সাদিয়াকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়েছে তার পুলিশ সদস্য স্বামী, দাবি পরিবারের

বরিশাল •

ফাইল ছবি

বরিশালে মেয়েকে স্কুলে রেখে বাসায় এসে নিজ কক্ষে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেননি গৃহবধূ সাদিয়া আক্তার সাথী। স্বামী জেলা ডিবি পুলিশের কনস্টেবল মাইনুল ইসলাম হত্যা করে সাথীকে ঝুলিয়ে রেখে তাদের খবর দিয়েছেন— এমনটিই দাবি করেছে নিহতের পরিবার।

এ ছাড়া সাথীর লাশ উদ্ধারের পর থেকেই পলাতক রয়েছেন কনস্টেবল মাইনুল। হত্যার অভিযোগ এনে মঙ্গলবার বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সাথীর বাবা সিরাজুল হক মৃধা।

অভিযুক্ত মাইনুল ইসলাম পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার উত্তর বাদুরী গ্রামের সোহরাব ফরাজীর ছেলে।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, সাথীর আগে বিয়ে হয়েছিল এবং সেই ঘরে একটি কন্যাসন্তানও আছে। এক বছর আগে উভয়ের সম্মতিতে সাথীর বিয়ে হয় মাইনুলের সঙ্গে। এর পর তারা বরিশালেই বাসা ভাড়া করে থাকতেন। পরে সাথী সাবলেট থাকা শুরু করে। সাথীকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা নিয়েছে মাইনুল। সেই টাকা ফেরত চাওয়ায় নির্যাতন করা হতো এবং আরও ৫০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করত সাথীর কাছে।

এর আগে মাইনুলের নির্যাতনে কয়েকবার সাথী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার নির্যাতন করে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রাখে।

নিহত সাদিয়ার বাবা সিরাজুল হক মৃধা বলেন, সাথী আত্মহত্যা করলে ওর ফ্ল্যাটের দরজা ভেতর থেকে আটকানো থাকার কথা। কিন্তু পুলিশ এবং আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা খোলা পেয়েছি। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড তা স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়। আমি চাই আমার মেয়ে হত্যার সঠিক বিচার হোক। আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি।

তিনি বলেন, সাদিয়া যদি আত্মহত্যা করত, তা হলে তার সন্তানকে স্কুলে দিয়ে আসত কেন? আমার ধারণা, সাইমুনকে স্কুলে দিয়ে এসে বাসায় একা ছিল সাথী। তখন তাকে নির্যাতন করে মারধর করে সিলিংফ্যানের সঙ্গে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে মাইনুল। সাথীর সঙ্গে স্বর্ণালি নামে সাবলেট আরেক মেয়ে থাকত। ঘটনার পর থেকে তাকেও খুঁজে পাচ্ছি না। পুলিশ চেষ্টা করলে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারে।

সাদিয়া সাথীর দুলাভাই বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরে আলম বেপারি জানান, সাদিয়া আক্তার সাথীর আত্মহত্যার কোনো কারণ নেই। কিছু দিন আগে ব্যাংকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মাইনুল ১৩ লাখ টাকা নেয়। কিন্তু পরীক্ষা দেওয়ার পর চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চায় সাথী। প্রথমাবস্থায় ৮ লাখ টাকা ফেরত দিলেও বাকি ৫ লাখ টাকা ফেরত দেয়নি।

পরে ৫০ লাখ টাকা যৌতুকও দাবি করে মাইনুল। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। হত্যাকাণ্ডের আগের দিন ৬ মার্চ মাইনুল বাসায় এসেছিল। সাদিয়ার মেয়ে সাইমুন আমাদের জানিয়েছে, মাইনুল এসে ঝগড়া করে এবং সাদিয়াকে মারধর করে।
তা ছাড়া মাইনুলই আমাদের সবাইকে কল করে জানায়, সাদিয়া আত্মহত্যা করেছে। আমরা চাই ঘটনার সঠিক তদন্ত করা হোক। লাশ উদ্ধারের সময়ে কোতোয়ালি থানার এসআই রেজা সাদিয়ার লেখা একটি ডায়েরি, মোবাইল ফোন নিয়ে গেছেন। সেগুলোতে কি আছে তা আমরা দেখতে চেয়েছি, তা কিছুই দেখায়নি।

লাশ উদ্ধারকারী উপপুলিশ পরিদর্শক রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারি সাথীর স্বামী চাকরি করেন। কিন্তু কিসে চাকরি করেন তা জানতে পারিনি। তবে মঙ্গলবার সকালে জানতে পেরেছি মাইনুল ইসলাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি করেন।

বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আজিমুল করিম বলেন, সাদিয়া আক্তার সাথীর পরিবার তাদের অভিযোগের বিষয়টি আমাদের জানিয়েছে। তবে আমরা অপমৃত্যু মামলা গ্রহণ করেছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। যদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়, তা হলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, সোমবার দুপুরে বরিশাল নগরীর ২০নং ওয়ার্ডের বৈদ্যপাড়ায় ডা. শাহজাহান হোসেনের ভবনের পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে বিসিএস পরীক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার সাথী নামে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। সাদিয়া সাথীর ৮ বছর বয়সি একটি কন্যাসন্তানও রয়েছে। ওই সন্তান তার প্রথম সংসারের। মেয়েকে স্কুলে দিয়ে এসে বাসায় ফেরার পরই তার লাশ উদ্ধার করা হয়।