থাইল্যান্ড-ইন্দোনেশিয়ার আদলে মেরিন বিচ হবে কক্সবাজারে

ঢাকাপোষ্ট •

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ, ভাঙনবিহীন ও বালুসমৃদ্ধ এ সমুদ্র সৈকত দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণের আগ্রহের শীর্ষে রয়েছে।

শুধু কক্সবাজার নয়, এর আশপাশ ঘিরে রয়েছে সৌন্দর্যমণ্ডিত সেন্টমার্টিনের ছেঁড়া দ্বীপ, শাহপরির দ্বীপ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়াসহ অনেক অজানা দ্বীপ। পর্যটন খাতের কেন্দ্রবিন্দু এ কক্সবাজারকে যুগোপযোগী ও পর্যটকবান্ধব করতে মাস্টার প্ল্যান অর্থাৎ মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

মাস্টার প্ল্যানের অধীনে তৈরি হবে মেরিন বিচ। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) জানায়, এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে সামুদ্রিক আবহ। এটি আরও সমৃদ্ধ করতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার আদলে আধুনিক, প্রযুক্তিগত ও আন্তর্জাতিক মানের মেরিন বিচ তৈরি করা হবে। এছাড়া বিচের পাশেই নির্মিত হবে অ্যাকুরিয়াম। সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণ করা হবে। থাকবে গবেষণাগারও।

নতুন রূপে কক্সবাজারকে গড়তে সরকার ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ সংক্ষেপে ‘কউক’ গঠন করেছে। কউকের পরিকল্পনায় আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে গড়ে তোলা হবে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারকে। সে লক্ষ্যে চলছে মাস্টার প্ল্যান বা মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ।

এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে সামুদ্রিক আবহ। এটি আরও সমৃদ্ধ করতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার আদলে আধুনিক, প্রযুক্তিগত ও আন্তর্জাতিক মানের মেরিন বিচ তৈরি করা হবে। এছাড়া বিচের পাশেই নির্মিত হবে অ্যাকুরিয়াম। সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণ করা হবে। থাকবে গবেষণাগারও

যা থাকছে মাস্টার প্ল্যানে

কউক জানায়, কক্সবাজারের ভূমি উন্নয়ন পরিকল্পনা, ভূমির ব্যবহার পরিকল্পনা ও ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ), স্ট্র্যাটেজিক পলিসি প্ল্যান এবং সেক্টরাল প্ল্যান নামের চারটি মূল পরিকল্পনার আওতায় বাস্তবায়িত হবে মাস্টার প্ল্যান। এছাড়া সমুদ্র ও পাহাড় বেষ্টিত শহর হিসেবে বড়ছড়া, হিমছড়ি এলাকায় বন বিভাগের জায়গায় রাঙ্গুনিয়া শেখ রাসেল ইকো-ট্যুরিজম পার্কের আদলে কক্সবাজারে ইকো-ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের মতো পরিকল্পনা রয়েছে মাস্টার প্ল্যানে।

নাব্যতা ফিরিয়ে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হবে নদীতে

মাস্টার প্ল্যানের অধীন কক্সবাজারে ঐতিহ্যবাহী বাঁকখালী নদীর শাসন, দখল ও দূষণমুক্তকরণ এবং নাব্যতা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি নদীর তীরে পর্যটকদের আকর্ষণে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হবে। এতে নদীকেন্দ্রিক সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পাবে।

পর্যটকদের নিরাপত্তা

মাস্টার প্ল্যানের বড় উদ্যোগটি হচ্ছে, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এজন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ, জেলা পুলিশ, বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটিসহ অন্যান্য সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

পাহাড়ের ওপর থেকে দেখা মিলছে হিমছড়ি সমুদ্র সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কক্সবাজার শহর থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে সরাসরি সেন্টমার্টিন যাতায়াতের জন্য নৌযানের ব্যবস্থা থাকবে। দিনে দু’বার যাতায়াত করবে এসব নৌযান
হোটেল-মোটেল জোন এলাকায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সুইমিং পুল স্থাপন করা হবে। পর্যটকদের জন্য হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ, পিকনিক স্পট, রেন্ট-এ কার, অভিজ্ঞ পর্যটন গাইড ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা ইউনিট গঠন করা হবে। বিশ্বের দীর্ঘতম এ সমুদ্র সৈকতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্বলিত লাইফ গার্ড ইউনিট গঠন করা হবে।

থাকবে আন্তর্জাতিক মানের শিশুপার্ক

সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কক্সবাজার শহরে আন্তর্জাতিক মানের শিশুপার্ক স্থাপন করা হবে। যেখানে স্থানীয় শিশুদের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি ট্যুরিস্টদের সন্তানরা পাবেন বিশেষ সুবিধা।

বিদেশিদের টেনিস ও গলফ খেলার ব্যবস্থা

বিদেশি পর্যটকদের পছন্দের খেলা হচ্ছে টেনিস ও গলফ। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে খেলাধুলার উন্নয়নে কক্সবাজারের কলাতলী, হিমছড়ি ও নিকটবর্তী পাহাড়ি এলাকায় গলফ ও টেনিস কোর্ট নির্মাণ হবে। পর্যটক ও নগরবাসীর বিনোদনের জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত হবে রিক্রিয়েশন ক্লাব।

কক্সবাজারের মেরিন বিচে বিদেশি পর্যটকদের জন্য থাকবে বিশেষ জোন

বিদেশি পর্যটকদের জন্য কক্সবাজারে আলাদা জোনিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে মাস্টার প্ল্যানে। তাদের জন্য ফরেইন জোন এবং সার্ফিংয়ের জন্য থাকবে পৃথক ব্যবস্থা। থাকবে সার্ফ ট্রেনিং সেন্টারও।

যাতায়াতের সুবিধায় হবে জেটিঘাট

পর্যটন খাতকে আরও গতিশীল করতে কক্সবাজারের বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও সামুদ্রিক দর্শনীয় স্থান, পিকনিক স্পট, বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত এবং কক্সবাজার থেকে মহেশখালী, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়া এলাকায় ভ্রমণের সুবিধার্থে কস্তুরাঘাট, ৬নং ঘাট অথবা এর আশপাশের সুবিধাজনক স্থানে জেটিঘাট নির্মাণ করা হবে।

পর্যটকদের নিরাপত্তায় চালু হবে সি-নেটিং

পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় সমুদ্র সৈকতে স্থায়ীভাবে সি-নেটিং ব্যবস্থা চালু হবে। জোয়ার-ভাটার সময় দেশি-বিদেশি পর্যটকরা যাতে কোনো দুর্ঘটনায় না পড়েন, অথবা চোরাবালিতে হারিয়ে না যান, সে লক্ষ্যে এ ব্যবস্থা রাখা হবে। এছাড়া পর্যটক ও জনসাধারণের সময় সচেতনতার জন্য কক্সবাজার শহরে অপেক্ষাকৃত দৃশ্যমান স্থানে বিশাল আকৃতির ঘড়ি স্থাপন করা হবে।

বিদেশি পর্যটকদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা

বিদেশি পর্যটকদের জন্য কক্সবাজারে আলাদা জোনিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে মাস্টার প্ল্যানে। তাদের জন্য ফরেইন জোন এবং সার্ফিংয়ের জন্য থাকবে পৃথক ব্যবস্থা। থাকবে সার্ফ ট্রেনিং সেন্টারও।

মেরিন বিচের পাশে নির্মিত হবে অ্যাকুরিয়াম। সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণ থাকবে।

বিমানবন্দর-বাস টার্মিনাল থেকে শুরু পর্যটনসেবা

কক্সবাজার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও বিমানবন্দরে যাত্রীসেবার মান বাড়ানো এবং ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের পরিকল্পনা থাকবে মাস্টার প্ল্যানে। প্রয়োজনে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য বিশেষ পর্যটক গাইডের মাধ্যমে নিরাপদ যাতায়াত, ভ্রমণ ও বিনোদন নিশ্চিত করা হবে।

মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম করতে দেওয়া হবে না। কারণ, ইতোমধ্যে কক্সবাজারে অপরিকল্পিতভাবে অনেক কিছু হয়ে গেছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ।

সেন্টমার্টিন ভ্রমণে পর্যটকদের জন্য নৌযানের ব্যবস্থা

মাস্টার প্ল্যানে সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ভারসাম্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কক্সবাজার শহর থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে সরাসরি সেন্টমার্টিন যাতায়াতের জন্য নৌযানের ব্যবস্থা থাকবে। দিনে দু’বার যাতায়াত করবে এসব নৌযান।

কউক জানায়, মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী কক্সবাজারের উন্নয়নমুখী ও পর্যটনবান্ধব সুবিধা-সম্বলিত তথ্যাদি প্রচারের ব্যবস্থা থাকবে।

কক্সবাজারকে ঢেলে সাজানোর মাস্টার প্ল্যানের বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, কক্সবাজারকে একটি আধুনিক ও পরিকল্পিত পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘পর্যটন নগরী কক্সবাজার জেলার মহাপরিকল্পনা’ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ মাস্টার প্ল্যানের অধীন প্রকল্পের প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

প্রকৌশলী লে. কর্নেল মোহাম্মদ আনোয়ার-উল ইসলাম
তিনি বলেন, মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম করতে দেওয়া হবে না। কারণ, ইতোমধ্যে কক্সবাজারে অপরিকল্পিতভাবে অনেক কিছু হয়ে গেছে। আমি দুই বছর আগে যেভাবে পরিকল্পিত নগরী গড়ার ঘোষণা দিয়েছিলাম, আমরা যদি ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান না করতাম তাহলে কক্সবাজারের পরিবেশ আরও নষ্ট হতো।

এ বিষয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকৌশল বিভাগের সদস্য লে. কর্নেল মোহাম্মদ আনোয়ার-উল ইসলাম বলেন, মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী কোথায় টুরিস্ট জোন হবে; কোথায় হোটেল, রিসোর্ট, রেস্ট হাউজ হবে; কোথায় হাসপাতাল, হাউজিং হবে; কোথায় চলাচল সীমিত থাকবে; কোথায় জীববৈচিত্র্য রক্ষার জোন হবে অর্থাৎ কোথায় কী হবে তা ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে উল্লেখ থাকবে।

আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, মাস্টার প্ল্যানে ট্যুরিস্টবান্ধব সবকিছুই থাকবে— বলেন এ প্রকৌশলী।