উপজেলায় ধাপে ধাপে ভোট

ডেস্ক রিপোর্ট :

মার্চে হতে যাচ্ছে দেশের পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এবারও ধাপে ধাপে ভোট করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা, রমজান এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি বিবেচনায় ইসি পাঁচ থেকে ছয় ধাপে দেশের ৪৯০টি উপজেলায় ভোটের চিন্তা করছে। এসএসসি পরীক্ষার পর মার্চে প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে চলতি মাসের শেষ দিকে অথবা ফেব্রুয়ারিতে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠেয় এই এ নির্বাচনে প্রতিটি ধাপে একাধিক উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই তারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু করেছেন। এর অংশ হিসেবে এরইমধ্যে দেশের সব উপজেলা পরিষদের সর্বশেষ তথ্য ইসিকে জানাতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে উপজেলার নাম উল্লেখ করে সর্বশেষ নির্বাচনের তারিখ, ওই উপজেলার চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের শপথগ্রহণ এবং প্রথম বৈঠকের তথ্য জানাতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে একই ধরনের তথ্য দিতে ১০ আঞ্চলিক কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘যেহেতু মেয়াদ পূর্ণ হয়ে আসছে, ফলে ভোট করতে হবে। তবে কমিশনে এখনও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে কোনও ধরনের আলোচনা হয়নি। সামনে দু’টো বড় পাবলিক পরীক্ষা রয়েছে। রজমান মাস আছে। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে ভোটের তারিখ ঠিক করার বিষয় আলোচনা হচ্ছে। সার্বিক বিবেচনায় মার্চ ও মে মাস ভোটগ্রহণের জন্য সুবিধাজনক সময় মনে করছি। কমিশন আমাদের যে নির্দেশনা দেবে, সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ এর ১৭(১)(গ) ধারা অনুযায়ী, পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখের আগের ১৮০ দিনের মধ্যে ভোটগ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানের মতো পরিষদের প্রথম বৈঠক (সভা) থেকে ৫ বছরের মেয়াদ শুরু হয়। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ৯৭টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। পরে ২৭ ফেব্রুয়ারি হয় আরও ১১৫টি উপজেলায় ভোট। এরই ধারাবাহিকতায় ওই বছরের জুন-জুলাইয়ে সব মিলিয়ে ৭ ধাপে দেশের ৪৮৭টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচন হয়েছিল। ওই বছরের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে উপজেলা পরিষদগুলোতে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে প্রথমদিনে যেসব উপজেলায় ভোট হয়েছিল, সেগুলো ইতোমধ্যে ভোটগ্রহণের উপযোগী হয়েছে।
জানা গেছে, নির্বাচনের প্রস্তুতির প্রাথমিক কাজগুলো এগিয়ে নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট শাখাগুলো। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ওই তালিকায় পরবর্তী সময়ে সংযোজিতদের অন্তর্ভুক্ত করে উপজেলা নির্বাচনের নতুন ভোটার তালিকা তৈরি করা হবে। এ ছাড়া, সংসদের ভোটের সঙ্গে উপজেলা পরিষদের বেশ কিছু নির্বাচনি সামগ্রীও কেনাকাটা সম্পন্ন করে রাখা হয়েছে। ব্যালট পেপারের কাগজ, স্ট্যাম্প প্যাড, অফিশিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাশ সিল, লাল গালা, অমোচনীয় কালি ইসির ভাণ্ডারে মজুদ রয়েছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট ও ব্যালট ছাপানোর কাগজও কেনা রয়েছে। এখন দেশের সব উপজেলার সর্বশেষ নির্বাচনের তারিখ ও প্রথম বৈঠকের তথ্য পাওয়ার পরই তা কমিশনের নির্দেশনার জন্য তোলা হবে।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, আগামী ফেব্রুয়ারির শুরুতে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। আর এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। এক্ষেত্রে মার্চেই তারা কয়েক ধাপের নির্বাচন করার চিন্তা করছেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে এসএসসি পরীক্ষার পর এইচএসপি পরীক্ষার আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি ৯৭টি উপজেলায় প্রথম ধাপে নির্বাচন হয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় ৩১ মার্চের মধ্যে ৫টি ধাপে দেশের দেশের ৪৮৭টি উপজেলার ৪৫৯টিতে নির্বাচন হয়। মামলাসহ মেয়াদ পূর্ণ না হওয়ার কারণে বাকি উপজেলার ভোট হয় ওই বছর রমজানের পরে। গতবারের মতো এবারও মার্চের মধ্যে কয়েক ধাপে ভোটগ্রহণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন ইসির কর্মকর্তারা। সেই হিসেবে জানুয়ারির শেষে অথবা ফেব্রুয়রির শুরুতে তফসিল হতে পারে। সবকিছুই কমিশনের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।
চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হলেও এবার হবে দলীয় ভিত্তিতে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী মনোনয়নের মাধ্যমে দলীয় প্রতীকে এবারের উপজেলা পরিষদে ভোট হবে। এ লক্ষ্যে সরকার ২০১৬ সালে আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনেছে। এ ছাড়া, এবার কিছু উপজেলা পরিষদে ইভিএম ব্যবহার করে ভোটগ্রহণ হবে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যতগুলোতে সম্ভব, ইভিএম ব্যবহার করবো।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালে। ওই বছর ৪৬০টি উপজেলায় এই নির্বাচন হয়। এরপর ১৯৯০ সালে দ্বিতীয়বারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরও ৪৬০টি উপজেলায় এই নির্বাচন হয়। ২০০৯ সালে দেশে তৃতীয়বারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছর ৪৭৫টি উপজেলায় এই নির্বাচন হয়। সর্বশেষ ২০১৪ সালে চতুর্থবারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ছয় ধাপে দেশের ৪৮৭টি উপজেলায় ভোট হয়।