কক্সবাজারে ১৬৮ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ১৩৮টিতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা

বিশেষ প্রতিবেদক •

কক্সবাজারের দুটি পৌরসভা (চকরিয়া ও মহেশখালী) এবং টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন আগামীকাল সোমবার। গতকাল শনিবার রাত ১২টায় শেষ হয়েছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা।

পৌরসভা ও ইউনিয়নগুলোয় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের মেয়র ও চেয়ারম্যান প্রার্থীর সঙ্গে দলের বিদ্রোহীদের। এ কারণে ভোটকেন্দ্র দখল, সংঘর্ষ ও হানাহানির আশঙ্কা করছেন ভোটাররা।

ইতিমধ্যে এক প্রার্থী আরেক প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্র দখল, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের জড়ো করা, কালোটাকার ছড়াছড়ি, ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ কুরুচিপূর্ণ পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ছুড়ছেন। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও দলীয় সমর্থকেরা দ্বিধাবিভক্ত। পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের দলীয় প্রার্থী নেই। নৌকা ঠেকাতে গোপনে ওই দলের কিছু নেতা-কর্মী বিদ্রোহীদের পক্ষে তৎপরতা চালাচ্ছেন।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এস এম শাহাদাত হোসেন বলেন, ২টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে ভোটকেন্দ্র আছে ১৬৮টি। এর মধ্যে ১৩৮টি ভোটকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে।

বিশেষ করে ২টি পৌরসভার ২৮টি ভোটকেন্দ্রের সব কটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নির্বাচনে বেশ কটি কেন্দ্রে সংঘর্ষ-হানাহানির আশঙ্কা থাকলেও রক্তপাতহীন ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে চায় নির্বাচন কমিশন। দুই পৌরসভায় ভোট হবে ইভিএম পদ্ধতিতে।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, দুই পৌরসভায় মেয়র পদে ৮ জন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ২৫ জন ও সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৭৬ জন এবং ১৪টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৯২ জন, সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ১৯৯ জন ও সাধারণ ওয়ার্ডে ৭৭৫ জন প্রার্থী লড়ছেন।

পৌরসভায় সংঘাত-হানাহানির শঙ্কা
২০১৬ সালের ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত মহেশখালী পৌরসভার মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান বর্তমান মেয়র মকসুদ মিয়া। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন দলের বিদ্রোহী ও সাবেক মেয়র সরওয়ার আজম। ভোটের দিন বিকেলে ঘোনাপাড়া ফেরকানিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় অন্তত ১৩ জন গুলিবিদ্ধ হন। এর মধ্যে আবদুল শুক্কুর নামের সরওয়ার আজমের এক সমর্থক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

এবারের নির্বাচনেও দুই প্রার্থী মুখোমুখি। এক পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্র দখল, অস্ত্রধারীদের নিয়ে মহড়া, কালোটাকার ছড়াছড়ির অভিযোগ আনছে। শঙ্কায় আছেন ভোটাররা। পৌরসভার ভোটকেন্দ্র ১০টি; সব কটিকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে।

পৌরসভার ভোটার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দিলীপ কুমার দাশ বলেন, প্রতিবারই নির্বাচনের সময় গোরকঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘোনারপাড়া ফেরকানিয়া মাদ্রাসা ও মহেশখালী ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ঝুঁকিপূর্ণ এই তিন ভোটকেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা প্রয়োজন। জীবনের নিরাপত্তা না পেলে সংখ্যালঘু ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে সাহস পাবেন না।

পৌরসভার ভোটার ১৯ হাজার ৪৮৪ জন। এর মধ্যে সংখ্যালঘু ভোটার অন্তত সাত হাজার।

মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল হাই বলেন, ১০টি ভোটকেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হবে, ফলে কারচুপির সুযোগ থাকবে না।

এদিকে, চকরিয়া পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান মেয়র আলমগীর চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে ভোটযুদ্ধে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াবুল হক। জিয়াবুল হক স্থানীয় আওয়ামী লীগদলীয় (কক্সবাজার-১) সাংসদ জাফর আলমের ভাতিজা। চাচার (সাংসদ) জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তিনি জয়লাভের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

আলমগীর চৌধুরীর অভিযোগ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ জাফর আলম তাঁর ভাতিজা জিয়াবুল হকের পক্ষে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে ভোটার ও প্রশাসনকে প্রভাবিত করছেন। অন্যদিকে, প্রতিদ্বন্দ্বী জিয়াবুল হক পার্শ্ববর্তী এলাকার সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের এনে ভোটকেন্দ্রে জড়ো করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির তৈরি করছেন। এতে ভোটাররা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

এ অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াবুল হক বলেন, তাঁর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আলমগীর চৌধুরী অপপ্রচার চালাচ্ছেন। সাংসদের ভাতিজা হয়েছেন বলে ক্ষমতার অপব্যবহারের কথা তোলা হচ্ছে।

দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াবুল হকের পক্ষে কাজ করায় গত শুক্রবার চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটুকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে জেলা আওয়ামী লীগ।

পৌরসভার ১৮টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে অতিরিক্ত নিরাপত্তার পাশাপাশি ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ।