জটিল কিডনি রোগাক্রান্তদের যেতে হচ্ছে চট্টগ্রামে

কক্সবাজারে নেই কোন ডায়ালাইসিস মেশিন

শহীদুল্লাহ কায়সার :

৭ সন্তানের জননী আয়েশা বেগম। উখিয়া উপজেলার রতœাপালং ইউনিয়নের চাকবৈঠা গ্রামের বাসিন্দা। বয়স প্রায় ৪৮ বছর। এক সন্তান মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে সাগর পথে পাড়ি জমায় মালয়েশিয়ায়। সন্তানের চিন্তায় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। একপর্যায়ে শরীরে বাসা বাঁধে জ¦র। উচ্চ রক্তচাপও কমছিলো ন। দীর্ঘদিন ধরে জ¦র না কমায় আয়েশা বেগম চলে আসেন জেলা শহর কক্সবাজারে। শরণাপন্ন হন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাগ্রহণ করেছেন দুই জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে। কিন্তু কোন ফল আসেনি। দিনদিন শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে চিকিৎসকরা তাঁকে চট্টগ্রাম শহরে একজন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে পরামর্শ দেন।

কক্সবাজারের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো আয়েশা বেগম ছুটে যান সুদূর চট্টগ্রামে। সেখানে ডাঃ প্রদীপ দত্ত নামে একজন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞের চেম্বারে উপস্থিত হন। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ডাঃ প্রদীপ দত্ত নিশ্চিত হন আয়েশা বেগম দূরারোগ্য জটিল কিডনি রোগাক্রান্ত। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, কোন ধরনের ওষুধে আয়েশা বেগমের রোগ সারবে না। বেঁচে থাকতে হলে তাঁকে নিয়মিত কিডনি ডায়ালাইসিস করাতে হবে।

ততদিনে সময় অনেক সময় পার হয়ে গেছে। ২০১৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ দুই বছর একটানা চিকিৎসা করিয়েছেন। ফলে টাকা পয়সা যা ছিলো সবই এখন শেষ। কিন্তু আয়েশা বেগমের বেঁচে থাকার খুব ইচ্ছা। এই সুন্দর পৃথিবী নিজ চোখে আরো কিছুদিন দেখতে চান তিনি। ফলে শেষ সম্বল নিয়ে চট্টগ্রাম যান ডায়ালাইসিস করাতে।
সেখানে গিয়ে সিরিয়াল না পাওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থান হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে তাঁকে চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাতে হচ্ছে। প্রতিবার ডায়ালাইসিস করতে শুধু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দিতে হচ্ছে ৩ হাজার টাকা। বেঁচে থাকতে হলে সপ্তাহে দুইবার ডায়ালাইসিস করাতে হবে। ফলে চট্টগ্রামের একটি আবাসিক হোটেলে থেকেই বর্তমানে তাঁকে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করাতে হচ্ছে। আয়েশা বেগমের এই অর্থ জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অথচ কক্সবাজারে ডায়ালাইসিস মেশিন থাকলে তাঁকে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো না। খরচও অনেক কম হতো। ফলে এই সুন্দর পৃথিবীতে আরো কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারতেন। শুধু আয়েশা বেগম নন। কক্সবাজার জেলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগীকে সম্মুখীন হতে হচ্ছে এই সমস্যার।

ইতোমধ্যে ডায়ালাইসিস করাতে করাতেই অনেকে নিঃস্ব হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢেলে পড়েছেন। কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কমিশনার আবদুল হাইও একইভাবে মৃত্যুবরণ করেন।

কক্সবাজার জেলায় রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে আক্রান্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী। জেলায় একটি ২৫০ শয্যার সরকারি হাসপাতাল থাকলেও সেখানে নেই কোন কিডনি (নেফ্রোলজি) বিভাগ। ফলে কিডনি রোগীদের আলাদাভাবে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কোন কিডনি রোগী হাসপাতালে এলেই তাঁকে রেফার করা হয় চট্টগ্রামে।
এমনকি সদর হাসপাতালের বাইরেও নেই কোন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ। পাশর্^বর্তী জেলা চট্টগ্রাম থেকে কয়েকজন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ আসেন কক্সবাজারে। প্রতি সপ্তাহে একদিন অথবা দুই দিন অবস্থান করেন জেলায়। তাঁরাই এখন জেলার কিডনি রোগীদের একমাত্র ভরসা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের সহকারি অধ্যাপক, মেডিসিন ও কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ নুরুল আলম বলেন, “ কক্সবাজারে ডায়ালাইসিস মেশিন খুব প্রয়োজন। কিডনি ছাড়াও শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে রোগ নিয়ন্ত্রণ করে শুধুমাত্র ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে একজন কিডনি রোগাক্রান্ত মানষ দীর্ঘদিন ধরে সুস্থ জীবন-যাপন করতে পারবেন।”

কি কারণে কিডনি রোগ হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ডাঃ নুরুল আলম বলেন, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ (হাই ব্লাড প্রেসার), জন্মগত সমস্যা, দীর্ঘদিন ব্যথানাশক ওষুধ সেবন ও ত্বকের সংক্রমণে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হিসেবে কিডনি রোগ হতে পারে। পাশাপাশি খুব দ্রুত যথানিয়মে ডায়রিয়ার চিকিৎসা না করালেও জটিল কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।