জাতীয় সংসদ নির্বাচন ’১৮ সদর-রামু আসন

আওয়ামী লীগ প্রার্থী কমল এবং বিএনপি প্রার্থী কাজলের আয় সমানে সমান

শহীদুল্লাহ কায়সার :

কক্সবাজার -৩ (কক্সবাজার সদর-রামু) আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর বার্ষিক আয় প্রায় সমান। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল প্রতিবছর আয় করেন প্রায় ৪২ লাখ টাকা। অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শিল্পপতি লুৎফুর রহমান কাজলের বাৎসরিক আয় প্রায় ৪৩ লাখ টাকা। নিজেদের পাশাপাশি তাঁদের উপর নির্ভরশীল স্বজন বিশেষ করে স্ত্রী এবং সন্তানদের নামেও রয়েছে বিপুল অর্থের পাশাপাশি স্থাবর ও সম্পদ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় নিজেদের এই আয় এবং সম্পদের চিত্র প্রদর্শন করেছেন উল্লিখিত প্রার্থীদ্বয়।
বিএনপি প্রার্থী ও নিরিবিলি গ্রুপের ৬টি লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং নিরিবিলি চিংড়ী প্রকল্পের সত্ত্বাধিকারী বিএনপি প্রার্থী লুৎফুর রহমান কাজলের নিজ নামে কৃষি জমি থাকলেও এই খাত থেকে তাঁর কোন আয় নেই! ৩ দশমিক ১১ একর কৃষি জমিসহ তাঁর নামে থাকা স্থাবর সম্পদের অর্জনকালীন মূল্য ২ কোটি ৫২ লাখ ৭০ হাজার ৮৬১ টাকা। অস্থাবর সম্পদ রয়েছে,৩ কোটি ৯১ লাখ ১ হাজার ২৩৫ টাকার।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলের রয়ৈছে হোটেল, রিয়েল এস্টেট, মৎস্য ব্যবসার পাশাপাশি নিজ মালিকানায় থাকা কৃষি জমি বর্গা দেয়ার মতো আয়বর্ধক পেশায় নাম। তাঁর নামে থাকা স্থাবর সম্পদের অর্জনকালীন মূল্য ১ কোটি ২১ লাখ ৫২ হাজার ৯৬০ টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে ৮৮ লাখ ৪ হাজার ৫’শ টাকার।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল বাৎসরিক আয় প্রদর্শন করতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন, কৃষিখাত থেকে তিনি ৮০ হাজার, দোকান ও বাড়ির মতো স্থাপনার ভাড়া হিসেবে প্রায় ১ লাখ সাড়ে ৭২ হাজার, ব্যবসা থেকে ৫ লাখ ৮০ হাজার, চাকরির বেতন হিসেবে ৬ লাখ ৬০ হাজার এবং মাছের ব্যবসা করে প্রতিবছর ২৭ লাখ টাকা আয় করে থাকেন। নির্বাচন কমিশনে এই দাবি করলেন বর্তমান এই সংসদ-সদস্য।
অন্যদিকে, বিএনপি প্রার্থী লুৎফুর রহমান কাজল প্রতিবছর, বাড়ি, দোকান, এপার্টমেন্ট ভাড়া দিয়ে ৩ লাখ ৬ হাজার, মাছের ব্যবসা করে প্রায় সাড়ে ৩২ লাখ, সঞ্চয়পত্র বিক্রির মুনাফা হিসেবে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার, ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের মুনাফা হিসেবে ১৩ হাজার, পরিচালকের ভাতা হিসেবে প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ টাকা আয় করেন। নির্ভরশীলদের মধ্যে লুৎফুর রহমান কাজলের ছেলে তাহসিন লুৎফুর প্রতিবছর ৩ লাখ ৪৬ হাজার, স্ত্রী শিরিন রহমান প্রায় পৌনে ৬ লাখ টাকা আয় করেন। নির্বাচন কমিশনে এমন দাবিই করেছেন জেলার এই ধনকুবের।
সম্পদের বিবরণ দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল উল্লেখ করেছেন, অস্থাবর সম্পদের মধ্যে সাইমুম সরওয়ার কমলের কাছে নগদ ৪ লাখ টাকা আছে। ব্যাংকে জমা আছে ১৫ লাখ, বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ১১ লাখ টাকার। সাড়ে ৫৩ লাখ টাকা মূল্যমানের ২টি গাড়ি আছে তাঁর মালিকানায়। ৭৫ হাজার টাকার স্বর্ণ আছে উল্লেখ করলেও পরিমাণ লিপিবদ্ধ করেননি। ইলেকট্রনিক ও আসবাবপত্র রয়েছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে, পরিমাণ উল্লেখ না করলেও দাবি করেছেন ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা দামের কৃষি জমি আছে। অকৃষি জমির অর্জানকালীন মূল্য প্রায় ২১ লাখ টাকা । দালান রয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা মূল্যমানের। এপার্টমেন্ট কিনেছিলেন সাড়ে ৫৮ লাখ টাকায়। নির্ভরশীলদের মধ্যে এই প্রার্থী স্ত্রীর নামে কোন কৃষি, অকৃষি জমি এবং ভবন এমনকি এপার্টমেন্টও নেই।
নির্ভরশীলদের মধ্যে স্ত্রী নামে ব্যাংকে জমা আছে প্রায় ৬৪ লাখ টাকা। শেয়ার রয়েছে ৫০ লাখ টাকার। সঞ্চয়পত্র রয়েছে ১০ হাজার টাকার। ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দামের গাড়ির পাশাপাশি রয়েছে ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যমানের ইলেকট্রনিক ও আসবাবপত্র। সাইমুম সরওয়ার কমলের স্ত্রী ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন প্রায় ৬০ লাখ টাকা।
বিএনপি প্রার্থী শিল্পপতি লুৎফুর রহমান কাজল নিজ সম্পদের বিবরণ দিতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন, অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তাঁর কাছে ১২ লাখ নগদ টাকা আছে। ব্যাংকে তাঁর নামে জমা আছে পৌনে ৯ লাখ টাকা। স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভূক্ত কোম্পানির শেয়ার রয়েছে প্রায় ১ কোটি ১২ লাখ টাকার। মাছের ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন প্রায় ২ কোটি টাকা। ৪৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা দামের একটি মিটসুবিশি পাজেরো জিপ আছে। স্বর্ণ রয়েছে ৪০ ভরি, যার বাজার মূল্য উল্লেখ করেছেন, ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। নিজ নামে ইলেকট্রনিক সামগ্রী না থাকলেও আসবাবপত্রসহ গৃহসামগ্রী রয়েছে সোয়া ৮ লাখ টাকার।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে, প্রায় ২৬ লাখ টাকা দামের ৩ দশমিক ১১ একর কৃষি জমি। প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের ১০ দশমিক ৭৬ একর অকৃষি জমি। সাড়ে ১৬ লাখ টাকা দামের পৈত্রিকসূত্রে প্রাপ্ত দালানের অংশ। ঢাকার উত্তরায় ৪৩ লাখ টাকা দামের এপার্টমেন্ট। কক্সবাজার শহরের কলাতলীতে ২২ লাখ টাকা দামের ১টি সেমিপাকা ভবন। সাড়ে ১৪ হাজার টাকা দামের প্রায় ৫ একর রাবার বাগান।
নির্ভরশীলদের মধ্যে স্ত্রী শিরিন রহমানের নামে অস্থাবর সম্পদের মধ্যে, নগদ আছে ১৭ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা আছে সাড়ে ৬ লাখ টাকা, কোম্পানির শেয়ার আছে ৮৫ লাখ টাকার অধিক, সঞ্চয়পত্র রয়েছে ৬ লাখ টাকার, বীমা পলিসিতে বিনিয়োগ করেছেন সাড়ে ৩ লক্ষাধিক টাকা, ২৫ ভরি স্বর্ণ আছে, যার বাজারমূল্য উল্লেখ করেছেন ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। আসবাবপত্রসহ গৃহসামগ্রী রয়েছে সোয়া ৩ লাখ টাকার। লুৎফুর রহমান কাজলের স্ত্রীর স্থাবর সম্পদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা দামের ৫ কাঠা প্লট, প্রায় ১০ লাখ টাকা মূল্যে ১৯ দশমিক ৫ শতক জমি, সাড়ে ১১ লাখ টাকা মূল্যের ৪ দশমিক ২০ একর এবং প্রায় দেড় লাখ টাকা দামের ১৩ শতক জমি। স্ত্রী ছাড়াও ছেলে তাহসিন লুৎফুরের নামে নগদ আছে ২ লাখ ও ব্যাংকে জমা আছে প্রায় সোয়া ১৫ লাখ টাকা। ১০ ভরি স্বর্ণ আছে, যার মূল্য প্রদর্শন করেছেন ৫০ হাজার টাকা। ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র রয়েছে ৫০ হাজার টাকার।