও আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন সিসিএনএফ’র সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম ও উন্নয়নকর্মী মিজানুর রহমান বাহাদুর।

এতে বক্তব্য রাখেন- বাপা কক্সবাজার জেলা সভাপতি প্রবীন সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম, অগ্রযাত্রার সভাপতি নীলিমা আক্তার চৌধুরী, কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি মকবুল আহমদ, এনভায়রনমেন্ট পিপলস্-এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ, সেইভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধি ইফাত উদ্দিন ইমু, ছায়ানীড় সভাপতি কল্লোল দে চৌধুরী, মুক্তি কক্সবাজার প্রতিনিধি অশোক কুমার সরকার, ইপসা প্রতিনিধি আবিদুর রহমান, পালস্ কক্সবাজার প্রতিনিধি এ. মং মারমা।

ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারের পরিবেশ আজ হুমকির মুখে। অধিক গাছপালা কাটার ফলে অক্সিজেনের পরিমান কমে যাচ্ছে। কক্সবাজার জেলায় প্রায় ২৪ লাখ মানুষের পাশাপাশি উখিয়া টেকনাফে ১০ লক্ষের ও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাপ রয়েছে। যার ফলে কক্সবাজারে পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে এবং পানি হয়ে যাচ্ছে লবণাক্ত। ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে বিভিন্ন আইএনজিও এবং ইউএন এনজিওদের প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানাই।

নীলিমা আক্তার চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারে প্রতিদিন টন টন প্লাষ্টিকের বর্জ্য যুক্ত হচ্ছে। বর্ষার সময় এসব বর্জ্য গিয়ে মিশছে সাগরে, নদীতে এবং মাটিতে। প্লাষ্টিক বর্জ্যরে কারণে নদীর তলদেশ ভরাট হচ্ছে, নদী হারাচ্ছে নাব্যতা। প্রায় পাঁচ লক্ষ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি দশ লক্ষের বিশাল রোহিঙ্গা প্রতিদিন তৈরি করছে টন টন প্লাস্টিক বর্জ্য যা স্থানীয় পরিবেশে মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনছে। প্লাস্টিকের বিকল্পও রয়েছে। ক্যাম্পে প্লাস্টিক পণ্য বাবঞার বন্ধে আইএনজিও এবং জাতিসংঘ সংস্থাগুলো এগিয়ে আসতে হবে।

কলিম উল্লাহ তাঁর বক্তব্যে কক্সবাজারে অবৈধ ইটভাটা ও নদী, খাল হতে বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য প্রশাসনকে তড়িৎ এবং কার্যকর উদ্যোগ গ্রহনে অনুরোধ করেন। অশোক কুমার সরকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খালি জায়গাগুলোতে বনায়নে আইএনজিও, ইউএন এনজিও সহ সকল এনজিওদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গা আসার ফলে উখিয়া এবং টেকনাফের মোট ১৭৬ হেক্টর আবাদি জমি দখল হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১০ লক্ষ জনগোষ্ঠীর প্রতিদিনের মানবসৃষ্ট ও প্লাস্টিক বর্জ্যরে কারনে মোট ৯৩ হেক্টর জমি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। চাষের অযোগ্য জমি গুলোকে চাষযোগ্য করে তুলতে জরুরি উদ্যোগম প্রয়োজন।

এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজারের অন্যতম প্রধান দুটি নদী বাঁকখালী আর কোহেলিয়া আজ দখলবাজদের কারণে বিপন্ন হতে চলেছে। নিয়মিতভাবে এই নদীগুলো ভরাট হচ্ছে। নদীগুলো অবৈধ দখল এবং দূষণমুক্ত করা সময়ের দাবি। মকবুল আহমদ অবিলম্বে পাহাড় কাটা বন্ধের দাবি জানান।

আজকের মানববন্ধন ও আলোচনা সভা হতে নিম্নে লিখিত দাবিসমূহ উত্থাপিত হয়ঃ

১. রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ কক্সবাজারে প্লাস্টিকের ব্যবহার জরুরিভিত্তিতে বন্ধ করতে জাতিসংঘ এবং আইএনজিও গুলোর জরুরি পদক্ষেপ চাই

২. রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ কক্সবাজারে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধ করে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে

৩. রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ইউএন এবং আইএনজিও-দের তড়িৎ পদক্ষেপ জরুরি

৪. রোহিঙ্গা ক্যাম্পের খালি জায়গাগুলোতে বনায়ন নিশ্চিত করতে হবে

৫. রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নষ্ট হওয়া ফসলী জমি পুনরায় চাষযোগ্য করতে পদক্ষেপ গ্রহণ কর হবে

৬. বাঁকখালী নদী দূষণ এবং দখলমুক্ত করতে হবে

৭. সংরক্ষিত বনাঞ্চল ইজারা/লিজ বাতিল করতে হবে

৮. হ্যাচারির বিষাক্ত কেমিক্যাল সাগরে ফেলা বন্ধ করতে হবে

৯. খাল, নদী, সমুদ্র, ফসলীজমি এবং পাহাড় হতে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ চাই

১০. অবিলম্বে পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে

১১. সেন্টমার্টিনে কনক্রিটের স্থাপনা নিষিদ্ধ করতে হবে

১২. অবৈধ ইটভাটা বন্ধে প্রসাশনের কঠোর পদক্ষেপ চাই,

১৩. সমুদ্র সৈকতে বীচ-বাইক বন্ধ করতে হবে

১৪. কক্সবাজার শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে

১৫. কক্সবাজারে পরিবেশ পুনরুদ্ধারে তহবিল গঠন করতে হবে।

বিশ্ব পরিবেশ দিবসের এই কর্মসুচিতে সাংবাদিক, সমাজপ্রতিনিধি, সুশীলসমাজসহ বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।