জিজ্ঞাসাবাদে দিচ্ছেন নানা তথ্য: অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে দেখতে এসেই ধরা আরসা প্রধানের ভাই

সমকাল :

আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ ওরফে আবু আম্মার জুনুনীর ভাই মো. শাহ আলীকে গ্রেপ্তারের পর চমকপ্রদ নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে।

এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সংস্থা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আলীর বিরুদ্ধে কক্সবাজারের উখিয়া থানায় অস্ত্র, মাদক ও অপহরণ মামলা হয়েছে।

আলী স্বীকার করেছেন, বছর তিনেক আগে উখিয়ায় ৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক কিশোরীকে বিয়ে করেন তিনি। তার স্ত্রী বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা। তার সঙ্গে দেখা করতে এসেই ধরা পড়েন তিনি। গোপনে বাংলাদেশ-মিয়ানমারে আলীর যাতায়াত ছিল। জুনুনীর সঙ্গেও ছিল তার যোগাযোগ। এর আগেও একবার গ্রেপ্তার হয়ে বাংলাদেশের কারাগারে মাস ছয়েক বন্দি ছিলেন তিনি। তবে তার প্রকৃত নাম-পরিচয় তখন কারও জানা ছিল না। উচ্চ আদালত থেকে জামিনের পর কারাগার থেকে তিনি ছাড়া পান। তদন্তসংশ্নিষ্ট একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক নাইমুল হক বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলী বিয়ে করেছেন বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। সে ক্যাম্পে একটি অপরাধ চক্র গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার সঙ্গে তার সংশ্নিষ্টতার বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।

তদন্তসংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, আলী জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেন, ১৯৭০ সালে সপরিবারে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসে তার পরিবার। একাত্তরে যুদ্ধ শুরুর আগেই তাদের পুরো পরিবার পাকিস্তানে চলে যায়। পাকিস্তানে আলীর মা রহিমা মারা যান।

পরে আলী চলে যান সৌদি আরবে। সেখানেই বিয়ে করে নতুন জীবন সাজান। সৌদি আরবে আলী জমজমের পানি বিক্রি করতেন। ২০১৪-১৫ সালের দিকে সৌদি আরবে আলীর ভিসা বাতিল হয়। এর পরই পরিবারের সদস্যদের সৌদি আরব রেখে মিয়ানমার চলে আসেন তিনি।

তদন্ত সংশ্নিষ্টরা বলছেন, আলী মিয়ানমারের নাগরিক। সেখানেই তিনি থাকতেন। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা স্ত্রীকে দেখতে তিনি এ দেশে আসতেন।

আলী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জানান, তার বাবা দুটি বিয়ে করেছেন। দুই ঘরে ৯ ভাই ও তিন বোন। আরসাপ্রধান জুনুনী তার বাবার দ্বিতীয় ঘরের সন্তান। ভাইয়ের পরামর্শে ২০১৮ সালে আলীকে আরসায় যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করে তার ভাই। বর্তমানে জুনুনী মিয়ানমারের এক গহিন পাহাড়ে পালিয়ে আছেন। ভাইয়ের সঙ্গে বেশ কয়েকবার তার দেখা হয়েছিল। নিয়মিত তাদের মধ্যে যোগাযোগও ছিল।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরেক কর্মকর্তা জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলী পরিচিতি ছিল ‘বড় ভাই’ হিসেবে। জুনুনীর ভাই হওয়ায় ক্যাম্পের সবাই তাকে ভয় পেত। এ ছাড়া ক্যাম্পে যখন আলী অবস্থান করতেন তখন সার্বক্ষণিক তার দেহরক্ষীও ছিল। গভীর রাত পর্যন্ত তারা আলীকে পাহারা দিতেন।

জানা যায়, গত রোববার পুলিশের কাছে খবর আসে ৫ নম্বর ক্যাম্পে এক রোহিঙ্গাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে। ক্যাম্পের একটি বাড়িতে বেশ কিছু লোক অপহৃত ওই ব্যক্তিকে পাহারা দিচ্ছে। যারা অপহরণের সঙ্গে যুক্ত তাদের মধ্যমণি হিসেবে উপস্থিত আছেন ‘বড় ভাই’ পরিচয়ধারী এক ব্যক্তি। তখন পুলিশ ড্রোন দিয়ে ওই বাড়িটি শনাক্ত করে। এতে ওই তথ্যের সত্যতা মেলে। ওই রাতে পুলিশ বাড়িটি ঘিরে অভিযান চালায়। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় মধ্যবয়সী এক ব্যক্তিকে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বেরিয়ে আসে তিনি আরসাপ্রধানের বড় ভাই।

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারের সময় আলীর কাছ থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা, একটি বড় চাকু পাওয়া যায়। শাহ আলী ২০১৯ সালে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগরীর হাজারীবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা রয়েছে। ওই মামলায় তিনি হাইকোর্টের জামিনে আছেন।

এদিকে শাহ আলীর কাছে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রামের শহরের কোতোয়ালি থানার দেওয়ান বাজারের জয়নব কলোনির ঠিকানা ব্যবহার করে তিনি সেই পরিচয়পত্র নিয়েছেন। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, আলীর কাছে পাওয়া এনআইডি যাচাই করে দেখা গেছে, সেটি ভুয়া। এর কোনো তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভারে নেই। মূলত তিনি মিয়ানমারের নাগরিক।