কক্সবাজার-৪(টেকনাফ-উখিয়া) আসনে ২৫ লাখ টাকা খরচ করবেন শাহীন আক্তার!

বিশেষ প্রতিবেদক:কক্সবাজার-৪ (টেকনাফ ও উখিয়া) আসনে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ আবদুর রহমান বদির স্ত্রী শাহীন আক্তার। লেখাপড়া, প্রভাবে কিছুটা কাছাকাছি থাকলেও অর্থসম্পদের দিক থেকে স্বামীর তুলনায় তিনি পিছিয়ে। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুসারে, স্নাতক পাস শাহীন আক্তার এই নির্বাচনে খরচ করবেন ২৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে নিজের ব্যবসা (ধান–চালের মিল ‘মেসার্স শাহীন অ্যান্ড কোং’ এবং লবণ মাঠ ইজারা) থেকে খরচ করবেন ৫ লাখ টাকা। অবশিষ্ট ২০ লাখ টাকা নিয়েছেন স্বামীর কাছ থেকে।

শাহীন আক্তারের কৃষি খাত থেকে আয় ১৮ হাজার ২২৫ টাকা, ব্যবসা থেকে আয় সাড়ে ৩ লাখ টাকা, লবণ মাঠ ইজারা থেকে পান ৪৬ হাজার ৬০০ টাকা। তাঁর নগদ টাকা আছে ৫ লাখ। স্বামী বদির আছে ৩০ লাখ টাকা।

ব্যাংকে শাহীন আক্তারের জমা আছে মাত্র ১০ হাজার টাকা। অন্যদিকে বদির আছে ৫০ লাখ টাকা।

শাহীন আক্তারের সঞ্চয়পত্র অথবা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ নেই। কিন্তু স্বামীর আছে ২০ লাখ টাকা। ১ কোটি ৫৭ লাখ ৯০ হাজার ২৭২ টাকা দামের একটি কার, দুটি জিপ গাড়িও স্বামীর নামে।

শাহীন আক্তারের আছে ১৫ ভরি স্বর্ণ ও বিয়ের সময় পাওয়া একটি রঙিন টেলিভিশন, একটি ফ্রিজ ও ৩০ হাজার টাকা দামের আসবাব। কিন্তু স্বামীর নামে আছে ৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা দামের ফার্নিচার। আছে একটি পিস্তল ও একটি শটগান।

শাহীন আক্তারের নামে জমি আছে ১০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা দামের ৫.২৬ একর। অন্যদিকে স্বামীর নামে আছে ৩ কোটি ৪০ লাখ ৯৮ হাজার ৫০৪ টাকা মূল্যের ১৯.৪৭৪৯ একর জমি। শাহীন আক্তারের আছে ২ লাখ টাকা দামের দুটি দোকান। অন্যদিকে বদির আছে ১১ লাখ ৭৫ হাজার ৭৭৮ টাকা দামের গুদাম ও ভাড়া বাসা, ৬৪ লাখ ৭৭ হাজার ১০৬ টাকা মূল্যের আধা পাকা বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট।

একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-৪ আসনে ভোটারসংখ্যা ২ লাখ ৬৬ হাজার ১৪৬। ইয়াবার উৎস্যভূমি হিসেবে পরিচিত এই সীমান্ত জনপদে আলোচিত-সমালোচিত ব্যক্তি আওয়ামী লীগদলীয় সাংসদ আবদুর রহমান বদি। দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এখন নতুন করে আলোচনায় তাঁর স্ত্রী শাহীন আক্তার।

শাহীন আক্তারের বাবা মরহুম নুরুল ইসলাম চৌধুরী ছিলেন উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। চাচা হামিদুল হক চৌধুরী উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন তাঁর আপন ছোট ভাই জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী। উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন দপ্তরে শাহীন আক্তারের আত্মীয়স্বজন অনেক। শাহীন লড়ছেন এ আসনে বিএনপির চারবারের সাংসদ শাহজাহান চৌধুরীর সঙ্গে।

ভোটাররা বলছেন, শাহীন আক্তার প্রার্থী হলেও প্রচারণায় মূল ভূমিকা রাখছেন সাংসদ বদি। তিনি এ আসনের দুবারের সাংসদ। বদি চাইছেন যেকোনো মূল্যে স্ত্রীকে জয়লাভ করিয়ে নিজের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করতে।

এক ছেলে ও এক মেয়ের জননী শাহীন আক্তারের মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেন টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমদ। সমর্থনকারী ছিলেন স্বামী আবদুর রহমান বদি। বদি টেকনাফ পৌরসভার উত্তর জালিয়াপাড়ার ভোটার।

শাহীন আক্তার ও আবদুর রহমান দম্পতির ছেলে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আরমান রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। আবদুল্লাহ আরমান ইতিমধ্যে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে মায়ের পক্ষে ‘নৌকায়’ ভোট দিতে অনুরোধ করেছে। আর মেয়ে সামিয়া রহমানও মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি রাজধানীর আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে এলএলবিতে অধ্যয়নরত।

উখিয়ার রাজাপালং এলাকার ভোটার সাইফুল আলম বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের পর শাহীন আক্তার স্বামীকে নিয়ে মাঠে নেমেছেন। শুরুর দিকে উখিয়া আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা সাংসদ বদির বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও এখন পক্ষে। এ ক্ষেত্রে শাহীন আক্তারের ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়।

আব্দুল কুদ্দুস রানা, কক্সবাজার, দৈনিক প্রথম অালো