শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের সরাতে এবার খালে ব্রিজ করছে মিয়ানমার

সুজাউদ্দিন রুবেল :
“মিয়ানমারের উদ্দেশ্য হচ্ছে শূণ্যরেখায় থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেয়া। এজন্য তুমব্রু খালে ব্রিজের নামে বাঁধ করছে মিয়ানমার। খালের উপর এ ব্রিজ হলে স্থানীয়দের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হবে। বর্ষা মৌসুমে খালের পানি আটকে গিয়ে কৃষি জমি ও কোনারপাড়া পুরো এলাকা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে যাবে। এছাড়াও শূণ্যরেখা রোহিঙ্গারাও পানিতে ভেসে যাবে।”
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ঘুমধুম ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কৃষক নুরুল কবির এভাবে খালের উপর ব্রিজ নির্মাণ করলে যে ক্ষতি হবে তা প্রতিবেদককে ব্যাখ্যা করছিলেন।
শুধু কৃষক নুরুল কবির নয়; একই এলাকার কৃষক হামিদ ও সিরাজুল ইসলাম এর মুখে একই কথা। তারাও বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে এই ব্রিজটি হলে বর্ষা মৌসুমে স্থানীয় চাষীদের ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
মিয়ানমারের সব দৃষ্টি যেন বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায়। যেখানে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট নির্যাতনের পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার রোহিঙ্গা। আর এসব রোহিঙ্গাদের সরাতে বার বার নানা অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার। এরজন্য সীমান্তের দেশটির অভ্যন্তরে ঘন ঘন গুলিবর্ষণ, অস্ত্র উঁচিয়ে হুমকি, রাতে কাঁটাতার ঘেঁষে অতিরিক্ত সৈন্যসমাবেশ ঘটানো হচ্ছে। তারপরও নিজদেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া ছাড়া শূণ্যরেখা ছাড়তে রাজি নন রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গারা দাবি; এবার শূণ্যরেখা থেকে তাদের সরাতে নতুন পাঁয়তারা শুরু করেছে মিয়ানমার। যার কারণে তুমব্রু খালে নতুন করে তৈরি করছে ব্রীজ। এ ব্রীজ নির্মাণ হলে খালে পানির স্বাভাবিক চলাচল বিঘœ ঘটবে এবং বর্ষা মৌসুমে শূণ্যরেখা, বাংলাদেশের অভ্যন্তরের কোনারপাড়াসহ কৃষি জমি পানিতে তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হবে।
রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বৌদ্ধ, আরাকান আর্মি ও সেনাবাহিনী যুদ্ধ চলছে। এটা জন্য আমরা রোহিঙ্গা নাকি দায়ী মিয়ানমার বলছে। এই জন্য আমরা জিরো পয়েন্টে যে রোহিঙ্গারা রয়েছে তারা খুবই আতংকিত। আর সোমবার সকালে মংডুর টাউন শিপের প্রশাসক বলেছে; এখান থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়েছি। এখন আরও যেসব রোহিঙ্গা মংডুর টাউন শিপে রয়েছে তাদের হত্যা কিংবা নির্যাতন করে তাড়ানোর জন্য পুনরায় সেনাবাহিনীকে ডাকা হয়েছে।
জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেয়া আরেক রোহিঙ্গা নুর আলম বলেন, প্রতিদিনই গুলিবর্ষণ করা হচ্ছে। আর ১০টি অধিক ক্যাম্প করেছে বিজিপি। তারপরও রাতে তার কাঁটা পাশে এসে দাড়িয়ে থাকে সেনা বাহিনী। নতুন করে তৈরি করছে বাংকার। এতে আমরা আতংকিত।
তিনি আরও বলেন, জিরো পয়েন্টে যে খালটি রয়েছে সে খালটিতে নতুন করে ব্রিজ তৈরি করছে মিয়ানমার। এ ব্রিজ নির্মাণ হলে জিরো পয়েন্টে রোহিঙ্গারা থাকতে পারবে না। এছাড়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনারপাড়া লোকজনও থাকতে পারবে না। কারণ বর্ষা মৌসুমে পানিতে তলিয়ে যাবে এই ব্রিজের কারণে।
তবে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, খালে নতুন করে ব্রীজ নির্মাণের বিষয়টি নজরে এসেছে। এব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে।
তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাকে চিকিৎসাসহ মানবিক সহায়তা দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন, বিজিবি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা রেড ক্রস।