কক্সবাজারে ভয়ানক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে অসংখ্য মানুষ

বিশেষ প্রতিবেদক •

কক্সবাজার জেলায় করোনা ভাইরাস ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। প্রতিদিন ভয়াবহ আকারে ছড়াচ্ছে। অথচ স্বাস্থ্য বিধির তোয়াক্কা না করে বাজারে, ব্যাঙ্কে উপচেপড়া ভিড় জমছে। ভীড়ের ধরণ দেখে স্বাস্থ্য সচেতনদের চোখ কপালে উঠলেও সোমবার সকলকেই যেনে নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছেন।

১৪ এপ্রিল থেকে কঠর লকডাউন শুরু আগেই হুড়োহুড়ির কারণে কতজন যে করোনা আক্রান্ত হয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বেন তা অনুমান করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য বিধি না মেনে কক্সবাজার পৌরসভাসহ উপজেলা শহরের প্রায় সব ক’টি সড়কেই টমটমগুলোকে ঠাসাঠাসি যাত্রী নিয়ে ছুটতে দেখা গেছে। জেলা শহরের বিপনি বিতানগুলোতে যেমন ভিড়, তেমনই ব্যাঙ্কগুলোতে উপচেপড়া ভিড় হয়েছে।

ভিড়ের ধরণ দেখে অনেকেই মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, মানুষ যেমন আর কেনা কাটার সুযোগ পাবে না। সকলকেই মনে রাখা দরকার, করোনা ভাইরাস প্রতিশেধক ইতোমধ্যেই আবিষ্কার করেছে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান। টিকা দেয়ার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ খুব যে বেশিদিন থাকবে তাও নয়। অল্প কিছুদিন সাবধানে চলতে পারলে নিজের লাভ, সমাজেরও লাভ। সহজ বিষয়টি না বুঝে যারা হুড়োহুড়ির মধ্যে নিজের এবং অন্যের সর্বনাশ ডেকে আনছেন তারা দায়িত্বশীল হবে কবে?

লকডাউন বাস্তবায়নে জনগণকে সচেতন করতে বিগত কয়েকদিন যাবৎ পৌর এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। এছাড়া পুলিশ শহরের সড়কের প্রবেশ মুখগুলোতে সকালে কড়াকড়ি করলেও বিকালে ছিল স্বাভাবিক। এদিকে ১২ এপ্রিল জেলায় নতুন ৬১জন সহ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ২১১ জন। শেষ ২৪ ঘন্টায় ৬৩৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় সদর উপজেলায় ২৭ জন,উখিয়া উপজেলায় ১২ জন,চকরিয়া উপজেলায় ৭ জন, টেকনাফ উপজেলায় ৬ জন, রামু উপজেলায় ১ জন,পেকুয়া উপজেলায় ৪জন এবং মহেশখালী উপজেলায় ৪ জন আক্রান্ত হয়েছে । এছাড়া ৪জন রোহিঙ্গাও পজিটিভ রয়েছে। নেগেটিভ হয়েছে ৫৬৮ জন। আর জেলায় করোনায় এখন পর্যন্ত মোট ৮৫ জন মারা গেছেন। তার মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভা ও সদর উপজেলাতেই ৪৬ জনের মৃত্যূ হয়েছে। জেলায় সর্বোচ্চ করোনা আক্রান্ত হয়েছে পৌরসভা ও সদরে ৩ হাজার ৫৪৮ জন জন। তাই জেলার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন,জেলায় ক্রমবর্ধমান করোনভাইরাস পরিস্থিতির রাশ টানতে লকডাউনই একমাত্র ভরসা।

এদিকে করোনা সংক্রমণ রোধে বিধি-নিষিধের মধ্যে ১৪-২১ এপ্রিল অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়াতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল এমন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সোমবার (১২ এপ্রিল) আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে বলা হয়, অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মরদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে টিকাকার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা নিতে যাতায়াত করা যাবে। আগামী ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত এ বিধি-নিষেধ কার্যকর হবে বলে জানায় মন্ত্রিপিরষদ বিভাগ।

লকডাউন : বুধবার থেকে মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
আগামী ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আট দিনের জন্য কক্সবাজারসহ সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। সোমবার (১২ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতি অবনতির কারণে আগের নির্দেশনার ধারাবাহিকতায় আগামী ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত ১৩টি বিধি-নিষেধ আরোপ করার কথা বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।

প্রজ্ঞাপনে যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো :

১. সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি অফিস/আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ও সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। তবে বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দর এবং এ সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।

২. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

৩. সকল প্রকার পরিবহন (সড়ক, নৌ, রেল, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না।

৪. শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া নিশ্চিত করতে হবে।

৫. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।

৬. অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ঔষধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।

৭. খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা থেকে ভোরর ৬টা পর্যন্ত কেবল খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ (সরাসরি/অনলাইন) করা যাবে। শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে।

৮. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

৯. বোরো ধান কাটার জরুরি প্রয়োজনে কৃষি শ্রমিক পরিবহনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন সমন্বয় করবে।

১০. সারা দেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে।

১১. স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেবেন।

১২. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুমা ও তারাবি নামাজের জমায়েত বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা জারি করবে।

১৩. এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ প্রয়োজনে সম্পূরক নির্দেশনা জারি করতে পারে