আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ার মধ্যেও ইয়াবার বিরুদ্ধে চলবে অভিযান

এস এম রানা,কালেরকন্ঠ

কক্সবাজারে ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণপ্রক্রিয়ার মধ্যেও অভিযান অব্যাহত থাকছে। সেই অর্থে অভিযানকালে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হওয়ার পর ‘বন্দুকযুদ্ধের’ আশঙ্কাও থাকছে কারবারিদের মধ্যে। যদিও বন্দুকযুদ্ধের আতঙ্কে থাকা ৭০ জনের বেশি কারবারি এরই মধ্যে পুলিশ হেফাজতে চলে গেছে।

অভিযান অব্যাহত রাখার যৌক্তিকতা জানিয়ে কক্সবাজার জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অনেকেই আত্মসমর্পণের চেষ্টা চালাচ্ছে। এর মধ্যে যদি অভিযান বন্ধ হয়, তাহলে সম্ভাব্য আত্মসমর্পণ করতে চাওয়ারা নিজেদের রক্ষার কৌশল খুঁজতে থাকবে। কারণ সম্ভাব্য আত্মসমর্পণ করতে চাওয়াদের অনেকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। এদের কেউ কেউ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়েও তদবির করছে। এ কারণে আত্মসমর্পণপ্রক্রিয়ার সঙ্গে অভিযান এক করে ফেলা যাবে না। যারা আত্মসমর্পণ করতে চাইবে, তারা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। আর যারা আত্মসমর্পণ এড়িয়ে বাইরে থাকার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সর্বশেষ গত ২৮ জানুয়ারি রাতে দুই ডাকাত ও ইয়াবা কারবারির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তারা হলো টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ঝিমংখালী মিনাবাজার এলাকার ফরিদ আলমের ছেলে দেলোয়ার হোসেন রুবেল (২৫) এবং একই এলাকার সফর আলীর ছেলে মোহাম্মদ রফিক (৪০)। পুলিশ এ দুজনকে ডাকাত ও ইয়াবা পাচারকারী দাবি করলেও বন্দুকযুদ্ধ হওয়ার কথা দাবি করেনি। পুলিশের ভাষ্য, ডাকাত ও ইয়াবা কারবারিদের মধ্যে অন্তর্কোন্দলের জেরে গোলাগুলির ঘটনায় এ দুজনের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে নিহতের পরিবারের ভাষ্য, প্রায় এক সপ্তাহ আগে এ দুজনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে তাদের লাশ পাওয়া যায়। এর আগে ২৩ জানুয়ারি রাতে টেকনাফে র‌্যাব-৭-এর একটি দলের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে দুজন এবং মহেশখালী থানা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক ডাকাতসহ তিনজন মারা যায়।

জানুয়ারির শেষ সপ্তাহের যেকোনো দিন কক্সবাজারের তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের দিন নির্ধারিত ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরব যাওয়ায় এবং সংসদ অধিবেশন শুরুর কারণে আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ হওয়ার কথা আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি।

আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের আগেই ৭০ জনের বেশি তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি পুলিশ হেফাজতে গেছে। আর যারা বাইরে আছে, তাদের অনেকে আত্মসমর্পণ করতে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। এর পরও এরা বাইরে আর নিজেদের নিরাপদ মনে করছে না। কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে আলাপকালে আত্মস্বীকৃত একাধিক ইয়াবা কারবারি নিশ্চিত করেছে, মৃত্যুর ভয় তাদের সার্বক্ষণিক তাড়া করছে। বেঁচে থাকার আশায় তারা পুলিশ হেফাজতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনেকে বিদেশ থেকে ফিরে এসে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।

আত্মসমর্পণপ্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় বাইরে থাকা পাচারকারীদের কেউ কেউ কৌশলে বাইরেই থাকার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে তাদের সেই চেষ্টা নির্বিঘ্ন হচ্ছে না। কারণ পুলিশ-র‌্যাবের ধারাবাহিক অভিযান এবং ‘বন্দুকযুদ্ধ’ অব্যাহত রয়েছে।

গত বছরের মে মাস থেকে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত শুধু কক্সবাজারেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৪ ও ২৮ জানুয়ারি দুই দফা অভিযানে মারা পড়ে আরো পাঁচজন। সেই হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৫৭ জনে।

আত্মসমর্পণপ্রক্রিয়ার মধ্যেও অভিযান অব্যাহত রাখার বিষয়ে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আত্মসমর্পণ ও মাদকবিরোধী অভিযান—দুটি ভিন্ন বিষয়। একটির সঙ্গে অন্যটিকে মিশিয়ে ফেলার সুযোগ নেই। কারণ মাদকবিরোধী অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। অভিযানের মুখে কোনো মাদক কারবারি যদি নিজেদের অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে ভালো হওয়ার পথ খোঁজে, তাহলে রাষ্ট্র তাদের সেই সুযোগ দিতে পারে। আর এ সুযোগটিই হতে পারে আত্মসমর্পণপ্রক্রিয়া। যারা আত্মসমর্পণপ্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে, তাদের বিষয়টি রাষ্ট্র সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করবে। এত সবের পরও মাদকবিরোধী অভিযানও অব্যাহত থাকবে।’