কক্সবাজারে গাড়ির কাগজপত্র তৈরির হিড়িক

নিজস্ব প্রতিবেদক- গাড়ি চালানোর অনুমতি (ড্রাইভিং লাইসেন্স) পেতে, যানবাহনের নিবন্ধন এবং কাগজপত্র নবায়ন করতে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কক্সবাজার কার্যালয়ে আবেদন হঠাৎ বেড়ে গেছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে গাড়ির চালক এবং মালিকরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন সেখানে। সীমিত জনবল এবং হঠাৎ সেবা প্রত্যাশীদের উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে বিআরটিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

বিআরটিএ কক্সবাজার সার্কেলের সহকারি পরিচালক (প্রকৌশল) মো: জামাল উদ্দিন বলেন, ‘এখন সাধারণ লোকজনের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ, সাংবাদিক এমনকি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও কাগজপত্র তৈরী বা গাড়ি চালানোর অনুমতির জন্য ভীড় করছেন। আগে প্রতিদিন যেখানে গড়ে ৮ থেকে ১০টি আবেদন জমা পড়তো সেখানে এখন প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০টিরও বেশি আবেদন জমা পড়ছে। সোমবার একদিনেই প্রায় ১০০ আবেদন জমা পড়েছে। এ অবস্থায় চাপ সামলাতে হিমশিত খাচ্ছি আমরা। গত কিছুদিন ধরে শুক্রবার বাদে প্রতিদিনই সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত দাপ্তরিক কাজ চলছে।’

গত মঙ্গলবার দুপুরে সরজমিনে গেলে জেলা বিআরটিএ কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যস্ততা চোখে পড়ে। কার্যালয়ের বাইরে এবং ভেতরে কাগজপত্র নিয়ে ছুটোছুটি করছেন নানা বয়সী লোকজন। ভেতরে সেবাপ্রত্যাশীদের দীর্ঘ সারি। এসময় কথা হয় কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকা থেকে সিএনজি অটোরিক্সার চালক আমির হোসেন রুবেলের সাথে। গাড়ি চালানোর অনুমতি পেতে আবেদন করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘বিগত দীর্ঘদিন ধরে লাইসেন্স ছাড়াই সিএনজি অটোরিক্সা চালিয়েছি। গাড়ির লাইসেন্স থাকলেও চালক হিসেবে আমার লাইসেন্স ছিল না। এখন দেশের পরিস্থতিত বদলে গেছে। শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের পর আমাদের চোখ খুলে গেছে। প্রশাসন থেকেও চাপ দেওয়া হয়েছে । তাই নতুন করে গাড়ি চালানোর অনুমতি পেতে আবেদন করেছি।’

অনেক আবেদনকারী আবার বিরক্তি প্রকাশ করেছেন বিআরটিএ অফিসের ধীরগতি কাজে, অভিযোগ এনেছে কাজের অবহেলার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আবেদনকারী বলেন, ‘ভোগান্তির অপর নাম বিআরটিএ অফিস। এখানে কোনো কাজই সময়মতো হয় না। ছোটখাটো ভুল বা তুচ্ছ কারণে দিনের পর দিন এখানে ঘুরতে হয়। মূলত এসব কারণেই অনেকেই বৈধ কাগজপত্র করতে চান না।’

বিআরটিএ’র কর্মকর্তা মো: জামাল উদ্দিন জানান, গত কয়েক দিনে কক্সবাজার বিআরটিএ কার্যালয়ে প্রায় ৩০০ জনের আবেদন জমা পড়েছে। তাদের অধিকাংশই লার্নার বা শিক্ষানবিস ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন। এর মধ্যে মোটর সাইকেলের লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ। বাকি ১০ শতাংশের মত আবেদন করেছেন অন্যান্য যানবাহনের লাইসেন্সের জন্য। এছাড়া গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন, ডিজিটাল নম্বর প্লেট ইত্যাদি কাজেও আবেদন বেড়েছে।

কক্সবাজার বিআরটিএ তথ্যমতে বর্তমানে এ জেলায় গাড়ি চালানোর অনুমতি (ড্রাইভিং লাইসেন্স) নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন প্রায় ৭ হাজার ৫০০ জন এবং জেলায় ১১ হাজার নিবন্ধিত মোটর সাইকেল চলাচল করছে। এর মধ্যে লাইসেন্স নিয়ে মোটর সাইকেল চালাচ্ছেন ৫ হাজার ২০০ জন বাকি ৫ হাজার ৮০০ মোটর সাইকেল চালকের নেই কোন লাইসেন্স । কক্সবাজারে বিআরটিএ কার্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর পর ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত নিবন্ধন নিয়েছে ৫ হাজার ২০০টি সিএনজি অটোরিক্সা। এর মধ্যে ২ হাজার ৮০০ সিএনজি অটোরিক্সা বর্তমানে সচল রয়েছে। এছাড়াও জেলায় লাইসেন্স নিয়ে নিয়ে চলছে ৭০টি ভারী যানবাহন।