সৌদিতে প্রবাসীদের অবস্থা ভয়াবহ, গণজমায়েতের শর্ত ভাঙলেই সাজা

অনলাইন ডেস্ক ◑ করোনাভাইরাস সৌদি আরবের মক্কা, মদিনা, রিয়াদ, দাম্মামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশীসহ শতশত সৌদি নাগরিক। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সৌদি সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার পরও কোনোভাবেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। শেষ পর্যন্ত এখন সীমিত আকারে দেয়া হয়েছে কারফিউ। আর আগামী ২৩ থেকে ২৭ মে পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টাই কারফিউ থাকবে। এরপরও সম্প্রতি সামাজিক দূরত্ব মানার ক্ষেত্রে নীতিমালা জারি করে গণজমায়েত নিষিদ্ধ করেছে দেশটির সরকার।

সৌদি সরকারের ৭ মে জারি করা নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রবাসী বাংলাদেশীসহ যারাই নির্দেশ অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে পারিবারিক জমায়েত, সামাজিক জমায়েত, কর্মী জমায়েতসহ ৫টি কারণে ১০ হাজার রিয়াল থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার রিয়াল পর্যন্ত জরিমানা করা হবে।

সম্প্রতি সৌদি আরবের রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রমকল্যাণ উইং থেকে প্রবাসী বাংলাদেশীদের অবহিত ও সচেতন করার লক্ষ্যে জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, নীতিমালায় বর্ণিত নিষিদ্ধ কার্যক্রমসহ এবং নীতিমালার নির্দেশনা অমান্যকারীদের জন্য সাজার মধ্যে পারিবারিক জমায়েতের জন্য (ঘরে, ইন্তেহারায়, মাজরায় একের অধিক পরিবার একত্রিত হওয়া যাবে না) ১০ হাজার রিয়াল, সামাজিক জমায়েতের জন্য (৫ জনের অধিক মানুষ কোনো ঘরে, নির্মাণাধীন বাড়িতে, ইন্তেহারায়, মাজরায়, খিমায়, বিনোদনকেন্দ্রে বা উম্মুক্ত স্থানে একত্রিত হতে পারবে না) ১৫ হাজার রিয়াল, কর্মী (লেবার) জমায়েতের (কোনো শপিং মলের ভেতরে কিংবা বাইরে ৫ এর অধিক ক্রেতা একত্রিত হবে পারবে না) জন্য ৫০ হাজার রিয়াল মাকের্টে (শপিং মলের ভেতরে কিংবা বাইরে ক্রেতা বা মলের কর্মচারী একত্রিত হতে পারবে না) জমায়েত করলে ৫০ হাজার রিয়াল জরিমানা ছাড়াও অন্যান্য (আনন্দানুষ্ঠান, শোক অনুষ্ঠান, সভা সম্মেলন করা জমায়েত হলে ৩০ হাজার রিয়াল জরিমানা গুণতে হবে।

উল্লিখিত জমায়েতে অংশগ্রহণ করলে বা ডেকে নিয়ে গেলে তাকে প্রথমবারের মতো ৫ হাজার রিয়াল জরিমানা করা হবে। পুনরায় অপরাধ করলে ১০ হাজার রিয়াল জরিমানা আর তৃতীয়বার করলে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পাবলিক প্রসিকিউসনে পাঠানো হবে। তাই কোথাও ৫ জনের বেশি প্রবাসীর একত্রিত না হওয়া এবং আড্ডা না দেয়ার জন্য দূতাবাসের শ্রম উইং থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সার্বিক পরিস্থিতি জানতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহের সাথে যোগাযোগ করা হলেও নেটওয়ার্ক সমস্যায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এরআগে বুধবার রাতে সৌদি আরবের রিয়াদের আল কাশিম ডিস্টিকের দিলা-রশীদ এলাকার পৌরসভায় কর্মরত পুরান ঢাকার বাসিন্দা সান মোহাম্মদ শানু নয়া দিগন্তকে সৌদি আরবের সর্বশেষ তথ্য জানিয়ে বলেন, রিয়াদ, মক্কা-মদিনা এলাকায় করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। আজো ১ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি লোক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। সরকার অনেক কড়াকড়ি করছে। বর্তমানে এখানে প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে পরদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত কারফিউ চলছে। শুনেছি আগামী ২৩ মে থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য কারফিউ দেবে সৌদি সরকার। প্রবাসী বাংলাদেশীরা কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকের অবস্থাই ভালো না। আর যারা ফ্রি ভিসায় এসেছে তাদের অবস্থা আরো করুন। তারা পুলিশের ভয়ে ঘর থেকে বেরই হতে পারছে না। বাংলাদেশ থেকে সরকারি ত্রাণ পাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ত্রাণ দেয়ার কোনো খবর এখন পর্যন্ত আমি জানতে পারিনি। গণজমায়েত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ আমরা এটি জেনেছি। ৫ জনের বেশি কেউ জমায়েত হলেই তাদের জরিমানা করা হবে।

দাম্মামের আল জুবাইল ডিস্ট্রিক সিটিতে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশী মহসিন পাটোয়ারী পরিস্থিতি জানিয়ে বলেন, আমাদের দেশের সরকার ত্রাণ দিচ্ছে শুনেছি কিন্তু দাম্মাম এলাকার দূতাবাসের দায়িত্বে থাকা প্রধান ফয়সাল সাহেব ত্রাণ দেয়া তো দূরের কথা তিনি কারো ফোনই তো ধরছেন না। তিনি বলেন, সৌদিরা আগে মসজিদের সামনে এবং ভেতরে ফ্রিজে ফ্রি খাবার রাখত। করোনা ভাইরাসের কারণে গভর্মেন্ট সেই খাবারও তুলে দিয়েছে। মোট কথা আমাদের বাংলাদেশীদের পরিস্থিতি এখন খুবই ভয়াবহ। সামনে যে কী হয়, তা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না। উল্লেখ্য, সৌদি আরবে বৈধ-বৈধ মিলিয়ে প্রায় ২২ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশী অবস্থান করছেন।