উখিয়ায় পাহাড় কাটার মহোৎসব চলছেই

(এনজিওর ছাত্রছায়ায় শতাধিক পাহাড় কাটার কাজ করছেন তিন হাজার রোহিঙ্গা শ্রমিক)

পিএন২৪ ডটকম : উখিয়ায় অর্ধশতাধিক বুলডোজার দিয়ে দিনরাত পাহাড় কেটে চলছে তিন হাজার রোহিঙ্গা শ্রমিক। প্রায় দেড়শ’ ফুট উচ্চতার তিনশ’ ফুট প্রস্থের প্রায় শতাধিক পাহাড়ে রোহিঙ্গা শ্রমিকরা তাণ্ডব চালাচ্ছে। বিভিন্ন প্রভাবশালী এনজিও সংস্থার ছত্রছায়ায় প্রকাশ্যে পরিবেশ বিধ্বংসী পাহাড় কাটার মহোত্সব চললেও দেখার কেউ নেই। এসব পাহাড় সংরক্ষণের দায়িত্ব থাকা কর্মকর্তারা পাহাড় কাটার রামরাজত্ব ঠেকানোর বেলায় তাদের দেখা মেলেনি। এক কালের গহীন অরণ্য থাইংখালীর লন্ডাখালী, মধুরছড়া, লম্বাশিয়ায় নির্বিচারে পাহাড় কাটার ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন।

উখিয়ার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বে কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা গতকাল সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পালংখালী ইউনিয়নের গভীর অরণ্য তাজনিমার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অদূরে লন্ডাখালী, ময়নারঘোনা ঘুরে সাংবাদিকদের জানান, তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ছোট বড় প্রায় অর্ধশত পাহাড় কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করছে। কয়েকটি এনজিও সংস্থা বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের উদ্দেশে এসব পাহাড় কেটে ন্যাড়া করে ফেলছে।

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, রোহিঙ্গা শ্রমিকরা দৈনিক চারশ’ টাকা মজুরিতে পাহাড় কাটছে। সাংবাদিক জেনে ভয়ে প্রথমে এসব শ্রমিকে মাটি কাটা বন্ধ করলেও পরে ফের নির্ভয়ে মাটি কাটতে শুরু করে। এসময় সেখানে উপস্থিত এনজিও সংস্থা আইওএম’র সুপারভাইজার মো. শরীফ জানান, প্রতিদিন তিন হাজার রোহিঙ্গা শ্রমিক মাটি কাটার কাজ করছে। পাহাড় কাটার অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে সরে পড়েন। মাটি কাটার শ্রমিকদের হেড মাঝি শরিফুল্লাহ জানান, এখানে প্রায় অর্ধশতাধিক পাহাড় কাটার জন্য গত ১ মাস আগে থেকে তারা কাজ শুরু করেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০/৩৫টি পাহাড় কাটার কাজ শেষ হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী অভিযোগ করেন, এসব জমি-জমা বনভূমির হলেও তাদের ভোগদখলে ছিল যুগ যুগ ধরে। তারা জোরপূর্বক দীর্ঘদিনের ভোগ দখলীয় জায়গাগুলো কেড়ে নিয়ে বুলডোজার লাগিয়ে সমতল ভূমিতে পরিণত করছে।

কক্সবাজার বন পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক দীপক শর্মা দিপু জানান, এনজিওরা যেভাবে পাহাড় কেটে মরুতে পরিণত করছে তাতে মনে হয় বনভূমি সংরক্ষণের কেউ এখানে নেই। এনজিদের এসব অপকর্ম ঠেকাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, তিনি তার ইউনিয়নের অস্তিত্ব রক্ষায় প্রধান বন সংরক্ষকসহ বিভিন্ন দপ্তরে বিভিন্ন অভিযোগ করবেন। তাতেও যদি কাজ না হয়, তাহলে তিনি ইউনিয়নের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ওইসব পাহাড় খেকো এনজিওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগীয় কর্মকর্তা আলী কবির জানান, এনজিওদের ইচ্ছা মতো পাহাড় কাটার বিষয়টি তিনি অবগত হয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে একটি লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

কক্সবাজার শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম জানান, ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিতে সরকার আরো ৫৪০ একর বনভূমি বরাদ্দ দিয়েছে। তাই বর্ষার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করতে এনজিওরা কাজ করছে। তবে ঢালাওভাবে পাহাড় কাটার বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।