শাহীন আক্তার ব্যবসায়ী, শাহজাহান চৌধুরীর বেশি আয় স্থাপনা ভাড়ায়

ইয়াবার নরকরাজ্যে হেভিওয়েট দুই প্রার্থীই গরীব

শহীদুল্লাহ কায়সার :

মরণনেশা মাদকের জন্য কুখ্যাত কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসন। বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের উপজেলা দুইটি ইতোমধ্যে দেশব্যাপী ইয়াবার নরকরাজ্য হিসেবে দুর্নাম কুড়িয়েছে । ইয়াবা পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে এই আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হন বর্তমান সংসদ-সদস্য আবদুর রহমান বদি। তাঁর স্থলে মনোনয়ন দেয়া হয় স্ত্রী শাহীন আকতারকে। অন্যদিকে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে কক্সবাজার জেলা কমিটির সভাপতি ও সাবেক সংসদ-সদস্য শাহজাহান চৌধুরীকে।

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনেও অন্যান্যবারের মতো এই আসনে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

ইয়াবার বদৌলতে এই আসনে বসবাসকারীদের মধ্যে দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে কোটিপতির সংখ্যা। কিন্তু রাজনীতিতে নাম লেখানোদের ক্ষেত্রে তা ব্যতিক্রম। জেলার অন্য ৩টি আসনের হেভিওয়েট প্রার্থীদের তুলনায় এই আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত হেভিওয়েট দুই প্রার্থীই গরীব। নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহীন আক্তার এবং বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী কর্তৃক প্রদর্শিত সম্পদেই এই চিত্র উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থিনী শাহীন আকতার একজন ব্যবসায়ী। তাঁর নামে শাহীন এন্ড কোং নামে ধান ও চালের ব্যবসা পরিচালনাকারী একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পাশাপাশি নিজ নামে থাকা চাষযোগ্য জমিকে লবণের মাঠ হিসেবে বর্গা দেন। এই খাত থেকেও আয় করেন তিনি।

উল্লিখিত তিন ধরনের ব্যবসায় তাঁর বার্ষিক আয় ৪ লাখ ৭২ হাজার টাকা প্রায়। সেই হিসেবে প্রতিমাসে তিনি আয় করেন মাত্র ৪০ হাজার টাকা। তাঁর নামে থাকা স্থাবর সম্পদের অর্জনকালীন মূল্য উল্লেখ করেছেন মাত্র মাত্র সাড়ে ১২ লাখ টাকা । অস্থাবর সম্পদের মূল্য লিখেছেন মাত্র ৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

অন্যদিকে, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ৪ বারের সংসদ-সদস্য শাহজাহান চৌধুরী কৃষিকাজের পাশাপাশি মাছের ব্যবসায় জড়িত। তিনি প্রতিবছর আয় করেন ১০ লাখ ৬১ হাজার টাকা। প্রতিমাসে তাঁর আয় প্রায় সাড়ে ৮৮ হাজার টাকা। তাঁর নামে থাকা স্থাবর সম্পদের অর্জনকালীন মূল্য লিখেছেন মাত্র ২৫ লাখ টাকা। এই রাজনীতিকের অস্থাবর সম্পদের অর্জনকালীন মূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ উপলক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় নিজেদের আয় ও উৎসের বর্ণনা দিতে গিয়ে উল্লিখিত প্রার্থীদ্বয় এই হিসাব দিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থিনী শাহীন আকতার প্রতিবছর ব্যবসা করে আয় করেন সাড়ে ৩ লাখ টাকা। স্থাপনা ভাড়া দিয়ে আয় করেন প্রায় ৫৭ হাজার টাকা। লবণ মাঠ বর্গা দিয়ে আয় করেন সাড়ে ৪৬ হাজার টাকা এবং কৃষিখাত থেকে আয় করেন প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার টাকা।

তাঁর নামে স্থাবর সম্পদের মধ্যে কৃষি জমি রয়েছে ৫ দশমিক ২৬ একর। যা তিনি কিনেছিলেন ১০ লাখ ৫৬ হাজার টাকায়। এ ছাড়া ২টি দোকানঘর রয়েছে, যার বাজার মূল্য ২ লাখ টাকা। শাহীন আকতারে নামে সম্পদ কম থাকলেও তাঁর স্বামী বর্তমান সংসদ-সদস্য আবদুর রহমান বদির নামে প্রদর্শন করেছেন প্রায় ৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ। প্রদর্শিত সম্পদের মধ্যে আবদুর রহমান বদির নামে থাকা স্থাবর সম্পদের মধ্যে ১৯ দশমিক ৪৭৫৯ একর জমির অর্জনকালীন মূল্য ৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা প্রায়। আধাপাকা বাড়ীসহ জমির মূল্য প্রায় ৬৫ লাখ টাকা। দশমিক ৮৩ শতক জমির অর্জনকালীন মূল্য প্রায় ৬ লাখ টাকা। ৫ কাঠা জমির অর্জনকালীন মূল্য প্রায় ৩৪ লাখ টাকা। গুদাম ও ভাড়াবাসার অর্জনকালীন দাম প্রায় ১২ লাখ টাকা।

অন্যদিকে, বিএনপি প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী হিসাব বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন, তিনি স্থাপনা ভাড়া দিয়ে প্রতিবছর ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা পান। মাছের চাষ করে আয় করেন ৩ লাখ ৮ হাজার টাকা। কৃষিখাত থেকে আয় করেন ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা প্রায়। ইতঃপূর্বে ১৫ একর জমি অকৃষি থেকে কৃষিজ জমিতে রূপান্তর করেছেন। যে সম্পদের মূল্য লিপিবদ্ধ করেছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। তাঁর নামে থাকা দশমিক ৭৫ একর অকৃষি জমির অর্জনকালীন মূল্য সোয়া দুই লাখ টাকা প্রায়। সাড়ে ২১ লাখ টাকা দামের একটি এপার্টমেন্টও রয়েছে তাঁর নামে। রাষ্ট্রের কাছ থেকে ২৩ একর জমি ইজারা নিয়েছেন ১৫ হাজার টাকায়।

স্বজনদের মধ্যে প্রয়াত স্ত্রীর নামে ১১ একর কৃষি জমি রয়েছে। যার অর্জনকালীন মূল্য উল্লেখ করেছেন ৩ লাখ টাকা প্রায়। রয়েছে ৩১ লাখ টাকা দামের ১ একর অকৃষি জমি। শাহজাহান চৌধুরীর প্রয়াত স্ত্রী ডেভেলপার কোম্পানির কাছ থেকে দুইটির বেশি ফ্ল্যাটও পেয়েছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থিনী শাহীন আকতারের নামে থাকা অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে, ১৫ ভরি স্বর্ণ। যার বাজারমূল্য উল্লেখ করেছেন ৪৫ হাজার টাকা। নগদ ৫ লাখ এবং ব্যাংকে জমা আছে ১০ হাজার টাকা। আসবাবপত্র রয়েছে ৩০ হাজার টাকার। স্থাবর সম্পদের মতো অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রেও স্ত্রী শাহীন আকতারের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন আবদুর রহমান বদি। তাঁর কাছে ৩০ লাখ টাকা নগদ আছে। ব্যাংকে জমা আছে ৫০ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্র রয়েছে ২০ লাখ টাকা মূল্যমানের। গাড়ি আছে ৩টি, যার অর্জনকালীন মূল্য প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ফার্নিচার সেটের অর্জনকালীন মূল্য ৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য কেনা পিস্তল ও শর্টগানের বাজারমূল্য প্রায় দেড় লাখ টাকা।

বিএনপি প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীর নামে থাকা অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে, নগদ ৪ লাখ ও ব্যাংকে ৫ লাখ টাকা প্রায়। উপহার হিসেবে পেয়েছেন ১০ ভরি স্বর্ণ। যার বাজারমূল্য উল্লেখ করেছেন ২ লাখ টাকা। ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র রয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যমানের। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত রিভলবার ও শর্টগানসহ যোগাযোগের জন্য রাখা মোবাইল ফোনের বাজার মূল্য দেড় লাখ টাকা। এই আসনের অন্য প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির আবুল মঞ্জুরের বার্ষিক আয় ৪ লাখ সাড়ে ২২ হাজার টাকা, ইসলামি ঐক্যজোট মনোনীত প্রার্থী রবিউল হোছাইনের বার্ষিক আয় ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা, মুসলিম লীগের সাইফুদ্দিন খালেদের বার্ষিক আয় ৪ লাখ টাকা, এবং মোহাম্মদ শোয়াইব এর বার্ষিক আয় ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।