এক ডজন মন্ত্রী বাদ পড়ছেন!

ডেস্ক রিপোর্ট- মন্ত্রিসভায় থাকতে পারছেন না প্রায় এক ডজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। আগামী সপ্তাহে সম্ভাব্য মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে তাঁরা ডাক পাচ্ছেন না।

বয়স, শারীরিক অসুস্থতা, দুর্নীতির অভিযোগ এবং পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করে তাঁদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। এই তালিকায় প্রভাবশালী একাধিক মন্ত্রী রয়েছেন। গণভবন সংশ্লিষ্ট সূত্র কালের কণ্ঠকে জানিয়েছে, তারুণ্যনির্ভর মন্ত্রিসভা গঠন করার লক্ষ্যের কারণেও পুরনোদের অনেকেই ছিটকে পড়বেন। নতুনদের স্থান দিতে বাদ পড়বেন জেলা কোটায় হওয়া বেশির ভাগ মন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পরপরই তিনি ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেন। সেখানে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী অনেক হিসাব-নিকাশ করে তাঁর মন্ত্রিসভা সাজানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। উন্নয়ন এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি তিনি সমান্তরালভাবে দুর্নীতি দূর করার পদক্ষেপও নেবেন। অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ব্যক্তিদের খুুঁজে তিনি মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করবেন বলে জানা গেছে।

বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের বেশ কয়েকজন বিভিন্ন সময়ে তাঁদের কর্মকাণ্ডের কারণে বিতর্কিত ও সমালোচিত হয়েছেন। এবার তাঁদের বিদায় নিতে হতে পারে। সুশাসনের অঙ্গীকার করে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী দিনে দেশ পরিচালনায় কঠোর নীতি অবলম্বন করবেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার গণভবনে বলেছেন, ‘জনগণ আবারও বিজয়ী করে যে দায়িত্বটা দিয়েছে, তা পালন করতে সবার সহযোগিতা কামনা করি। যেন দেশটা আমরা সুন্দরভাবে গড়তে পারি। ’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটা অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ হবে। এখানে কোনো যুদ্ধাপরাধী, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতিবাজের স্থান হবে না।

জানা গেছে, এবারের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার আগে দলের প্রধান শেখ হাসিনা বর্তমান সংসদ সদস্যদের কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন করেন। তিনি বিভিন্নভাবে সবার সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। আর সেসব প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তিনি মনোনয়ন দেন।

এরও আগে দলীয় একাধিক ফোরামে সংসদ সদস্যদের তাঁদের কাজের ব্যাপারে সতর্ক করেন প্রধানমন্ত্রী। সংসদ সদস্যদের মতো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের আমলনামাও শেখ হাসিনার কাছে রয়েছে। সেসব কিছু বিবেচনায় নিয়েই নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে অদক্ষ এবং দুর্নীতির অভিযোগ থাকা মন্ত্রীদের বাদ দেবেন তিনি।  

আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের অঙ্গীকার রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘দুর্নীতি একটি বহুমাত্রিক ব্যাধি। পেশিশক্তির ব্যবহার ও অপরাধের শিকড় হচ্ছে দুর্নীতি। এর ফলে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে অবক্ষয় বা পচন শুরু হয় এবং অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন প্রভৃতি কোনো ক্ষেত্রেই ঈপ্সিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয় না। দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও আইনের প্রয়োগ মুখ্য হলেও তা শুধু সরকারের দায় নয়, জনগণেরও দায় রয়েছে। আমরা মনে করি, দুর্নীতি দমনে প্রয়োজন সরকার ও জনগণের সমন্বিত পদক্ষেপ। ’

এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে বাদ পড়ার আলোচনায় রয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় প্রমুখ। আগেরবার সমালোচনা ও বিতর্কের মুখে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে বাদ দেওয়া হয়। সমালোচনার মুখে দপ্তর কেড়ে নেওয়া হয় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের (প্রয়াত)।  

শারীরিক অসুস্থতার কারণে জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নিশ্চিতভাবে বাদ পড়ছেন বলে জানা গেছে। বয়সের কারণে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী শাহজাহান কামালের বাদ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কারণে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, তথ্য প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বাদ পড়তে পারেন বলে দলের শীর্ষ মহলে আলোচনা রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত সব কিছুই নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছার ওপর।  

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ-কালের মধ্যে গেজেট প্রকাশিত হবে। এরপর সংসদীয় কমিটির বৈঠক, নেতা নির্বাচন, মন্ত্রিসভা গঠনসহ সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শেষ হবে। তবে এসব প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।