রোহিঙ্গাদের পরিচয়পত্রে ‘মিয়ানমারের নাগরিক’ শব্দটি বাদ দিতে বাংলাদেশের সম্মতি

ডেস্ক নিউজ – বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিচয়পত্র থেকে ‘মিয়ানমারের নাগরিক’ শব্দটি মুছে ফেলতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ।  রেডিও সাউথ এশিয়ার খবরে বলা হয়, ‘মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের অনুরোধে কক্সবাজারের আশ্রিত রোহিঙ্গাদের আইডিতে ‘মিয়ানমারের নাগরিক’ শব্দটি বদলে ‘রাখাইনের বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি’ শব্দটি বসাতে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ।

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির অফিসে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলি এবং মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেয়াও তিন্ত সুয়ি’র মধ্যকার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, পরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে শনিবার একটি উচ্চতর প্রতিনিধি দল মিয়ানমারের রাখাইনের মংডু শহর পরিদর্শন করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সফরকারী দলের এক বাংলাদেশি কর্মকর্তা বলেন,‘মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে প্রত্যাবসন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার সময় মিয়ানমার কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের পরিচয় পত্রে ‘মিয়ানমারের নাগরিক’ শব্দটি নিয়ে আপত্তি তোলে। মিয়ানমার জানায়, ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর নেপিডোতে দু’দেশের স্বাক্ষরিত চুক্তিতে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের মিয়ানমারের নাগরিক নয়, রাখাইনে বসবাসরত জনগণ’ বলে সম্বোধন করা হয়েছিল।’ ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আমরা তাদের কথা শুনেছি এবং কক্সবাজারে আশ্রিতদের পরিচয় ‘রাখাইনের বাস্তুচুত ব্যক্তি’ তে পরিবর্তন করতে রাজি হয়েছি।’
সু চির অফিস থেকে বিবৃতিও এই তথ্য জানানো হয়। তবে ঢাকা এই পরিবর্তনের জন্য নতুন পরিচয়পত্র আনবে কি না তা সুস্পষ্ট করে নি। এছাড়া এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ এবং জাতিসংঘের মধ্যে স্বাক্ষরিত ১২ বছরের উর্ধ্বে সব রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নতুন আইডি কার্ড দেয়ার সময় প্রভাব ফেলবে কি না তাও জানা যায় নি।

কক্সবাজারের বালুখালি রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা মোহাম্মদ আফজাল মিয়ানমারের এই সিদ্ধান্তকে ইতিহাসকে মুছে ফেলার চক্রান্ত বলে উল্লেখ করেন। বেনার নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা, আমরা মিয়ানমারের নাগরিক, বাংলাদেশ মিয়ানমারের বাধার মুখে আমাদের রোহিঙ্গা বলে সম্মোধন করছে না। এখন কি তারা আমাদের মিয়ানমারের নাগরিকও বলবে না?
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী বলা হয়। বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির বলেন, ‘ঢাকা রোহিঙ্গাদের আইডি থেকে মিয়ানমারের নাগরিক শব্দটি তুলে নিচ্ছে দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে। এটি কোন বড় ব্যাপার নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল রোহিঙ্গাদের নিরাপদে প্রত্যাবসন।


২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ধর-পাকড় ও নির্যাতনের শিকার হয়ে সাড়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় যা দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ শরণার্থী সংকটের সৃষ্টি করে। এরপর দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রত্যাবসন চুক্তির ৯ মাস হয়ে গেলেও কোন রোহিঙ্গা এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত যায় নি। রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাওয়া ছাড়া তারা বাংলাদেশে ফেরত যাবেন না। বেনার নিউজ, রেডিও ফ্রি এশিয়া।