মহেশখালী থেকে পরীক্ষামূলক গ্যাস সরবরাহ শুরু

মনতোষ বেদজ্ঞ :
মহেশখালীতে স্থাপিত গ্যাস পাইপ লাইন দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে গ্যাস সঞ্চালন শুরু হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর তা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। একদিন যে মাটিতে প্রথম কোদাল বসিয়ে শুরু করেছিল প্রশাসন, সেখানে স্থাপন করা হয়েছে গ্যাস সঞ্চালনের আধুনিক যন্ত্রপাতি।

গতকাল সোমবার রাতে নিজের ফেসবুক পেইজে এ তথ্য জানান জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে গ্যাসের সংকট মোকাবেলায় ২০১০ সালে সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের আওতায় মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। আমদানী করা তরল গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে প্রথমে ভাসমান টার্মিনালে আনা এবং পরে সিএনজিতে রূপান্তরিত করে সারাদেশে সরবরাহের পরিকল্পনা করে সরকার। এই গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালী থেকে চট্টগ্রামের আনোয়ারার মধ্য দিয়ে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হবে। প্রকল্পের অংশ হিসেবে গত ২৪ এপ্রিল বিকেলে তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রথম চালান নিয়ে মহেশখালী উপকূলে ভিড়ে ‘এক্সিলেন্স’ নামের একটি জাহাজ।

যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন এই জাহাজটিতে রয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ঘনমিটার তরল গ্যাস। প্রতিদিন জাহাজে করে ৫’শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আনার পরিকল্পনা নিয়ে প্রাথমিকভাবে কাতার থেকে এলএনজি আমদানীর চুক্তি করে বাংলাদেশ। যার আওতায় মহেশখালিতে পৌঁছে এলএনজি বহনকারী জাহাজ ‘এক্সিলেন্স’। এটি ব্যবহৃত হবে ভাসমান টার্মিনাল হিসেবে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিকে ১৫ বছর ভাড়া দেয়া হলেও এরপর এটি বাংলাদেশ সরকারের মালিকানায় চলে আসবে।

সূত্রমতে, এলএনজি টার্মিনাল থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহের জন্য মহেশখালী থেকে চট্টগ্রামের আনোয়ারা পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।

এদিকে একাধিক উৎস থেকে ‘জি টু জি’ ভিত্তিতে ওমান থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) ক্রয়ের লক্ষ্যে পেট্রোবাংলা এবং ওমান ট্রেডিং কর্পোরেশনের (ওটিআই) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। পেট্রোবাংলার সম্মেলন কক্ষে গত ৬ মে ১০ বছর মেয়াদী এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

চুক্তিতে বলা হয়, দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের বর্তমান চাহিদা ৩ হাজার ৬ শত এমএমসিএফডি। ২০১৮ সালে দৈনিক গ্যাসের উৎপাদনের পরিমাণ ২ হাজার ৭ শত ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এ উন্নীত করা হলেও ২০৪১ সাল নাগাদ সকল সেক্টরের সম্মিলিত গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৮ হাজার এমএমসিএফডি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত গ্যাসের তুলনায় এ চাহিদা অনেক বেশি হওয়ায় এ ঘাটতি পূরণে লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

প্রসঙ্গত, এর আগে এলএনজি টার্মিনালসমূহে প্রতিবছর নূন্যতম ১ দশমিক ৮ হতে ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন হারে এলএনজি সরবরাহের জন্য কাতারের ‘রাসগ্যাস’ এর সাথে ১৫ বছর মেয়াদি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। এই এলএনজি সরবরাহের পরিমাণ হবে ইইবিএল এর টার্মিনাল চালু হওয়া সাপেক্ষে বছরে শূন্য দশমিক ৫ মিলিয়ন টন হারে এবং সামিট এলএনজি টার্মিনাল কো. (প্রাইভেট) লিমিটেড এর টার্মিনাল চালু হওয়া সাপেক্ষে বছরে আরো শূন্য দশমিক ৫ মিলিয়ন টন হারে অর্থাৎ সর্বমোট বছরে ১ মিলিয়ন টন।