সুরক্ষার আগেই কক্সবাজারের সর্বত্র ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যবিধি!

জসিম উদ্দীন •


বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করে দেশের মানুষের জন্য করোনার টিকা ব্যবস্থা করেছে সরকার। চেষ্টা করা হচ্ছে সবাইকে টিকার আওতায় এনে করোনার সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে। সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজার জেলাতেও চলমান রয়েছে টিকা কার্যক্রম।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার মানুষ করোনার টিকা নিয়েছে। এর সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

তবে সুরক্ষা নিশ্চিত হওয়ার আগেই দেশের প্রথম রেডজোন চিহ্নিত এলাকা কক্সবাজারের সর্বত্রই ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যবিধি। এতেকরে আবারও করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে এমনটা আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা।

লাখো পর্যটকে মুখরিত পর্যটন নগরী কক্সবাজারে কোথাও স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ববোধের বালাই নেই। এ নিয়ে প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথাও নেই বললে চলে। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে নানান পদেক্ষেপের কথা বলা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটক ও স্থানীয়রা মিলে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক মানুষের আগমন হচ্ছে। ছুটির দিন শুক্রবার-শনিবারে পর্যটকদের সংখ্যা বেড়ে হচ্ছে দ্বিগুণ। হাতেগুণা কয়েকজন পর্যটক ছাড়া কারোই মুখে মাস্ক নেই। সামাজিক দূরত্বের বদলে গা ঘেঁষে একই স্থানে ভিড় করছেন হাজার-হাজার পর্যটক। এছাড়াও সরকারি অফিস,পর্যটন স্পট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ কোথাও স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্বেরও বালাই নেই। মাস্ক ছাড়া সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকরা মাস্ক পড়ার পক্ষে নানান ওজুহাত দেখাচ্ছে।

অন্যদিকে, স্বাস্থ্য বিধি মানার ক্ষেত্রে কক্সবাজারের হোটেল- মোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোতেও আগের মত কড়াকড়ি নেই। একই অবস্থা জেলার সব পর্যটন স্পটগুলোতে।

ঢাকা মালিবাগ থেকে কক্সবাজার ভ্রমণে আসা মো: আশরাফুল বলেন, মাস্ক পড়লে নিজেকে ডাকাত ডাকাত মনে হয়। অনেক দিন মাস্ক পড়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন আর পড়তে ইচ্ছে করে না।

সিলেট থেকে স্ব-পরিবারে আসা আবু নোমান বলেন, মাস্ক পরা জরুরী, তবে ভ্রমণের সময় মাক্স পরলে উপভোগ করা যায় না, ছবিতেও বাজে দেখায়।

ঢাকা মিরপুর থেকে আসা ফারিয়া আক্তার বলেন, মেয়েদের মাস্ক পরা বিব্রতকর। তারমতে মাস্ক পরলে মেকআপ এবং লিপস্টিক নষ্ট হয়ে যায়। করোনা থেকে বাঁচতে মাস্ক ছাড়া অন্যসব মেনে চলেন বলে জানান তিনি। অনেক পর্যটক নারীরাই প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেছেন।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ক্লিনিক্যাল ট্রপিক্যাল মেডিসিন সংক্রামক রোগ, বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির বলেন, জেলায় রোহিঙ্গাসহ ৩৫লাখ মানুষের বসবাস। এ পর্যন্ত ৭০ হাজার মানুষ টিকা গ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। আর ভ্যাকসিন প্রতিরোধে কাজ করছে ৭৫%। দেখা গেছে, ২৫% মানুষের ক্ষেত্রে টিকা কাজ করছে না। কিন্তুূ একটি মাস্ক ৯৫% করোনা প্রতিরোধে সক্ষম, যদি অন্যান্য নির্দেশনা মেনে চলেন।

তিনি বলেন, গত বছর মার্চ মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত টানা তিন মাস করোনা দেশে তাণ্ডব চালিয়েছে। এবারও একই সময়ের মধ্যে করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে বলে মনে হচ্ছে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্য বিধি মানার ক্ষেত্রে আগের অবস্থায় ফিরে যেতে হবে, পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ কক্সবাজারে সর্বত্রই যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে পড়েছে এ অবস্থা চলতে থাকলে ভয়াবহ অবস্থার রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করেন।

কক্সবাজারে দুই শতাধিক করোনা রোগীদের স্বেচ্ছায় সেবা করা বেসরকারি হাসপাতালের ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন বলেন, এভাবে চলতে থাকলে সামনে ভয়াবহ অবস্থা হতে পারে। গত কয়েকদিন ধরে সন্দেহজনক করোনা রোগীর ফোন কল বেড়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে আবারোও করোনার ধাক্কা আসছে।

জানতে চাইলে,ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তার পাশাপাশি, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে প্রতিনিয়ত মাকিংসহ নানান পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সামনে এসব কার্যক্রম আরও জোরালো হবে। তিনি বলেন, সবার উচিত নিজেদের সুরক্ষায় স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে নিজেকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, কক্সবাজারে আসা পর্যটকদের করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সর্বদা সচেতনতামূলক মাইকিং ও প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। একই সাথে পর্যটক হয়রানি বন্ধে মাঠে রয়েছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত।