সৌন্দর্য হারাচ্ছে কক্সবাজার সৈকতের ঝাউবাগান

বিশেষ প্রতিবেদক •

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের (সেকেন্ড ওয়েভ) সংক্রমণের ঝুঁকি স্বত্ত্বেও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বেড়াতে যাচ্ছেন কক্সবাজারে।

কাকডাকা ভোর থেকে রাত অবধি সমুদ্রতটে দাঁড়িয়ে তীব্র গর্জন শোনা, মুগ্ধনয়নে দিগন্ত বিস্তৃত সাগরের নীল জলরাশি দেখা, দলবেঁধে কিংবা একাকী সমুদ্রের পানিতে সাঁতার কেটে, ভাড়ার ঘোড়া নিয়ে টগবগিয়ে ছুটে চলা কিংবা ইঞ্জিনচালিত স্পিডবোট-মোটরবাইকে ছুটে বেড়ানো ইত্যাদির মাধ্যমে বেড়াতে আসা সময়টুকু উপভোগ করেন পর্যটকরা। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ছাড়াও গাড়ি নিয়ে হিমছড়ি, ইনানী বিচেও কেউ কেউ ঘুরে আসেন।

পর্যটকদের কাছে কক্সবাজারের ঝাউবাগান স্পটটিও বেশ আকর্ষণীয়। প্রাতঃভ্রমণের সময় কিংবা পড়ন্ত বিকেলে বেশ খানিকটা পথ হেঁটে তারা ঝাউবাগান দেখতে যান। কিন্তু সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় সাগরের ঢেউয়ে ক্রমেই বিলীনের পথে ঝাউবাগানটি। এর সৌন্দর্যেও পড়েছে ভাটা।

সম্প্রতি কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ঘুরে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর বর্ষায় সমুদ্রের ঢেউয়ে ঝাউবাগানের গাছগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সমুদ্রের ঢেউয়ের কবল থেকে ঝাউগাছগুলোকে বাঁচাতে সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে ডায়াবেটিক পয়েন্ট পর্যন্ত বালু বোঝাই জিওব্যাগ ফেলে এক ধরনের বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে নির্মিত এই বাঁধ ভাঙন রোধের পাশাপাশি ঝাউগাছগুলোকেও রক্ষা করছে। তবে এখনও বেশকিছু ক্ষতিগ্রস্ত গাছ পড়ে থাকতে গেছে ঝাউবাগানে।

সম্প্রতি রাজধানী থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়া আফজাল হোসেন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘১০-১৫বছর আগে কক্সাবাজারের অন্যতম আকর্ষণীয় স্পট ছিল ঝাউবাগানটি। কিন্তু বর্তমানে অপরিকল্পিতভাবে সমুদ্রতটের কাছে আবাসিক হোটেল ও স্থাপনা নির্মাণের কারণে বাগানটি আর আগের মতো সুন্দর নেই। ঝাউবাগানটি রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন।’

বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২-৭৩ সালে সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে ৫৮৫ হেক্টর জমিতে লাগানো হয় ১৪ লাখেরও বেশি ঝাউগাছ। ইতোমধ্যে সাগরের ঢেউয়ে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় ২৭৪ হেক্টর জমির ৭ লাখ ঝাউগাছ।

কক্সবাজারের ঝাউবাগানটি হুমকির মুখে, এ ব্যাপারে দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, যদিও এটি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে তবুও এ ব্যাপারে তিনি জানেন।

সরকারের পক্ষ থেকে ঝাউবাগানসহ মেরিন ড্রাইভ রোডের অন্যান্য বাগান ও শহর রক্ষায় প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।