রোহিঙ্গা-ইয়াবায় বাড়ছে জননিরাপত্তা ঝুঁকি!

পিএন২৪ ডেস্ক : প্রতিদিনই বাড়ছে কক্সবাজার-টেকনাফ সীমান্তবর্তী এলাকার আভ্যন্তরীণ জননিরাপত্তা ঝুঁকি। দশ লাখের বেশি শরণার্থী রোহিঙ্গার চাপ এবং রোজই লক্ষ লক্ষ পিস ইয়াবার চালানের তোড়ে ভেঙে পড়ছে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশে  স্বাভাবিক জনজীবন।

‘স্থানীয় মানুষের চেয়ে বহিরাগতের সংখ্যা কোনও এলাকায় বেড়ে গেলে নানা রকমের ঝুঁকি সৃষ্টি হবেই। কক্সবাজার অঞ্চলে এখন তেমনই হচ্ছে,’ বলেন স্থানীয় কলেজ শিক্ষক মোকাররম হোসেন।

তার মতে, ‘এতো লোকের ভিড়ে কাজ করছে সুযোগ-সন্ধানী মতলববাজরা। মাদক ও অন্যান্য অপরাধের মাধ্যমে তারা সৃষ্টি করছে নিরাপত্তার সমস্যা।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুজন নিজ এলাকা সীমান্তবর্তী উখিয়া ঘুরে এসে বলেন, ‘চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে স্থানীয়রা ও শরণার্থীরা দিন কাটাচ্ছে। নানা ধরনের বৈধ-অবৈধ পেশায় লোকজন জড়িয়ে পড়ছে। ইয়াবা ও অন্যান্য মাদকের বিপুল সরবরাহই প্রমাণ করে, এতে বহু লোক জড়িত।’

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শরণার্থী-উপদ্রুত এলাকায় বর্তমানে কয়েকটি সমস্যা প্রকট হয়ে নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে। এর মধ্যে স্থানীয়-শরণার্থী দ্বন্দ্ব-সংঘাত অন্যতম। উভয় পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছাড়াও প্রায়ই মারপিট ও সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।

আরও জানা যাচ্ছে, বেঁচে থাকার জন্য শরণার্থীরা অবৈধ ও বিপজ্জনক পেশা বেছে নিচ্ছে। মাদক, দেহব্যবসা, মানবপাচার এসবের মধ্যে প্রধান।

সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, মাদকের পাশাপাশি অস্ত্র ও অন্যান্য বিপজ্জনক পণ্যের চোরাচালান এবং লেনদেন এ অঞ্চলে বৃদ্ধি পেলে চরম নিরাপত্তা ঝুঁকির সৃষ্টি হবে।

শরণার্থীবহুল সীমান্ত এলাকায় কর্মরত কয়েকটি এনজিও’র প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিদ্যমান পরিস্থিতি স্থানীয় জনগণের স্বাভাবিক জীবন-যাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। স্কুল-কলেজের ছাত্রদের পাঠ্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তারা শরণার্থী সম্পর্কিত নানা পাঠ্য-বহির্ভূত কাজে জড়াচ্ছে।

বিশেষ করে, স্থানীয় বেকার ও উঠতি বয়সের তরুণরা ক্যাম্পের মেয়েদের সঙ্গে প্রেম বা দৈহিক সম্পর্কে জড়িত হওয়ায় নানা জটিলতা ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এনজিওর কাজে এবং অন্যান্য কাজে আগত হাজার খানেক কর্মচারীর কেউ কেউ শরণার্থী পরিবারের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করায় পরিস্থিতি স্পর্শকাতর হয়ে উঠছে।

একটি দায়িত্বশীল সূত্র ইয়াবা ও মাদক পাচারের নেপথ্যে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী শক্তির তৎপরতাকে দায়ী করে বলেছে, ‘আশ্রয় গ্রহণকারী উদ্বাস্তু ব্যক্তি ও পরিবারকে চাপ ও প্রলোভন দিয়ে নানা অপকর্মে ব্যবহার করা হচ্ছে।’

কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের পেশাজীবী শ্রেণির কয়েক জন প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, সংঘাতময় উপদ্রুত এলাকায় চোরাচালান ও অপরাধ কমার বদলে বাড়ে। কারণ, সকলেই দুর্যোগ মোকাবেলায় মনোযোগী থাকেন বলে স্বাভাবিক আইন-শৃঙ্খলা ও নজরদারি শ্লথ হয়। আর এ সুযোগটাই লুফে  নেয় অপরাধীচক্র।

আফগানিস্তান, সিরিয়ার উদাহরণ টেনে তারা বলেন, ‘সেখানে চরম মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যেও আফিম বা অস্ত্র চোরাকারবার বন্ধ নেই। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত এলাকাতেও শরণার্থী সমস্যার ভেতর দিয়ে চলছে অপরাধমূলক নানা তৎপরতা এবং দিনে দিনে বাড়ছে বিভিন্ন রকমের জননিরাপত্তার ঝুঁকি।’

অভিজ্ঞ মহলের মতে, ক্রমবর্ধমান জননিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করা না হলে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বিশাল সীমান্ত এলাকায় অচিরেই চরম সামাজিক অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতার উদ্ভব হতে পারে।