নবী-রসুলের পরিচয়


মানুষের হেদায়েতের জন্য আল্লাহপাক যেসব মহামানবকে মনোনীত করেছেন, তাদেরকেই ‘নবী-রসুল’ বলা হয়। ‘রসুল’ শব্দের অর্থ প্রেরিত পয়গম্বর। শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহর বিধিবিধান সৃষ্টির নিকট পৌঁছানোর লক্ষ্যে আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত ও প্রেরিত ব্যক্তিকে ‘রসুল’ বলা হয়। রসুল শব্দের বহুবচন রুসুল। কোরআন ও হাদিসে শব্দটি একবচন ও বহুবচন উভয়ভাবেই ব্যবহূত হয়েছে। পক্ষান্তরে নবী বলা হয়, আল্লাহর পক্ষ হতে সত্যস্বপ্ন অথবা ইলহাম অথবা ফেরেশতা প্রেরণের মাধ্যমে যার প্রতি বিশেষ ধরনের ওহি নাজিল হয়েছে এরূপ মনোনীত মহামানবকে নবী বলা হয়।

নবী ও রসুলের মধ্যে প্রার্থক্য এই যে, যেসব পয়গম্বরের প্রতি কিতাব নাজিল করা হয়েছে এবং যাদের নতুন শরিয়ত দেওয়া হয়েছে, তাদের রসুল বলা হয়। আর প্রত্যেক পয়গম্বরকেই নবী বলা হয়, তাকে নতুন কিতাব ও নতুন শরিয়ত দেওয়া হোক বা না হোক। যেসব নবীর প্রতি কিতাব নাজিল হয়নি তারা পূর্ববর্তী রসুলগণের প্রচারিত শরিয়তের অনুসরণ করে দ্বীনের কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, প্রত্যেক রসুলই ন্যায়পরায়ণ, নিষ্পাপ ও তীক্ষবুদ্ধিসম্পন্ন ছিলেন। তারা সবাই ছিলেন আদর্শ মানব। তাদের উন্নত চরিত্রে মানবীয় গুণাবলির পূর্ণ বিকাশ ঘটেছে। তারা নিঃস্বার্থভাবে মানুষের কল্যাণে সাধনা করেছেন। সত্যের প্রচার ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠাই ছিল তাদের ব্রত। তারা যা বলেছেন ও করেছেন সবই আল্লাহর নির্দেশে। নিজ খেয়ালখুশি মতো অথবা স্বীয় স্বার্থসিদ্ধির জন্য কখনো কোনো কিছু করেননি।

নবী-রসুলগণের ওপর ঈমান আনা ফরজ। ইসলামী আকিদা যা আল-কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আমরা তার রসুলগণের মধ্যে কোনো তারতম্য করি না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮৫)। হজরত মোহাম্মদ (সা.) হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ পয়গম্বর। তারপর আর কোনো নবী-রসুল এ পৃথিবীতে আসবেন না। কারণ তার সময়েই দ্বীন পূর্ণতা লাভ করে। উল্লেখ্য যে, নবুয়ত ও রিসালাত একমাত্র আল্লাহপাকের দান। কারো চেষ্টা ও পরিশ্রমের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে এই সত্যটির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, ‘আল্লাহ তার রিসালাতের ভার কার ওপর অর্পণ করবেন, তা তিনিই ভালো জানেন।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১২৪)।

নবী-রসুলগণ সবাই আল্লাহর বান্দা। তাদের কাউকে আল্লাহ বা আল্লাহর পুত্র বলে বিশ্বাস করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কোরআনে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, নিঃসন্দেহে তারা কুফরি করেছে যারা বলেছে, মারিয়ম পুত্র মসীহই আল্লাহ। অথচ মসীহ বলেছেন, ‘হে বনি ইসরাইল! আল্লাহর বন্দেগি কর, যিনি আমার রব এবং তোমাদেরও রব! যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করেছে তার ওপর আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার আবাসন জাহান্নাম। আর এ ধরনের জালেমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা : আল-মায়েদা, আয়াত : ৭২)।