কক্সবাজারে ৩৮ হাজার নিবন্ধিত জেলে ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছে না


সাইফুল ইসলাম,কক্সবাজার জার্নাল 
মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় কক্সবাজারের ১০ হাজার ৫শ’ জন নিবন্ধিত জেলে ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন। যদিও ফিশিংবোট মালিক সমিতির তথ্যমতে, এখানে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৪৮ হাজার ২শ’ জন। ফলে আরও ৩৮ হাজার জেলে ত্রাণ সহায়তার বাইরে রয়ে গেছে। এ নিয়ে জেলে পল্লিতে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহকারী এসব জেলেদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা থাকলেও মাত্র কিছু সংখ্যক জেলে মাঝে মাঝে সে ভাতার মুখ দেখেন। আর অধিকাংশ জেলে বছরের পর বছর ধরে ভাতা বঞ্চিত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কক্সবাজার পৌরসভার নতুন বাহারছড়া এলাকার রতন নামে এক নিবন্ধিত জেলে অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে অভিযোগ করে বলেন, “জেলে জীবন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও পরিবার পরিজনকে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার এনে দিতে অথৈ সাগরে মাছ ধরতে যায় আমরা। সেই মাছ দেশ-বিদেশে রপ্তানী করার পাশাপাশি দেশের মানুষের চাহিদা মেটায়। তাই সরকার অসহায় জেলেদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা নিয়ে সর্বত্র প্রশংসা কুড়িয়েছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনিয়ম-অবহেলা কিংবা রহস্যজনক কারনে দীর্ঘ সময় ধরে কোন ধরনের ভাতা পাচ্ছেনা জেলেরা। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই কষ্টে দিনাতপাত করতে হচ্ছে আমাদের।” এভাবেই বহু জেলে কান্না জড়িত কন্ঠে বঞ্চনার নানা চিত্র তুলে ধরেছেন সংবাদকর্মীদের কাছে।

ভাতা বঞ্চিত জেলেদের অভিযোগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ কিছু নেতাদের ইচ্ছেমত মৎস্য কর্মকর্তারা এই কার্ড বিতরণ করে থাকেন। আর কার্ডের পরিমাণও পর্যাপ্ত না হওয়ায় বেশিরভাগ জেলে এর আওতার বাইরে রয়েছে। যাঁরা বর্তমানে নিবন্ধিত তালিকায় রয়েছে তাঁরা নিয়মিত ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়েই মানবেতর জীবন যাপন করতে হয় তাদের।
এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক এবং এনজিও সংস্থা থেকে লোন নিয়ে সেই লোন ঠিকমতো পরিশোধ করতে না পেরে অনেকেই এখন দেউলিয়া হয়ে পথে বসতে দেখা গেছে।
জেলা ফিশিংবোট মালিক সমিতি জানিয়েছে, কক্সবাজার সদর টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া উপজেলাসহ বিভিন্ন উপকূলে প্রায় ৬ হাজার মাছ ধরার ট্রলারে কর্মরত আছেন ১ লাখ ২০ হাজার শ্রমিক। এর মধ্যে মৎস্য বিভাগের নিবন্ধিত হয়েছেন ৪৮ হাজার ২০০ জন। নিবন্ধিত হলেও জেলার বেশির ভাগ জেলে প্রতিবছর মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় ত্রাণ সহায়তা পান না।
গত বৃহস্পতিবার সকালে টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, ৩০-৪০টি নৌকা ঘাটে নোঙর করে আছে। নৌকার জেলে জালাল আহমদ বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে এমনিতেই নাফ নদীতে মাছ ধরায় নানা সময়েই বিজিবির  বিধি নিষেধ থাকে। তার ওপর মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার কারণে এখাকার জেলেরা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
মহেশখালীয়া পাড়া সোনারতরী মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, গত ২১ আগষ্ট বিজিবি সদস্যরা জেলেদের নাফ নদী ও সাগরে নামতে নিষেধ করেন। ১৫ দিন পর সাগরে মাছ ধরার অনুমতি মিললেও নাফ নদীতে এখনো নামতে পারছেন না টেকনাফের ১০ হাজারের বেশি জেলে। এর ফলে জেলা পরিবারে অভাব-অনটন দেখা দিয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো . আব্দুল আলীম বলেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের জন্য ২১০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দরিদ্র জেলেদের মাঝে এই চাল বণ্টন করা হবে।
প্রসঙ্গত,কক্সবাজার জেলা মৎস্য অধিদপ্তর অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ৮ উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৮ হাজার ২শ’ জন। ততমধ্যে সদর উপজেলায় ৭ হাজার ১২০জন, মহেশখালী উপজেলায় ১১ হাজার ৪৪২ জন, চকরিয়া উপজেলায় ৩ হাজার ৮৫৭ জন, টেকনাফ উপজেলায় ৭ হাজার ৮৮৩ জন, উখিয়া উপজেলায় ৩ হাজার ৩৯২ জন, রামু উপজেলায় ২ হাজার ২৭৩ জন, পেকুয়া উপজেলায় ৩ হাজার ৯৬৭ জন ও কুতুবদিয়া উপজেলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৮ হাজার ৪৫৯ জন।