বাংলাদেশকে জিততে দিলো না হোপের সেঞ্চুরি, সিরিজে সমতা

কি ভীষন হিসেবের অদল-বদল! ম্যাচের বাঁকবদল!

একবার ম্যাচের মোড় ঘুরছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিকে। তো খানিকবাদেই ফের শাসনে বাংলাদেশ। শেষ দশ ওভারে ম্যাচ জিততে উইন্ডিজের প্রয়োজন দাড়ায় ৬৭ রানের। হাতে জমা ৪ উইকেট। ম্যাচ পরিস্থিতি জানায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ সুবিধাজনক অবস্থানে। শেষ ১৮ বলে হিসেব দাড়ালো এমন- উইন্ডিজের চাই ৩২ রান। ম্যাচের বাঁক ফের বদলে গেল বাংলাদেশের দিকে। ১২ বলে প্রয়োজন ২২ রান। এই সময় হিসেবটা ফের উভয় দলের জন্যই সমানে সমান! সেই ওভারেই হিসেব মুলত ‘ফাইনাল’ করে দিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওপেনার সাঁই হোপ। মুস্তাফিজের ওভারে ৩ বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১৬ রান নিলেন সেই ওভারে। শেষ ওভারে ম্যাচ জিততে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে তখন প্রয়োজনটা কেবল আনুষ্ঠানিকতা। সেই আনুষ্ঠানিকতাও দুর্দান্ত কায়দায় পুরো করলেন সাঁই হোপ। অপরাজিত ১৪৬ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে ৪ উইকেটে দলকে জিতিয়ে সিরিজে ফেরালেন।
শুক্রবার সিলেটে সিরিজের শেষ ম্যাচে যে জিতবে সিরিজ তারই।

শেষের হিসেবেই আটকে গেলো বাংলাদেশ। হেরে গেলো ম্যাচ। ব্যাটিংয়ে শেষের ভুলে যেন রান তুলতেই পথ হারালো দল। ইনিংসের শেষ ৫ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছিল মাত্র ২৬ রান। মাশরাফি ও মেহেদি মিরাজের ব্যাটিংয়ে শেষ দুই ওভারে জমা মাত্র ৫ রান! শেষের দিকের এই মিইয়ে পড়া রানের হিসেবেই ম্যাচ হেরে গেলো বাংলাদেশ। একটু জানিয়ে দেই, শেষের ১০.৪ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ রান তুলেছিলো ৭১। এই ম্যাচে তাদের জয়ের কারণ মুলত একটাই; ব্যাটে-বলে সঠিক কায়দায় শেষাংকের হিসেব মেলানো!

মিরপুরের এই উইকেটে ২৫৫ রান খুব কম কোন স্কোর নয়। তবে এই রানকে আরো বাড়ানোর একটা ভাল সুযোগ ছিলো বাংলাদেশের সামনে। সেই সুযোগটাই মিস করলো বাংলাদেশ। আর তাতেই মুলত ম্যাচও মিস!

২৫৫ রানের বাংলাদেশের স্কোরে সাকিব, তামিম ও মুশফিকের হাফসেঞ্চুরি এবং মাহমুদউল্লাহর অবদান ৩০। তবে এই স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের কেউই ইনিংসের শেষ পর্যন্ত ব্যাট করতে পারেননি। সেই ভুলেই স্কোরে ২০/২৫ রানের কম জমা।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওপেনার সাঁই ইনিংস সুচনা করতে এসে শেষ ওভার পর্যন্ত যে টিকে রইলেই তাতেই ম্যাচ জিতলো ক্যারিবীয়রা। তাতেই টিকে রইলো তাদের ওয়ানডে সিরিজের আশা।
মারলন স্যামুয়েলস যতক্ষন উইকেটে ছিলেন তখন পর্যন্ত বেশ ভালভাবেই ম্যাচে ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মুস্তাফিজুর রহমানের দ্বিতীয় স্পেলে নড়বড়ে হয়ে পড়েন স্যামুলয়েস। লম্বা সময় উইকেটে টিকে থাকলেও ফিজের কোনাকুনি ডেলিভারিগুলো সামাল দিতেই পারছিলেন না। বারবার পরাস্ত হচ্ছিলেন। শেষমেষ খোঁচা দিয়ে মুস্তাফিজের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে স্যামুয়েলস যে কায়দায় আউট হলেন, তার বর্ননা এমন হতে পারে-‘নাহ বাপু, আমি তোমার বলে আর পারছি না!’

অন্যপ্রান্ত থেকে রুবেল হোসেনও এই সময় ম্যাচে তার দ্বিতীয় সাফল্য পান। শিমরন হেটমায়ারকে সিঙ্গেল ডিজিটে ফেরান তিনি। দলের দুই পেসারের এই সাফল্যের আলোয় প্রথম দুই স্পেলে বাজে শুরু করা মাশরাফিও যেন অনুপ্রেরণা পেলেন। সেই শক্তিতেই তৃতীয় স্পেলে এসে অধিনায়কও জ্বলে উঠলেন। ফেরালেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক রভম্যান পাওয়েলকে। ৩৪ ওভারে ১৫৭ রানে ৫ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচের মোড় ফের ঘুরে যায় বাংলাদেশের দিকে। কিন্তু ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েও শেষের হিসেব মেলাতেই পারেনি বাংলাদেশ।

মিরপুরে মাশরাফির শেষ আর্ন্তজাতিক ম্যাচটা (সম্ভবত) শেষ হলো হার দিয়েই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ: ২৫৫/৭ (৫০ ওভারে,  তামিম ৫০, লিটন ৮, ইমরুল ০, মুশফিক ৬২, সাকিব ৬৫, মাহমুদউল্লাহ ৩০, সৌম্য ৬, মাশরাফি ৬*, মেহেদি ১০*, অতিরিক্ত ১৮, থমাস ৩/৫৪, বিশু ১/২৭, পাওয়েল ১/৪১)  ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৫৬/৬ (৪৯.৪ ওভারে, হোপ ১৪৬*, ব্রাভো ২৭, স্যামুয়েলস ২৬, হেটমায়ার ১৪, কিমো পল ১৮*, মুস্তাফিজ ২/৬৩, মাশরাফি ১/৫২, রুবেল ২/৫৭)। ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা: সাঁই হোপ।