সরকারি টাকায় কক্সবাজার ভ্রমণে ইউএনওসহ সবাই

ডেস্ক রিপোর্ট •

সরকারি টাকা উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় না করে কক্সবাজারে প্রমোদভ্রমণে ব্যয়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ভ্রমণে ইউএনও, ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্যসচিব ও সদস্যসহ অন্তত ৩০০ জন। উপজেলা পর্যায়ের সব কর্মকর্তা ও পরিষদের সদস্যরা পাঁচ দিনব্যাপী এ ভ্রমণের আয়োজন করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঁচ দিনব্যাপী কক্সবাজার ভ্রমণের ব্যয় মেটানো হয় স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করের ইউনিয়ন পরিষদ অংশের ১ শতাংশ টাকা উত্তোলন করে। ঘটনাটি ঘটেছে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায়। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক অলিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওই টাকায় ভ্রমণের কোনো বিধান নেই। এমনটা হয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 ওই টাকায় ভ্রমণের কোনো বিধান নেই। এমনটা হয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

অলিউর রহমান, জেলা প্রশাসক, গাইবান্ধা

উপজেলা পরিষদের কক্সবাজার ভ্রমণসূচি ঘেঁটে দেখা যায়, ১ মার্চ বেলা আড়াইটায় গোবিন্দগঞ্জ থেকে বাসযাত্রা শুরু হয়। ৫ মার্চ সকাল ১০টায় কক্সবাজার থেকে গোবিন্দগঞ্জে ফেরেন তাঁরা।

কক্সবাজারে ভ্রমণে যাওয়া কয়েকজন বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) উপজেলা প্রশাসনের ১৫ কর্মকর্তা, ১১ জন ইউপি চেয়ারম্যান, বেশ কয়েকজন সদস্য ও ইউপি সচিব তাঁদের পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে যান। ৬টি বাসে প্রায় ২৫০ জন এবং বাকি ভিআইপিরা বিমানে কক্সবাজারে যাতায়াত করেন। এ ছাড়া ভাড়া করা একটি ট্রাকে প্রায় ৮ জন বাবুর্চি, ১০টি খাসি ও রান্নার মালামাল নিয়ে যাওয়া হয়। উপজেলা প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা ভ্রমণে গেছেন, তাঁরা হলেন উপজেলা কৃষি, প্রাণিসম্পদ, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, প্রকল্প বাস্তবায়ন, পল্লী উন্নয়ন, মহিলাবিষয়ক, সমবায়, উপজেলা প্রকৌশলী, পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন, সমাজসেবা কর্মকর্তা, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক।

উপজেলার কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, কক্সবাজার ভ্রমণে ১২ জন উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা মাত্র ৬০ হাজার টাকা চাঁদা দেন। এ ছাড়া কারও কাছ থেকে কোনো চাঁদা নেওয়া হয়নি। উপজেলার মোট ১৭টি ইউপির চেয়ারম্যানের কাছ থেকে স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করের ইউনিয়ন পরিষদ অংশের ১ শতাংশের ১৭ লাখ টাকা নেওয়া হয়। কোনো কোনো চেয়ারম্যানের কাছ থেকে বেশি টাকাও নেওয়া হয়। ১৭ লাখ টাকা নেওয়া হলেও ৩০০ জনের পাঁচ দিনব্যাপী যাতায়াত, থাকা-খাওয়া মিলে দ্বিগুণেরও বেশি খরচ হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদ অংশের ১ শতাংশ টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। এ বিষয়ে কক্সবাজারে যাওয়া একজন ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘১ শতাংশ থেকে আমি দেড় লাখ টাকা তুলেছি। এর মধ্যে ১ লাখ ভ্রমণের জন্য দিয়েছি। বাকি টাকা দিয়ে কাজ করব।’ আরেক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি কক্সবাজারে যাইনি। পরিবার নিয়ে ইউপি সদস্যরা গেছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা চাপ দিয়ে আমার কাছে ওই তহবিলের ১ লাখ টাকা নেন। একই মন্তব্য করলেন আরেক ইউপি চেয়ারম্যান।

স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করের ১ শতাংশ হিসাবে প্রাপ্ত অর্থ ব্যয়সংক্রান্ত ২০০৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের জারি করা চিঠিতে বলা হয়, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা ওই টাকা ইউএনও ও উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে আলোচনা করে ইউনিয়নের উন্নয়ন প্রকল্পের তহবিল হিসেবে ব্যবহার করবেন। সে নির্দেশনা অনুযায়ী বনভোজন বা প্রমোদভ্রমণের জন্য টাকা ব্যয়ের কোনো সুযোগ নেই। এ তহবিলের টাকা ইউএনও ও উপজেলা প্রকৌশলীর যৌথ স্বাক্ষরে চেকের মাধ্যমে তোলা হয়ে থাকে।

ইউএনও আরিফ হোসেন কক্সবাজার যাওয়ার কথা স্বীকার করেন। কার টাকায় কক্সবাজার গেছেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সবাই তাঁদের নিজ টাকা দিয়ে গেছেন।

সরকারি টাকায় ভ্রমণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। আমরা তাঁদের বরাদ্দ দিয়ে দিই। তাঁরা কাজ করবেন, আমরা কাজ দেখব। তাঁরা নিজের টাকায় না কোন টাকায় পিকনিকে গেছেন, সেখানে আমার কিছু বলার নেই।’ তিনি বলেন, ১ শতাংশের টাকা গ্রাম পুলিশদের বেতন-ভাতা দেওয়া হয়।

এ ভাতা দেওয়ার পর যা থাকে, তা প্রতি মাসেই ইউপি চেয়ারম্যানদের দেওয়া হয়ে থাকে। তাঁদের প্রকল্পের টাকা দেওয়া হয়েছে, তাঁরা কী করবেন, সেটি তাঁরাই জবাব দেবেন। প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে না পরে টাকা দেওয়ার নিয়ম, জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুটিই হয়, বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ দেখে।