ইয়াবার সর্বগ্রাসী থাবা : সমস্যার মূলে নজর দিতে হবে

ইয়াবা কারবারের সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত থাকুক, খুঁজে বের করা হবে—স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই আশ্বাসের দ্রুত বাস্তবায়ন হোক।

মাত্র এক দিনে গণমাধ্যমে আসা ইয়াবা-সংক্রান্ত সংবাদ শিরোনাম থেকে স্পষ্ট, ভয়াল এই মাদকের থাবা আমাদের অনেকখানি গ্রাস করে নিয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে জব্দ হয়েছে ৩০ লাখ ইয়াবা।

কক্সবাজারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র খুন ইয়াবা কারবারির হাতে। নতুন করে গোলাগুলি হয়েছে নাফ নদে ইয়াবা পাচারকারীদের সঙ্গে। এ থেকে স্পষ্ট, ইয়াবা চোরাকারবারিদের বাগে আনতে পারা দূরের কথা, তাদের দৌরাত্ম্য আরো বাড়ছে। আমাদের তরুণসমাজের জন্য এই পরিস্থিতি ভয়ংকর।

আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইয়াবা পাচারের বিরুদ্ধে যে তত্পর, বিপুল পরিমাণে আটকের ঘটনা তারই প্রমাণ। মাঝেমধ্যেই ইয়াবার চালান ধরা পড়ছে, আটক হচ্ছে চোরাচালানিদের কেউ কেউ। কিন্তু সীমান্তে এর মূল সরবরাহ লাইনটি ভাঙা সম্ভব হচ্ছে না, ধরা পড়ছে না দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে থাকা মূল হোতারাও। আমাদের গোয়েন্দা সক্ষমতা বাড়াতে হবে, অভিযান পরিচালনায়ও থাকতে হবে সততা।

অতীতে মাদক কারবারিদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো কোনো সদস্যের জড়িত থাকার অনেক ঘটনা ধরা পড়েছে। অর্থের কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে তাদের পেশাগত সততা। এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়া আবশ্যক। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে আইনের রক্ষকদের ভক্ষক হয়ে ওঠার এমন প্রবণতা কমে আসবে।

মাদকাসক্তির পেছনে অনেক কারণই থাকে। মাদক কারবারিরা তাদের হীনস্বার্থে যেকোনো কিছুই করতে পারে। তরুণরা নষ্ট হলে সমাজের অগ্রগতিই যে থমকে যাবে। মাদক ব্যক্তিমানুষের সম্ভাবনাই নস্যাৎ করে দেয় না, তাদের পরিবারও বিধ্বস্ত হয়ে যায় অনেক সময়। মাদকের হোতারা এসবের পরোয়া করে না। পরিবার ও সমাজের নেতিবাচক অনেক কাজও অনেককে হতাশাগ্রস্ত করে দিচ্ছে। অনেক মা-বাবা সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দেন না, খোঁজখবরও তেমন রাখেন না। সন্তানের সত্সঙ্গ নিশ্চিত করা গেলেও অনেক ঝুঁকি কমে আসে।

মূলত মিয়ানমার থেকেই ইয়াবা আসছে। শুধু আমাদের নিরাপত্তারক্ষীরা সতর্ক থাকলেই কি হবে? সীমান্তের ওপারে কড়া পাহারা থাকলে এত সহজে পাচার সম্ভব হতো না। এ ব্যাপারে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে কার্যকর কৌশল প্রণয়ন করা যেতে পারে। প্রতিবেশী একটি দেশের যুব ও তরুণসমাজ ধ্বংস হোক—এমনটি নিশ্চয়ই কেউ চাইতে পারে না। তরুণদেরও সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা বাড়াতে হবে। দায় এড়াতে পারে না প্রশাসন, পরিবার ও সমাজও।