বান্দরবানের নীলাচল নীলগিরি ও মেঘলা ঝুলন্ত ব্রীজ দৃষ্টি কাড়ছে পর্যটকদের

হুমায়ুন কবির জুশান, বান্দরবান থেকে ফিরে •


প্রাণের ছোঁয়া পাচ্ছে বান্দরবানের সব পর্যটন কেন্দ্র। বিশেষ করে নীলাচল, নীলগিরি ও মেঘলা ঝুলন্ত ব্রীজ দৃষ্টি কাড়ছে পর্যটকদের। প্রকৃতির অপরুপ সৌর্ন্দয যেন ভর করেছে পাহাড়ি এলাকা বান্দরবানে।

সমুদ্র পৃষ্ট থেকে ২ হাজার ৭ শত ফিট উপরে নীলগিরি। নীলাচল পাহাড়ের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ মূহুর্তে হারিয়ে যাবে যে কেউ অন্য জগতে। সেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকলেও মন একটু বিচলিত হবে না কারোও। এক কথায় প্রকৃতি তার সব কিছু উজাড় করে দিয়েছে পাহাড়ি জনপদকে।

উখিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাঈদ মোহাম্মদ আনোয়ার জানান, আমি বান্দরবানের অপরুপ সৌর্ন্দয দেখে অভিভূত। সাধারণ সম্পাদক কমরুদ্দিন মুকুল, সহ-সভাপতি সাইফুর রহিম শাহিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ, অর্থ সম্পাদক সোলতান মাহমুদ চৌধুরী, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক কাজি হুমায়ুন কবির বাচ্চু, নির্বাহী সদস্য ওবাইদুল হক চৌধুরী আবু ও প্রেস ক্লাবের সদস্য জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, এক কথায় অসাধারণ বান্দরবানের পর্যটন স্পটগুলো।

তারা আরো জানান, এখানকার পাহাড়ি কলা ও পেঁপে খেয়ে খুব তৃপ্তি পেয়েছি। ফরমালিনমুক্ত তাজা ফল। নীলাচলে এসে এক অন্ধের গান শুনে আনন্দকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। উখিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আলম বলেন, সরকার পর্যটনের পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। সরকার মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। বান্দরবানে এসে আমারও খুব ভাল লেগেছে।

রাজবাড়ি জেলা থেকে আসা আব্দুস ছালাম বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ভ্রমণ পিপাসু। পাহাড়ি অঞ্চলগুলো বিশ্বের কোন অংশের চেয়ে কম নয়। এখানে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছি। খুব ভাল লাগছে। সরকার পর্যটনের প্রতি অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছে। তিনি মিডিয়াসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।

রাজবাড়ি থেকে আসা ছামি মোহাম্মদ নাবিল জানান, সকল দেশের রাণি সে যে আমার জন্মভূমি। সময় বের করে অল্প খরচের মধ্যে ঘুরে যেথে পারবেন। এখানকার অবস্থা সেই আগের মতন নেই। আগে মানুষ ভয় পেত ডাকাতি বা অপহরণ চলত এখন কিন্তু এসব ব্যাপারগুলো নেই। প্রশাসন এদিকে নজর দিয়েছেন। অনেক ক্লিন আছি আমরা।

তার স্ত্রী নাফিসা মাহবুব বলেন, এখানে এসেছি ঘুরতে। এটি সুন্দর একটি জায়গা। জায়গাটি সুন্দর করে প্রটেক্ট এবং ডেকুরেট করা হয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরো একটু বর্ধন করে দেয় এ ধরণের ডেকুরেশন। এটা তো ফেবোলাস। আমাদের দেশের ভ্রমণ স্থানগুলোর ভেতরে এটা অন্যতম। আমাদের জীবন ব্যস্ত ও যান্ত্রিক হয়ে গেছে। আমরা সকলেই মরণশীল। এতটুকু জীবনের ভেতরে যেটা দরকার জীবনকে উপভোগ করতে গেলে আল্লাহর সৃষ্টিকে দেখে তারই প্রশংসা করতে হবে।

নীলগিরি পাহাড়ে কলা ও পেঁপে বিক্রেতা উপজাতি মুরং পাউরিং চামলেং জানান, আমাদের জীবন অত্যন্ত কষ্টের। ৫ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে ১ মণ বিক্রয় পণ্য মাথায় নিয়ে এই পাহাড়ে বিক্রি করতে আসতে হয়। তার ২ ছেলে। স্বামী বাড়িতে বসে খায় আর স্ত্রীরা কষ্ট করে স্বামীকে খাওয়ায়। এ যেন এক বিচিত্র অনুভুতি। করোনাকালিন সময়ে বান্দরবানে দর্শনীয় পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় এ খাতে প্রায় কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণে নাজেহাল সারা বিশ্ব। এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিরুপ প্রভাব পড়েছে পাহাড়ের সর্বত্র। তাই বান্দরবানে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গত বছরের মার্চের মাঝামাঝি থেকে প্রায় পাঁচ মাস ধরে পর্যটন কেন্দ্র ও পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে পাহাড়ি পর্যটন জেলা বান্দরবানের পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

অবশেষে ২০২০ সালের ২১ আগস্ট থেকে বান্দরবানের সব পর্যটন কেন্দ্র ও আবাসিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসন।