২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট :

কক্সবাজারের উন্নয়নে ১৮ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ

লোকমান হাকিম •

২০২৩-২৪ অর্থবছরের ঘোষিত প্রস্তাবিত বাজেটে কক্সবাজার জেলার ছোট-বড় ১৯টি প্রকল্পের জন্য ১৮ হাজার ১৭৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতবারের মতো এবারের বাজেটেও সরকারের তিন মেগা প্রকল্প মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর ও দোহাজারী-গুমধুম রেললাইন প্রকল্প অগ্রাধিকার পেয়েছে।

‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’ শিরোনামে গত বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবারের বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয় ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।

কক্সবাজার জেলায় বরাদ্দ পাওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে- বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণায়ের তিনটি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তিনটি, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একটি, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের চারটি, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দু’টি, গণপূর্ত ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের একটি, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের একটি দুটি, মৎ্স্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি প্রকল্প রয়েছে।

বাজেটে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে কক্সবাজারের মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার তিন প্রকল্পে ৯ হাজার ১০১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে মাতারবাড়িতে নির্মিত ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্পের জন্য ৮৯৪৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। জাপানের উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা’র) সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)।

এছাড়া মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নে নির্মিত ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইপ প্রকল্পের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ বিনিয়োগে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।

অপরদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের অধীনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ বিদ্যুতায়ন প্রকল্পে ৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

ঘোষিত বাজেটে সরকারের নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে মহেশখালী, ও টেকনাফের তিন প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা রয়েছে ৬ হাজার ২৩৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ ও টেকনাফ (সারবাং ও জালিয়ার দ্বীপ) অংশের জেটিসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ প্রকল্পে ১৮৭৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প (চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অংশ) ২৬৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকা, মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প (সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর অংশ) ১৬৮৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৪০০ কোটি টাকা।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের চার প্রকল্পে ৭৮০ কোটি ৬৮ টাকাটাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের মাতারবাড়ি কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ সওজ অংশের প্রকল্পে ১১০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক (এন-১) উন্নয়ন প্রকল্পে ১৭০ কোটি টাকা, পেকুয়ার একতাবাজার থেকে বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নে ১০০ কোটি টাকা, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রশস্তকরণে ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দুই প্রকল্পে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন কার্যক্রমে জরুরি সহায়তা প্রকল্পে ২৯০ কোটি টাকা, জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মাল্টি-সেক্টর প্রকল্পে ১৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ‘কক্সবাজারের মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন’ শীর্ষক সমীক্ষা প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজার-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা উন্নতকরণে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদী বরাবর পোল্ডারগুলো (৬৭/এ, ৬৭, ৬৭/বি ও ৬৮) পুনর্বাসন ৫০ কোটি টাকা।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুই প্রকল্পে কক্সবাজারে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পে ৩০ কোটি টাকা এবং কক্সবাজারের সবুজ বেষ্টনী সৃজন ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার এবং ইকো ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্পে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুই প্রকল্পে কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলে শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনে ২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।