মহারণের অপেক্ষায় : জেলায় হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই

বিশেষ প্রতিবেদক :

আর মাত্র একদিনের অপেক্ষা। একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটযুদ্ধের মাহেন্দ্রক্ষণ ঘনিয়ে এসেছে। গত ২০ দিনের প্রচার লড়াইয়েও আভাস মিলেছে, ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে, সমানে সমান’ লড়াইয়ের। মাসখানেক ধরে চলমান নির্বাচনী উত্তেজনায় সব দলের অংশগ্রহণে এ মহারণে জয়-পরাজয় দেখার প্রতীক্ষায় এখন মুখিয়ে আছে পুরো জেলাবাসী।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা মতে, আজ শুক্রবার সকাল ৮টায় শেষ হয়েছে সব ধরণের প্রচার-প্রচারণা। তাই প্রার্থীরা শেষ মুহুর্তের প্রচারণা গতকাল বৃহস্পতিবার রাতেই শেষ করেছেন। এদিকে ভোট গ্রহণের জন্য প্রশাসন সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন। সুষ্ঠু ও শান্ত পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য আইন-শৃঙ্খল বাহিনী মোতায়েনসহ যাবতীয় প্রস্তুতি হাতেই রয়েছে।

এই নির্বাচনে কক্সবাজার জেলার চার আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা। এর মধ্যে তিন আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং একটি আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে জামায়াত মুখোমুখি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে। এছাড়াও আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিলেও তারা কেউই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেই।

জেলার চার আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইল হবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে কক্সবাজার-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী সালাহ উদ্দীন আহমদের স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমদ এবং চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম। শুরু থেকে নানা উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে এই আসনটি জেলায় বেশ আলোচনায় রয়েছে। শুরুতে দু’প্রার্থী মাঠে নামলেও মাঝপথে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বাধার মুখে বিএনপি প্রার্থী হাসিনা আহমদ শেষ পর্যন্ত প্রচারণা চালাতে পারেননি বলে অভিযোগ তাঁর। তবে এরমধ্যে দু’পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকটি পাল্টাপাল্টি হামলা ঘটনার ঘটে গেছে। তবুও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ হলে এই আসনে তুমুল লড়াই হওয়ার আভাস রয়েছে।

কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন তিন প্রার্থী। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী কারাবন্দী হামিদুর রহমান আযাদ ও ধানের শীষের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর ফরিদ। এই আসনে শুরুতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন- আশেক উল্লাহ রফিক, হামিদুর রহমান আযাদ ও ড. আনসারুল করিম। প্রথমে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে কাগজপত্র জমা দিতে না পারায় আলমগীর ফরিদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছিল। পরে তিনি দীর্ঘ আইনী লড়াই করে ধানের শীষের প্রতীকসহ প্রার্থীতা ফিরে পান। কিন্তু তিনি মাঠে নামার দু’দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে সরে দাঁড়িয়ে আশেক উল্লাহর রফিকের জন্য মাঠে নেমেছেন ড. আনসারুল করিম। শেষ মুহূর্তে তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিন প্রার্থীই শক্তিমান হওয়ায় এই আসনে ভোটে ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার আভাস রয়েছে।

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল। এই আসনে মাত্র এই দু’প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকায় প্রচারণার যুদ্ধ বেশ জমজমাট ছিলো। তবে লুৎফুর রহমান কাজলের প্রচারণায় শুরু থেকে বাধা দেয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এই কারণে দু’পক্ষের মধ্যে কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। দু’প্রার্থীই জাদরেল হওয়ায় এই আসনেও তুমুল ভোটযুদ্ধ হওয়ার আভাস রয়েছে।

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী। তারা হলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির স্ত্রী শাহীন আকতার ও সাবেক চারবারের সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী। ভোটের হিসাবে দু’প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার আভাস রয়েছে। তবে প্রচারণায় অনেক পিছিয়ে ছিলেন শাহজাহান চৌধুরী। তাঁর অভিযোগ, আবদুর রহমান বদি ক্ষমতার প্রভাব কাটিয়ে তাঁর প্রচারণায় মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছেন। মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার ও এলাকাছাড়া করেছেন। সে কারণে তিনি প্রচারনায় পিছিয়ে ছিলেন। তবে ভোটের যুদ্ধে ঠিকই দু’প্রার্থী মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার আভাস রয়েছে।