পুলিশ সুপার মাসুদ হোসেন সাহসিকতায় বিপিএম জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছেন

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন জাতীয় খেতাব বিপিএম (বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল) পুরস্কারে ভূষিত হচ্ছেন। অপরাধ দমনে পুলিশিং অপারেশনে ব্যাপক সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ সাহসিকতা ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে এই জাতীয় পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জেলা পুলিশের মুখপাত্র মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করে এ প্রতিবেদকে মুঠোফোনে বলেছেন-সাহসিকতা ক্যাটাগরিতে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন’কে ইতিমধ্যে বিপিএম প্রদানের জন্য পুলিশ সদর দপ্তেরর জাতীয় জুরিবোর্ড কর্তৃক মনোনীত করা হয়েছে। তিনি জানান, মঙ্গলবার ২৯ জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের সারাদেশের জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রাপ্তদের তালিকা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হবে।

জাতীয় পুলিশ সেবা সপ্তাহ-২০১৯ উপলক্ষে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকাস্থ রাজারবাগ পুলিশ হেডকোর্য়াটারে জাতীয় পুলিশ প্যারেড ও কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহন করার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই অনুষ্ঠানেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই আনুষ্ঠানিকভাবে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন সহ পুলিশের রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তদের এই গৌরবময় সম্মাননা প্রদান করতে পারেন বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন জানিয়েছেন।

তিনি জানান-এ বিশাল অর্জন শুধুমাত্র জেলা পুলিশ বিভাগের জন্য নয়, পুরো কক্সবাজার জেলাবাসীর জন্য এটা বিরাট সম্মান ও মর্যাদার বিষয়। এ বিরল সম্মান একদিকে, কক্সবাজার জেলা পুলিশের নিয়মতান্ত্রিক কর্মে উৎসাহ ও গতিশীলতা বাড়াবে এবং অন্যদিকে, পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা নিঃসন্দেহে অনেক বৃদ্ধি পাবে বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।


পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন কক্সবাজারে যোগদানের পর কক্সবাজারের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হয়। ইয়াবা, মাদক, মানবপাচারকারী, সন্ত্রাসী সহ পেশাদার অপরাধীদের মূর্তিমান আতংক হিসাবে সর্বত্র তাঁর পরিচিতি গড়ে উঠে। সততা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের কারণে পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন গণমানুষের একজন প্রকৃত বন্ধু হিসাবে খ্যাতি অর্জন করে। তাঁর গঠনমূলক কর্মকান্ডে পুলিশ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে ইতিবাচক ধারণা জম্মাতে থাকে। “দুষ্টের দমন-শিষ্টের পালন”-ই যেন পুলিশ বিভাগের কাজ-এই প্রবাদ বাক্যকে অক্ষরে অক্ষরে পালনের নিরন্তর চেষ্টা ছিল তাঁর অবিরাম। কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকার সশস্ত্র জলদস্যুদের মহেশখালীতে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র সমর্পন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার দুঃসাহসিক সাফল্য ছিল পুরো পুলিশ বাহিনীর জন্য এক বিশাল অর্জন। পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেনের কক্সবাজারে গত ৫ মাসের স্বল্পসময় দায়িত্বপালনকালীন সময়ে দৃঢ়চেতা ও সাহসী ভূমিকায় চোরাকারবারের গেটওয়ে হিসাবে পরিচিত এ অন্ঞ্চলের সব ধরণের চোরাকারবারী ও দূষ্কৃতিকারীরা অনেকটা অসহায় ও কোনঠাসা হয়ে পড়ে। তাঁর আপোষহীন ভূমিকায় অপরাধীরা বাধ্য হয়ে অপরাধকর্ম থেকে দূরে সরতে থাকে।

উল্লেখ্য, বিগত সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এ.বি.এম মাসুদ হোসেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার হিসাবে যোগদান করেন। তৎকালীন বিদায়ী পুলিশ সুপার ডঃ এ.কে.এম ইকবাল হোসাইন থেকে তিনি দায়িত্ব গ্রহন করেন। তার আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ অধিশাখার বিগত সালের ৯ সেপ্টেম্বর জারীকৃত এক প্রজ্ঞাপনে ডিএমপি’তে উপ পুলিশ কমিশনার হিসাবে কর্মরত এবিএম মাসুদ হোসাইন (বিপি-৭৫০১০৮১৮৮৮)কে কক্সবাজারের নতুন পুলিশ সুপার হিসাবে নিয়োগ দিয়ে কক্সবাজারের তৎকালীন পুলিশ সুপার ডঃ এ.কে.এম ইকবাল হোসাইনকে টুরিষ্ট পুলিশের পুলিশ সুপার হিসাবে বদলী করা হয়।

বরিশালে জন্মগ্রহণকারী পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন ২৪ তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের নিয়োগপ্রাপ্ত একজন মেধাবী ও চৌকস পুলিশ অফিসার। পুলিশ সদর দপ্তরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (টিআর) পদে দায়িত্বপালনকালীন সময়ে ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর তিনি পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পান। বিগত সালের ১১মার্চ তিনি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (ওয়েলফেয়ার এন্ড ফোর্স) হিসাবে বদলী হয়ে সেখানেও তিনি অত্যন্ত সফলতার সাথে গত ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং তাঁর সহধর্মিনীর নাম জেনিফার মাসুদ। মাসুদ – জেনিফার দম্পতির ইসা ও মুসা নামক দু’জন ফুটফুটে চোখজুড়ানো জমজ পু্ত্রসন্তান রয়েছে।