মন্ত্রিসভায় শেখ হাসিনার ‘ক্যারিশমা’

ডেস্ক রিপোর্ট- নতুন সরকারের মন্ত্রিপরিষদ ঠিক করে নিয়েছে একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করা দল আওয়ামী লীগ। রোববার (৬ জানুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নতুন সরকারের মন্ত্রীদের মন্ত্রণালয় ও বিভাগও বণ্টন করা হয়েছে।

এবারের মন্ত্রিপরিষদে যেমন হেভিওয়েট, প্রবীণ কিংবা বিতর্কিতরা বাদ পড়েছেন তেমনি রয়েছে তারুণ্যের জয়জয়কার। ব্যাপক রদবদল করে মন্ত্রিসভা গঠনে চমক দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় দেশকে এগিয়ে নিতে, নির্বাচনে জনতার ‘ম্যান্ডেন্ট’ পাওয়ার পর তৈরি হওয়া বিপুল প্রত্যাশা পূরণে তরুণ উদ্যমীদের নিয়ে গঠিত এবারের মন্ত্রিসভাকে শেখ হাসিনার ‘ক্যারিশমা’ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

নতুন সরকারের মন্ত্রিপরিষদে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ৪৬ জনকে স্থান দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ২৪ জন পূর্ণমন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিন জন উপমন্ত্রী। এতে বিগত মন্ত্রিসভার ১৬ জন স্থান পেয়েছেন। আর বাকি ৩১ জনই নতুন মুখ।

আগামীকাল সোমবার (৭ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের শপথ পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। বিগত মন্ত্রিসভার ২৫ মন্ত্রী, ৯ প্রতিমন্ত্রী ও ২ উপমন্ত্রী এবারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। এছাড়া বিগত মন্ত্রিসভার জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গত ৩ জানুয়ারি মারা যান।

মন্ত্রিসভায় তারুণ্যের এই উত্থানকে স্বাগত জানাচ্ছেন সর্বমহল। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের এই মন্ত্রিসভায় একদিকে যেমন বির্তকিতরা বাদ পড়েছেন অন্যদিকে তরুণ ও উদ্যমীদের জায়াগা দেওয়া হয়েছে। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে একটি গতিশীল টিম তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে।

জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বার্তা২৪কে বলেন, ‘গণম্যান্ডেট যেটা পেয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট, সেই গণম্যান্ডেটের সাথে যে বিশাল প্রত্যাশা জন্ম হয়েছে সেটাকে বিবেচনায় রেখে তরুণদেরকে বেশি মন্ত্রিসভায় যুক্ত করা হয়েছে।’

‘তারুণ্যের শক্তির উপর বঙ্গবন্ধু নির্ভর করতেন, একইভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যাও এবার তারুণ্যকে নীতি নির্ধারণী জায়গায় স্থান দিয়ে কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনার চেষ্টা করেছেন। টিমটা খুব ভালো হয়েছে। আশা করি মানুষের প্রত্যাশা পূরণে এই কেবিনেট একটি সুসমন্বিত টিম হিসেবে কাজ করবে।’

নুতন সরকারের নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বার্তা২৪কে বলেন, ‘আমাদের সভাপতি শেখ হাসিনা সবসময় তারুণ্য নির্ভর। তার চিন্তাভাবনা তারুণ্যকে নিয়ে। সেজন্য তাকে আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার বলা হয়। তিনি আধুনিকতাকে ধারণ করেন, এবারো ব্যতয় ঘটেনি।’

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানা গেছে, সোমবার শপথ গ্রহণের মধ্যদিয়ে টানা তিনবারের মত প্রধানমন্ত্রী হবেন শেখ হাসিনা। এবার তাঁর অধীনে থাকবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

২৪ জন পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। তারা হলেন-মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে ওবায়দুল কাদের, কৃষি মন্ত্রণালয়ে ড. আবদুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্যমন্ত্রণালয়ে মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আনিসুল হক, অর্থ মন্ত্রণালয়ে আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে মো: তাজুল ইসলাম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দীপু মনি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ.কে আব্দুল মোমেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এম এ মান্নান।

শিল্প মন্ত্রণালয়ে নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে গোলাম দস্তগীর গাজী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে জাহিদ মালেক, খাদ্য মন্ত্রণালয় সাধন চন্দ্র মজুমদার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে টিপু মুনশি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নুরুজ্জামান আহমেদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে শ.ম. রেজাউল করিম।

পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে শাহাব উদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বীর বাহাদুর উশেসিং, ভূমি মন্ত্রণালয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয় নুরুল ইসলাম সুজন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ইয়াফেস ওসমান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় মোস্তফা জব্বার। 

প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ১৯ জন শপথ নেবেন। তারা হলেন- শিল্প মন্ত্রণালয়ে কামাল আহমেদ মজুমদার, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ইমরান আহমদ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে জাহিদ আহসান রাসেল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে নসরুল হামিদ বিপু।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আশরাফ আলী খান খসরু, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে মন্নুজান সুফিয়ান, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রাথমিক শিক্ষা ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জাকির হোসেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে শাহরিয়ার আলম।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে জুনাইদ আহমেদ পলক, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ফরহাদ হোসেন,স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে স্বপন ভট্টাচার্য, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জাহিদ ফারুক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে মুরাদ হাসান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে শরীফ আহমেদ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে কে এম খালিদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে এনামুর রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে মাহবুব আলী এবং ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।

উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে হাবিবুন নাহার, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে একেএম এনামুল হক শামীম ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।