রোহিঙ্গাবান্ধব ৫১ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন

মাহাবুবুর রহমান :


স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে কক্সবাজারে প্রশাসনের নিকট পাঠানো রোহিঙ্গাবান্ধব ৫১ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানূগ ব্যবস্থা না নেয়ায় রোহিঙ্গারা ভোটার তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভূক্ত করে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ইতোপূর্বে উচ্চ মহল থেকে প্রেরিত ওই তালিকায় স্থানীয় সংসদ সদস্য, চেয়ারম্যান-মেম্বার, রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম থাকায় রোহিঙ্গা বান্ধব ওই ৫১ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণার্থে পাঠানো নির্দেশনাটি ফাইল চাপা পড়ে রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এতো কড়াকড়ি সত্বেও রোহিঙ্গারা জাতীয় পরিচয়পত্র পায় কি করে? এই প্রশ্ন খোদ কমিশনের।

জানা যায়, রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে দেয়ার ইস্যুর কাজে জড়িত রয়েছে পুরনো রোহিঙ্গা নেতাসহ স্থানীয় একাধিক দালাল। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক গঠিত তদন্ত টীম তাদের বিরুদ্ধে সরেজমিনে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের আগে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে জাতীয় সনদ হাতে পেয়েছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় ভোটার তালিকাভূক্ত হয়েছে। ওইসব রোহিঙ্গা নিজেদের বাংলাদেশী নাগরিক দাবী করছে। যেমনটি দাবী করছে ক্যাম্পের বাইরে থাকা জাতীয় সনদধারী ১০ হাজার রোহিঙ্গা। তারা নিজেদের নামে জমি কিনে দালান কোঠা নির্মাণ শেষে স্থানীয় হিসেবে বসবাস করে চলেছে। এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ বলে মন্তব্য করছেন স্থানীয়রা।
২০১৭ সালে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখালেখির প্রেক্ষিতে তৎকালীন সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে তদন্ত করে জেলার ৫১ জনের একটি তালিকা জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছিল। সেই তালিকা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সেই ফাইলের আর কোন অগ্রগতিই হয়নি।

সূত্র মতে, কক্সবাজার শহরের রুমালিয়াছড়া, তারাবনিয়াছড়া, পাহাড়তলী, পেশকারপাড়া, কলাতলী, সমিতি পাড়া, এলাকায় অন্তত ১০ হাজার রোহিঙ্গা ভোটার তালিকাভূক্ত হয়ে পড়েছে। তারা হাতিয়ে নিয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র। পাহাড়তলী বর্মা পাড়া ও জিয়ানগর এলাকার একাধিক রোহিঙ্গা জানায়, স্থানীয় কয়েকজন নেতার তৎপরতায় পাহাড়তলী, হালিমাপাড়া, বর্মাপাড়া ও জিয়ানগর এলাকায় হাজারো রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এখনো চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে প্রায় সময় রোহিঙ্গা ভোটার হওযার সুযোগ পাচ্ছে বলে জানা গেছে। অনেকে কক্সবাজার থেকে পালিয়ে গিয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে ভোটার হচ্ছে বলেও জানান নির্বাচন অফিসের সংশ্লিষ্টরা।

সূত্রমতে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলার এক ইউনিয়নেই অন্তত ২০০র বেশি রোহিঙ্গা নারী পুরুষের বিয়ে হয়েছে স্হানীয়দের সাথে। হ্নীলা ইউনিয়নের আলীখালী ৮ নং ওয়ার্ডের সৈয়দ আহামদের ছেলে মোহাম্মদ সেলিম বিয়ে করেছে ২৪ নং ক্যাম্পের হাসিনা নামের এক রোহিঙ্গা নারীকে। এছাড়া হ্নীলা ৪ নং ওয়ার্ডের পূর্ব পানখালী এলাকার নুরুল আলমের ছেলে মিজানুর রহমান বিয়ে করেছে জামতলী ক্যাম্পের এক রোহিঙ্গা নারীকে। একই এলাকার স্থানীয় নারী মোঃ হোসন ফকিরের মেয়ে তাসমিনা বিয়ে করেছে রোহিঙ্গা যুবককে বর্তমানে সে সৌদি প্রবাসী বলে জানা গেছে।

হ্নীলা ৭ নং ওয়ার্ডের দুদুমিয়ার ছেলে মোঃ রাসেল বিয়ে করেছে হ্নীলা ২৫ নং ক্যাম্পের পাইক মনি নামের এক রোহিঙ্গা মেয়েকে। এছাড়া ৪ নং ওয়ার্ডের নুর মোহাম্মদের ছেলে রফিকও রোহিঙ্গা নারী বিয়ে করেছে, একই ওয়ার্ডের পশ্চিম পানখালীর সোলতান আহামদের ছেলে লুৎফুর রহমান, দিল মোহাম্মদের ছেলে মোহাম্মদ রাসেল, ৫ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম সিকদার পাড়ার হাজী কালা মিয়ার পুত্র কামাল হোসেন, ৮ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম পানখালীর আবুল কালামের ছেলে আলমগীর, এছাড়া স্থানীয় আমির হোসেন সরওয়ারসহ অনেকের আশ্রয়ে রয়েছে অসংখ্য রোহিঙ্গা। কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে রোহিঙ্গারা।

শুধু নতুন আসা নয় পুরাতন এবং আগে আসা রোহিঙ্গা রয়েছে জেলার বেশির ভাগ এলাকায়। শহরের পাহাড়তলী এলাকায় আগে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অন্যতম সাইফুল খলিফা (হালিমা পাড়া) কামাল ফকিরের ছেলে আবদুল্লাহ এবং তার পুরু পরিবার, রহমত উল্লাহ (টমটম চালক) তার এক ছেলে বর্তমানে চট্টগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং স্ত্রী মহেশখালী থেকে ভোটার হয়েছে, আবদুল মালেক (হালিমা পাড়া) এনায়েত উল্লাহ,(হালিমা পাড়া) ফয়েজ উল্লাহ (রোহিঙ্গা হয়েও ভোটার আইডি করায় জেল খেটেছে ) মৌলবী নুরুল হোসাইন, মৌলবী আহমদ কবির (এনজিও কর্মকর্তা), আবুল হোসেন পেটান, তার ভাই হাসান, নুর বাহার স্বামী আসাদ উল্লাহ (মালয়েশিয়া প্রবাসী) সত্তরঘোনা, জাহেদ হোসেন নতুন বাজার পাহাড়তলী, শওকত মিস্ত্রি, সত্তরঘোনা, হাফেজ আহামদ (জেল ফেরত) সত্তরঘোনা, এছাড়া রোহিঙ্গা হয়েও পরিচয় গোপন রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া এবং এনজিও কর্মকর্তা আজিজ, বাহাদুর মিয়া, হালিমাপাড়া, শাহআলম। এসব রোহিঙ্গারা আবার রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ভাবে ভুয়া সনদ এবং ভিন্ন জেলা থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ করে ঢাকা চট্টগ্রামে পড়ার সুযোগ করে দেয় আবার তাদের মুল পৃষ্টপোষক হচ্ছে রোহিঙ্গা ইব্রাহিম যে রোহিঙ্গা পরিচয় গোপন করে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে পড়েছে। এছাড়া মৌলবী ফারুক, মৌলবী নুর মোহাম্মদ, অজি উল্লাহ, ছৈয়দ আমিন, হাসিম উল্লাহ রোহিঙ্গা হয়েও পাহাড়তলী এলাকায় দাপটের সাথে বিচরণ করে এবং নানান অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। এছাড়া বৃহত্তর পাহাড়তলী এলাকার সূপরিচিত রোহিঙ্গা জহির হাজী, বশির মাঝি (বর্তমানে কয়েকটি দোকানের মালিক) পাহাড়তলী ইসুলুঘোনার মৃত হাবিব উল্লাহর ছেলে আরিফ উল্লাহ, ইয়াবা ব্যবসায়ি নুর মোহাম্মদ, হাফেজ আহামদের স্ত্রী সনজিদা (বর্তমানে গোলদিঘির পাড় এলাকা থেকে ভোটার হয়েছে) আবদুল মতলব প্রকাশ আমির সাব (বায়তুশ শরফ হোস্টেলের বাবুর্চী, সিরাজুল হক মাঝি (ইসুলুঘোনা) তার ছেলে ইয়াবা ব্যবসায়ি মনজুর আলম, মোহাম্মদ আরিফ (বেশ কয়েকটি ইয়াবা মামলার আসামী) আবদুল হাকিম মাঝির ছেলে মোঃ শফি, বশির প্রকাশ শুটকি বশির রোহিঙ্গা। বর্তমানে সৌদি প্রবাসী নুরুল ইসলাম পিতা ইয়াকুব আলী, মাতা মাহমুদা খাতুন, ঈদগাঁও ইসলামপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ভোটার হিসাবে পাসপোর্ট করেছে যার পাসপোর্ট নাম্বার বি কিউ ০০৭১৮৪৬১।

বর্তমানে মালয়েশিয়া প্রবাসী পাহাড়তলী সত্তর ঘোনার বাসিন্দা জমির হোসাইন পিতা আলী হোসাইন মাতা মোস্তফা খাতুন স্ত্রী ছমুদা খাতুন, যার পাসপোর্ট নাম্বার এ ই ০১৮৯৪০২। একই এলাকায় থাকা রোহিঙ্গা হলেও পাসপোর্ট পেয়েছে মোহাম্মদ ইউচুপ পিতা আবদু শুক্কর মাতা জামরুপ বেগম, স্ত্রী রাজিয়া বেগম পাসপোর্ট নাম্বার এ ই্ ৬১৮৮২৬৩।

এদিকে শহরের উত্তর রুমালিয়ারছড়ার গুদারপাড়া এলাকার স্বীকৃত রোহিঙ্গা গোলাম হেসেনের ছেলে আসাদ উল্লাহ সহ কয়েক ভাই রয়েছে যাদের অনেকের আইডি কার্ড করতে না পারায় অনেকদিন বিপুল টাকা নিয়ে ঘুরাঘুরি করেছিল।
বর্তমানে মায়ামনার থেকে আসা তাদের পুরাতন আত্বীয় স্বজন প্রায় সময় তাদের বাড়িতে আসে বলে জানান এলাকাবাসী। এছাড়া তাদের ছেলেমেয়েরা অনেকে বর্তমানে এনজিওতে চাকরী করে। পৌর এলাকার ৯ নং ওয়ার্ডের বাদশাঘোনা এলাকার সিরাজুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম, আমিন, নজির আহামদের পুরু পরিবার, হাফেজ মনির, ছৈয়দুল আমিন, শফিক মিস্ত্রি, নেছারু সহ অসংখ্য রোহিঙ্গা এসে এখানে বসবাস করছে তারা এখন নানানভাবে সমাজপতি সহ নানান পদ দখল করে বসে আছে।

বৈদ্যঘোনা এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নতুন অনেকে এসেছে তবে আগে এসে বর্তমানে স্থানীয় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া রোহিঙ্গার মধ্যে অন্যতম আশরাফ আলী খলিফা, নুর মোহাম্মদ মিস্ত্রি, জাহেদের বাপ হুন্ডি ব্যবসায়ি মালয়েশিয়ার দালাল ছিল, শফি খাজা মঞ্জিল এরা বেশ কয়েক ভাই আছে যারা প্রত্যেকে এখন স্থানীয় হিসাবে দাপটে বেড়ায়। জকরিয়া সওদাগর, নজির আহামদ লেবার। খুরুশকুল হামজার ডেইল এলাকা খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আগে আসা রোহিঙ্গা যারা এখন স্থানীয় হিসাবে প্রতিষ্টিত হয়ে গেছে মোঃ কালু, ইউচুপ, আবদুল হাকিম, ইউচুপ আলী, কালাবদা, সোনামিয়া, মোঃ দিলু, আনোয়ার হোসেন, আবদস ছবি, ছলিম উল্লাহ, মোঃ ছৈয়দ, নুর হোসেন, আবুল হোসেন, জাহেদ (লামাঝি পাড়া) হাফেজ আহামদ, আবুল হোসেন, নজির হোসেন, সলিম (লামাঝিপাড়া) জুবায়ের কুনারপাড়ার। এ ব্যপারে কক্সবাজারের নির্বাচন অফিসার মোঃ শাহাদাৎ হোসেন বলেন,৫১ জন রোহিঙ্গা বান্ধব ব্যাক্তির তালিকার কথা আমার জানা নেই। এখন আমি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

অতীতে অনেক রোহিঙ্গা নানানভাবে বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছিল আমরা অনেকের আইডি বাতিল করেছি, মামলা হয়েছে জেলে গেছে। এখন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য সহ অভিযোগ দিলে আমরা সেই আইডি কার্ড বাতিল করার জন্য কাজ করবো। সবার আগে আমার দেশ তাই কোনভাবেই রোহিঙ্গাদের প্রশ্রয় দেওয়া উচিত হবে না। /ডেইলি কক্সবাজার