ভোটের আগেই পূর্ণ ব্যালটবাক্স ধরা পড়া চট্টগ্রামের সেই কেন্দ্রের ভোট বাতিল

কালের কণ্ঠ : চট্টগ্রামের শহীদ নগর স্কুল কেন্দ্রে বিবিসি সংবাদদাতার ক্যামেরায় ভোটের আগেই পূর্ণ ব্যালটবাক্স ধরা পড়ার খবর প্রকাশের পর সেই কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হয়েছিল।

ভোটের দিন সংবাদটি প্রচারের পর বেলা ৩টা নাগাদ ঐ কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বাতিল বলে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসে যোগযোগ করা হলে তিনি জানান বিবিসির সংবাদ প্রচারের পর তারা এই ব্যবস্থা নেন।

বিবিসি বাংলার সংবাদ দাতার বর্ণনায় সেদিনের ঘটনা
৩০শে ডিসেম্বর ২০১৮, সময় সকাল সোয়া ৭টা থেকে পৌনে ৮টা – চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের গেটের বাইরে ভোটার এবং রাজনৈতিক দলের কর্মীদের ভিড়।

এমন দৃশ্য বাংলাদেশ মহিলা সমিতি উচ্চ বিদ্যালয়, নারিসারবাদ বয়েজ হাই স্কুল, লালখান বাজারের শহীদ নগর সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ সব কেন্দ্রের সামনে ছিল।

সকাল সকাল ভোট দিয়ে বাড়ি যাবেন, লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হবে না, অথবা প্রাতঃভ্রমণে বের হয়েছেন, ভোট দিয়ে একবারে বাসায় যাবেন – এই ভেবে চট্টগ্রামের অনেক কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরুর আগেই ভোটাররা জড়ো হয়েছেন। অথচ ভোট গ্রহণ শুরু হতে তখনো খানিকটা দেরি আছে।

শহীদ নগর স্কুলের ঘটনা ধরা পড়ে যেভাবে
সকাল ৭টা ৫২মিনিটের দিকে আমি লালখান বাজার এলাকায় যাই।

বিভিন্ন কেন্দ্রের সামনে দেখা ভিড়ের তুলনায় চটগ্রাম-১০ আসনের শহীদ নগর সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে লোকজনের জটলা বেশি মনে হওয়ায় অনেকটা উৎসুক হয়েই ওই কেন্দ্রের সামনে যাই ভোটকেন্দ্রে আসা লোকজনের সাথে কথা বলবো বলে।

যেহেতু এখনো ভোট গ্রহণ শুরু হয়নি তাই ক্যামেরা ট্রাইপড মাইক্রোফোন এসব গাড়িতে রেখে শুধু মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে বের হই। গলায় নির্বাচন কমিশন থেকে দেওয়া আমার পরিচয় পত্রটিও ছিলো, যা দেখিয়ে আমি ভোটকেন্দ্রের ভেতরে সংবাদ সংগ্রহের জন্য যেতে পারি।

গাড়ি থেকে নেমে দেখি ভোটাররা স্কুলের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে, আর রাজনৈতিক দলের কর্মীরা ভেতরে-বাইরে আসা-যাওয়া করছে।

গেটের দিকে যেতেই আমার জন্য তারা গেট খুলে দেন। তারা ধরে নিয়েছেন যে আমিও হয়তো রাজনৈতিক দলের কর্মী।

কেমন ছিলো ভোটকেন্দ্রের ভেতরের অবস্থা?
সময় সকাল ৭টা ৫৪ মিনিট – যেহেতু কয়েক মিনিট পরেই ভোটগ্রহণ শুরু হবে, তাই ব্যালটবক্সগুলো বিভিন্ন বুথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো।

কিন্তু অবাক হয়ে দেখি সবগুলোই ভর্তি! দোতলায় প্রিজাইডিং অফিসারের কক্ষে গিয়ে সেখানেও ব্যালটবক্স ভর্তি দেখতে পাই।

হাতে মোবাইল ফোন ছিলো। আর নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কিছু জায়গা এবং মূহুর্ত ছাড়া সংবাদ সংগ্রহের জন্য ছবি তোলা বা ভিডিও ধারণ করা যাবে না, তাই বিবিসির জন্য মোবাইল ফোনেই ছবি ও ভিডিও ধারণ করি।

পরে এ ব্যাপারে ওই ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে জানতে চাই যে ভোটের আগে ব্যালটবক্স ভর্তি কেন। তবে তিনি এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে পারবেন না বলে জানান। এমনকি কিভাবে এসব ব্যালট বক্স ভর্তি হলো, তাও তিনি জানেন না বলে জানান।

ওই সময় কেন্দ্রের ভেতরে থাকা রাজনৈতিক দলের কর্মীরা বুঝতে পারেন যে তারা কোন রাজনৈতিক কর্মীকে নয়, বরং না জেনে বিবিসির একজন সংবাদদাতাকে তাদের কর্মী ভেবে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দিয়েছেন।

এরপরই তারা আমাকে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।

সংবাদটি প্রচারের পর বেলা ৩টা নাগাদ ঐ কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বাতিল বলে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসে যোগযোগ করা হলে তিনি জানান বিবিসির সংবাদ প্রচারের পর তারা এই ব্যবস্থা নেন।