এমপি-মন্ত্রীরা শেখ হাসিনার কাছ থেকে শিখবেন কবে?

ডেস্ক রিপোর্ট :

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত দুই শাসনামলে দেশ অনেক এগিয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তিখাতে এসেছে অভূতপূর্ব সাফল্য। সেই সাফল্যের সুযোগ গ্রহণ করছে সারাদেশ। দেশ থ্রি-জি, ফোরজি পেরিয়ে এখন ফাইভজির পথে। প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রযুক্তির ব্যবহার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবকিছু শেয়ার করা ছাড়া কারও কারও রাতের ঘুমই হতে চায় না। শুধু স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়ে নয়, সমাজের উচ্চ পর্যায়ের অনেক মানুষজন সহ এদেশের মন্ত্রী-এমপিরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সরব। দেশের এমপি-মন্ত্রীদের অনেকেই নিজেদের দৈনন্দিন কাজ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মিটিং-মিছিল-সমাবেশ কিংবা জনহিতৈষীকর কাজের ছবি, ভিডিও, বক্তৃতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেন। কিশোর-তরুণ-বৃদ্ধ থেকে শুরু করে কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কারও চেয়ে পিছিয়ে নেই।

সামাজিকতার পালে হাওয়া লাগাতে গিয়ে একের পর এক ছবি, স্ট্যাটাসে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে সাধারণদের তেমন একটা ভাবতে হয় না। তাদের নিয়ে সমাজের কিংবা দেশের ততটা মাথাব্যথাও নেই। কিন্তু ভাবনা চলে আসে যখন দেশের কোন স্বনামধন্য ব্যক্তি এসব কাজে সম্পৃক্ত হোন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সদ্য শপথ নেওয়া আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদের পলকের একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। ছবি আপলোড দিয়ে তিনি লিখেছেন, নিজেই ফেসবুকে দুইটি ছবি আপলোড দিয়ে লিখেছেন, ‘প্রথম দিন বাইকে চড়ে অফিসে…’ খুবই চমৎকার কথা। প্রথা ভেঙে মন্ত্রীরা বাইকে করে অফিসে যেতেই পারেন। সেটা খুবই প্রশংসার দাবিদার। সবাই তাকে বাহবা দিবে এমনটাই হয়তো ভেবেছিলেন তিনিও। কিন্তু ঘটলো বিপত্তিটা। আলোচিতর বদলে সমালোচিত হলেন তিনি। কারণ একটাই মোটরসাইকেলে উঠলেও মন্ত্রীর মাথায় কোন হেলমেট ছিল না।

কিছুদিন আগে ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলন’এর কথা তুলে ধরে ফেসবুকে মন্ত্রীর সেই ছবির নিচে সমালোচনাই করে চলেছেন অধিকাংশ মানুষ। মন্ত্রীর ভুলকে ভুল মনে করিয়ে সবাই বলে যাচ্ছেন, আইন সবার জন্য সমান হওয়া উচিৎ। আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর এই ভুলটা যেমন ভুল ছিল তেমনই তিনি আরও একটি করেছেন নিজের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে। সামান্য ভুলটা স্বীকার করে নিলে তিনি হয়তো ভুলটাকে ভুল মনে করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারতেন। সাধারণ জনগনও মন্ত্রীর ভুল স্বীকার করার মানসিকতাটাকে শ্রদ্ধা জানাতো।

তা না করে তিনি ব্যস্ততার অজুহাত, রাইডিং শেয়ারিং সার্ভিস ছিল না, চালকের কাছে এক্সট্রা হেলমেট ছিল বলে পার পেতে চাইলেন! সাধারণ মানুষের মধ্যে যেমন এখনকার দিনে ‘ভাইরাল’ হওয়ার প্রবণতা ঢুকে গেছে তেমনিভাবে এই ‘ভাইরাল’ রোগ মাঝেমধ্যে গ্রাস করে আমাদের এমপি মন্ত্রীদের। আর না হলে বা তারা এমনটা করবেনই কেন? এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদাক ওবায়দুল কাদের বাসে চড়ে ভাইরাল হয়েছেন। সেই পথে হেঁটেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমও। সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি জগলুল হায়দার মাঝেমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের আত্মপ্রচারণামূলক কাজকর্মের মাধ্যমে সমালোচিত হন। যতটা সুনাম তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে কুঁড়াতে পারতেন ঘটে তাঁর উল্টোটা।

এবারের মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার সদস্যের নিয়ে বাসে করে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে যান। এরপর টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনে যাওয়ার ঘটনাও আলোচিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় খরচ এবং জনদুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে করা এসব বিষয় সাধারণ মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ড ভাইরাল করতে শো-অফ করতে হয়না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বাচ্চাদের সঙ্গে খেলা করেন। সেই ছবি মুহুর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

প্রধানমন্ত্রীর সাগরে পা ভেজানো ছবি তোলার জন্য পার্সোনাল ফটোগ্রাফার ডাকতে হয়না। পরম মমতায় বোন রেহানাকে জড়িয়ে ধরার ছবির মধ্যে সাধারণ মানুষ বোনের স্নেহ খুঁজে পান। সাধারণ মানুষের সঙ্গে যখন কুশল বিনিময় করেন তখন তাকে দেশের প্রধানমন্ত্রী মনে হয়না, মনে হয় পাশের বাসার একজন বোন বা মেয়ে কুশল জিজ্ঞাসা করছেন। গায়ের পথে আর দশটা গায়ের মানুষের মত যখন ভ্যানগাড়িতে করে নাতি-নাতনীদের মত চলাচল করেন তখন যেন গ্রাম-বাংলার চিরায়ত দৃশ্য ফুটে ওঠে। এসব প্রচারের জন্য ভাড়া করে পার্সোনাল ফটোগ্রাফার ডাকতে হয়না। আশেপাশের মানুষই শেখ হাসিনায় মুগ্ধ হয়ে এসব প্রচারে মাতেন। শেখ হাসিনায় মুগ্ধতা নিয়ে সেই কারিশমা ছড়িয়ে পরে গোঁটা বাংলা ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বে। আমাদের এমপি-মন্ত্রীরা শেখ হাসিনার অনন্য গুণাবলী অর্জন করবেন কবে?