গোমাতলীতে আবারও অস্ত্রের ঝনঝনানি, আতংকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে শত শত পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক •


কক্সবাজারের ঈদগাঁও পোকখালীতে রাত হলেই শোনা যায় গুলির শব্দ। আর এই গুলির শব্দ আতংকে রাত কাটাচ্ছে শত শত পরিবারের সহস্রাধিক মানুষ। এতে করে আবারও রক্তের হলিখেলায় শুরু হতে পারে বলে আংশকা করছে স্থানীয়রা।

সূত্রে জানা গেছে, একটি ভূমিদস্যু চক্র দীর্ঘদিন ধরে বিরোধপূর্ণ ৪০০ একর মত চিংড়ি ঘের ও লবণ চাষাবাদের জমি দখলে নিতে বিভিন্ন স্থান থেকে ভাড়া করে সন্ত্রাসী জড়ো করেছে। তাদের হাতে রয়েছে বিশাল অস্ত্রের ভাণ্ডারও। যে কোনসময় ভূমিদস্যু চক্রটি পুরো এলাকা ঘিরে বেপরোয়া হামলা চালাতে পারে বলে আংশকা করা হচ্ছে।

এসব অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে সরজমিন গিয়ে।অস্ত্রবাজী বন্ধ ও জমি দখলের আংশকা থেকে বুধবার বিকেল ৫টার দিকে পোকখালী ৯ নাম্বার ওয়ার্ডে গোমতলী একটি খোলা মাঠে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ওবায়দুল হক চৌধুরী গং।এসময় দিবালোকে অনেককেই গুলির স্প্রিন্টার গায়ে হাজির হতে দেখাগেছে। এতে করে আতংক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকা জুড়ে।

সংবাদ সম্মেলেনে ওবায়দুল হক চৌধুরী গং এর ওয়ারিশ মোঃ শরিফ উদ্দিন শাহ নেওয়াজ অভিযোগ করে বলেন, সাবেক সাংসদ ও বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা লুৎফুর রহমান কাজলের ভাই মশিউর রহমান রাজনের নেতৃত্বে তাদের ৪শ একর জমি দখল করে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে তারা বিভিন্ন এলাকা শতাধিক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গোমতলীতে এনে জড়ো করেছেন।

মোঃ শরিফ উদ্দিন শাহনেওয়াজ এর দাবি, চক্রটি জমি দখলের পাশাপাশি মালিক পক্ষের যে কোন দুইজন বা কয়েকজন চাষিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে। রাজন ছাড়াও এ চক্রের সাথে স্থানীয় মো: হোছাইন (প্র: রাইফেল মাছন), মোজাহের, মোঃ ছৈয়দ, নূরুচ্ছফা, আমানু, নজরুল ইসলাম নকু সহ আরো কয়েক জন ভুমি দস্যু ও সন্ত্রাসী এ চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, এখন এ মুহুর্তেই আমাদের আশেপাশে অনেক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী উপস্থিত হয়েছেন। আমরা এ এলাকায় আর রক্তের হলিখেলা চায় না।শান্তি চাই।

তার দেওয়া তথ্যমতে, ২১/০৬/১৯৩০ সালে ৫ বছরের জন্য ইলিয়াছ মিয়া গং দের (হাফেজ মিয়ার বাবা) গং দের কট বন্ধক রাখেন। পরবর্তীতে হাফেজ মিয়া মিথ্যা, ফেরাবী, জাল, নিলাম সৃজন করে উক্ত জমি নিলাম সম্পাদন করে নামে ও বেনামে নিলাম ক্রয় করে উক্ত সম্পত্তি কুক্ষিত করার অপচেষ্টা লিপ্ত হলে আমরা ওবাইদুল হক চৌধুরী এবং তৎ বোনদ্বয়ের ওয়ারিশগণ ১৯৬৬ সালে জমি পুণ:উদ্ধারের জন্য আদালতে ধারস্থ হয়।

এর পর নিম্ন আদালত ৩১/০৭/১৯৯১ সালে চৌধুরী ঘোনার মূল জমিদার ওবাইদুল হক চৌধুরী ও তার দুই বোন হুমুরা খাতুন ও হুমবুলারা খাতুনের পক্ষে রায় প্রদান করেন। পরবর্তীতে ইলিয়াছ মিয়া গং অর্থাৎ হাফেজ মিয়া গং রা রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করেন। আপীল মোকাদ্দমা নং ৭৯/১৯৯৯ দায়ের করেন।

এর পর ০৫/০৮/২০০২ ইংরেজীতে নিম্ন আদালতের রায়কে বহাল রেখে যুগ্ম জজ আদালত ওবাইদুল হক চৌধুরী গং এর পক্ষে রায় ও ডিক্রি প্রদান করেন। পরবর্তীতে আবার হাফেজ মিয়া গং মহামান্য হাই কোর্টে ৪২৫/২০০৩ নিম্ন আদালত এবং যুগ্ম জেলা জজ আদালত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। উচ্চ আদালত দীর্ঘ পর্যালোচনার পরে ২৪/০৪/২০১৯ইং নিম্ন আদালত এবং যুগ্ম জেলা জজ আদালতের রায়কে পুণ বহাল রেখে হাফেজ মিয়া গং দের আপিল খারিজ করে দেন।

মোঃ শরিফ উদ্দিন শাহ নেওয়াজ বলেন, দীর্ঘ বিরোধের সুযোগ নিয়ে সাবেক এমপি কাজলদের পরিবার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী ও গায়ের জোরে এসব জমি জোরজবর দখলে রাখেন। ২০১৯ সালে আদালতের রায়ের পর তারা আমাদের দখলে থাকা ৪০০একর জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

এ কারনে আমরা মালিক পক্ষ বিভিন্ন সময় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার জেল সুপার, র‍্যাব ১৫রসহ বিভিন্ন তপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু টাকা ও পেশিশক্তির জোরে ভূমিদস্যুরা হামলা মামলার হুমকি অব্যাহত রেখেছে।

সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল হক চৌধুরী গং এর ওয়ারিশ মোজ্জামেল হক চৌধুরী, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীরীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শাহ নেওয়াজ তালুকদার, জোয়ারিয়া নালা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ শাহান,সদরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লুতু মিয়ার ছেলে মোঃ শাহীন জাহান, মোঃ শরিফ নেওয়াজ,শাবেদ নুর চৌধুরী,জসিম উদ্দিন চৌধুরী,কলিম উল্লাহ, রুকনুজ্জামান চৌধুরীসহ।

অভিযোগের বিষয়ে মশিউর রহমান রাজন বলেন, ওবায়দুল হক চৌধুরী গংদের ১৯০ একর জমি ছিল।কিন্তু তারা ২১০একর আমিসহ গ্রামের অন্যান্যদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এর ফলে তাদের আর জমি থাকার কথা নয়।আমার কাছে জমি ক্রয়ের সব কাগজপত্র রয়েছে।

সন্ত্রাসী ভাড়া করা বা হত্যার পরিকল্পনার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।