পর্যটন শিল্পে কক্সবাজারের বিকল্প নেই

সৈয়দুল কাদের •

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের ঢল নেমেছে। ঈদের পঞ্চম দিন শুক্রবার সকাল থেকে সৈকতে পর্যটকের ঢল নামে। ঈদের পরের দিন থেকে পর্যটকের আগমন কম থাকলেও পঞ্চম দিনে এসে পাল্টেগেছে দৃশ্যপট। সেই চিরচেনা চেহেরায় ফিরেছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।

বিপুল পর্যটকের উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভরে গেছে বিশ্বের দীর্ঘতম বালুকাময় এই সৈকত। তীব্র গরম উপেক্ষা করে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের ঢল নামে।

পর্যটকরা সমুদ্রের উত্তাল রূপ ও গর্জন উপভোগ করছেন। সেন্টমার্টিনে পর্যটক না যাওয়ায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এখন পরিপুর্ণ। পর্যটকদের যথাযত সেবা দিচ্ছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

বেলা ১১টায় শহরের কলাতলী, লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা এলাকার অসংখ্য হোটেল, গেস্টহাউস ও কটেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি হোটেলেই পর্যটকে পরিপুর্ণ। অধিকাংশ কক্ষই ১৬ তারিখ পর্যন্ত অগ্রীম বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটক টানতে হোটেল-গেস্ট হাউসগুলোতে কক্ষ ভাড়ায় সন্তোষজনক ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কক্সবাজারে অন্তত এই মৌসুমে পর্যটক কম আসবে এমন ধারণা করেছিলেন হোটেল-মোটেল ও গেষ্ট হাউজের মালিকরা। ঈদের পরের দিন তেমন পর্যটক না আসায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বৃহস্পতিবার থেকে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। এতে সংশ্লিষ্টরা আগত পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

ঢাকা থেকে আগত পর্যটক গোলাম মাওলা জানিয়েছেন কক্সবাজারের বিকল্প নেই। সেন্টমার্টিন যাওয়া না হওয়ায় কক্সবাজারে আরো দুইদিন বেশী থাকব।

কোন প্রকার হয়রানি না থাকায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন এভাবে সুশৃঙ্খল থাকলে পর্যটকের সংখ্যা আরো বাড়বে। দুইদিন যাবত কোন সমস্যা হয়নি। হোটেল রুমের ভাড়াও তেমন বেশী নেননি। ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে। রেস্টুরেন্টগুলোতেও কোন বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে না।

ফেনী থেকে আগত পর্যটক লেয়াকত আলী ও উম্মে হায়াত মিলি দম্পতি জানিয়েছেন, প্রতি বছর কক্সবাজার আসা হয় অন্তত দুইবার। কক্সবাজার ঘুরতে আসার মজাই আলাদা। তাই বৃহস্পতিবার এসেছি এক সপ্তাহের জন্য। তবে এবারের দৃশ্যপট বিগত যেকোন সময়ের চাইতে ভাল। গাড়ি ভাড়া, হোটেল ভাড়া ও রেস্টুরেন্টের বিল নিয়ে কোন সমস্যা নেই। এখন পর্যটকদের সেবার মান আগের চাইতে অনেক বেড়েছে।

কক্সবাজার কলাতলী-মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, সব মিলিয়ে ১৭ জুলাই ঈদের সাত দিনের ছুটিতে কক্সবাজারে ভ্রমণে আসছেন অন্তত তিন লাখ পর্যটক।

ইতিমধ্যে শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেলে অধিকাংশ কক্ষ আগেই ভাড়া হয়ে গেছে। আমরা সার্বক্ষণিক তদারকিতে আছি যাতে কোন পর্যটক হয়রানির শিকার না হয়। আমরা পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

জানা যায়, এই মৌসুমের জন্য হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজ মালিক সমিতি পূর্ব থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া ব্যবস্থা করেছেন। করোনা বেড়ে যাওয়া, সিলেটের বন্যা ও পদ্ম সেতু উদ্বোধন হওয়ায় কিছু পর্যটক কুয়াকাটা মুখী হবে সে আশংকায় ছিলেন সংশ্লিষ্টরা।

বিচকর্মীদের সুপারভাইজার মাহবুবুল আলম জানিয়েছেন, যথেষ্ট লোক এসেছে সমুদ্র সৈকতে। এতে একটি অংশ স্থানীয়। তবে বৃহষ্পতিবার থেকে বাইরের পর্যটক বাড়তে শুরু করেছে। আমরা ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি। আগত পর্যটকদের পানিতে গিয়েও সতর্ক করা হচ্ছে। প্রতিদিন সমুদ্রে অন্তত ৫০ হাজার পর্যটক গোসল করছেন। আমরা বিগত যেকোন সময়ের চাইতে সজাগ রয়েছি।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেন, আগত পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ভ্রমণে আসা পর্যটকের নিরাপত্তা দিচ্ছেন দেড় শতাধিক ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্য।

পর্যটকেরা সৈকতে গোসলের পাশাপাশি মেরিন ড্রাইভ দিয়ে দরিয়ানগর পাহাড়ি ঝরনার হিমছড়ি, পাথুরে সৈকত ইনানী ও পাটোয়ারটেক হয়ে সুদূর টেকনাফ সৈকত ঘুরতে যাচ্ছেন। সবখানে পর্যটকের নিরাপত্তা দিচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। এছাড়া ভ্রাম্যমান একাধিক টীম কাজ করছে।