ট্রলারে হত্যা করা হয় ১০ জনকে, স্বীকার করেছে দুই আসামি : এসপি

বিশেষ প্রতিবেদক •

কক্সবাজারের নাজিরারটেক উপকূলে ট্রলার থেকে যে ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের হত্যা করা হয়েছিল। এই হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা গ্রেপ্তার দুই আসামি প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন। তবে কী কারণে এই হত্যা, তা এখনও পরিষ্কার হওয়া যায়নি। স্পষ্ট হয়নি নিহত ব্যক্তিদের পেশাও।

মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) বিকালে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ট্রলারমালিক সামশুল আলম প্রকাশের স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা করেছেন।

এজাহারে চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ১ নম্বর আসামি মাতারবাড়ী এলাকার ট্রলারমালিক বাইট্টা কামাল ও ৪ নম্বর আসামি মাঝি করিম সিকদারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করেছে তারা। আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ’ঘটনার কোনো ক্লু এ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে পুলিশ তদন্ত করছে। মামলার স্বার্থে নিহতদের স্বজন, ঘটনায় সংশ্লিষ্ট যাদের নাম পাওয়া যাচ্ছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

গত রবিবার গুরা মিয়া নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি ট্রলার সাগরে ভাসমান থাকা ট্রলারটি নাজিরারটেক উপকূলে নিয়ে আসে। ওই ট্রলারের হিমঘরে হাত-পা বাঁধা ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ট্রলারটির মালিক মহেশখালী উপজেলার ছনখোলাপাড়ার মৃত রফিক উদ্দিনের ছেলে সামশুল আলমের। ১০ জনের সঙ্গে সামশুল আলমের মৃতদেহও পাওয়া যায়।

কক্সবাজার জেলার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া ট্রলারটির গায়ে কোনো নাম ছিল না। ট্রলারটি সমিতির আওতাভুক্তও নয়। সাধারণত জলদস্যুতা বা ডাকাতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ট্রলার এমন হয়।

মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলাপাড়ার রফিক মিয়ার ছেলে সামশুল আলম। তার ট্রলারের মহেশখালী ও চকরিয়া উপজেলার ১৩ জন জেলে নিখোঁজ ছিলেন। ৭ এপ্রিল সামশু মাঝির ট্রলারে করে সাগরে মাছ ধরতে যান মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের পূর্ব আঁধারঘোনা গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে মো. হায়াত। তিনিসহ ছয়জন ১১ এপ্রিল ফিরে আসেন।

ফেরত আসা অপর পাঁচজন হলেন, একই গ্রামের সালাহ আহমদের ছেলে আব্দুল মালেক ও মোহাম্মদ রিদুয়ান, দানু মিয়ার ছেলে আব্দুল মান্নান, আকবর আলীর ছেলে মাহবুব আলম, মো. শরীফের ছেলে নুরুস সামাদ, ছামিরাঘোনা এলাকার আবু জাফরের ছেলে নজরুল ও অফিসপাড়া এলাকার হেলাল উদ্দিন।

ফেরত আসার পর মো. হায়াত জানান, সামশু মাঝির ট্রলারে করে ৭ এপ্রিল সাগরে যান ১৯ জেলে। গভীর সাগরে ৯ এপ্রিল ফিশিং ট্রলারে ডাকাতি করার অভিযোগে মাতারবাড়ী এলাকার বাইট্টা কামাল, একই এলাকার নুর হোসাইন বহদ্দারের মালিকানাধীন দুটি ট্রলার এবং তাদের সঙ্গে থাকা মাতারবাড়ীর আবছার মাঝি ও বাবুল মাঝির ট্রলারসহ আরও ৪-৫টি ফিশিং ট্রলার সামশু মাঝির ট্রলার ধাওয়া করে আটক করে। এ সময় জেলেদের হিমঘরে আটকে রেখে ট্রলারটি ডুবিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন ওই ট্রলারের জেলেরা।

এ তথ্য ছয় জেলে কীভাবে জেনেছেন এবং মাতারবাড়ীর যে চার ট্রলারমালিক ও মাঝির কথা এসেছে তারা কারা, এমন প্রশ্নের উত্তরও খুঁজছে পুলিশ।

এসপি জানান, নানাভাবে নানা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সব বিবেচনা করে মামলার তদন্ত চলছে। এ ঘটনার রহস্য বের করতে পুলিশের পাঁচটি দল কাজ করছে। এরই মধ্যে নুরুল কবির ও সামশু মাঝির বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও হত্যা মামলা পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে এমন কয়েকজন পাওয়া গেছে যারা জীবনে কখনও সাগরে যাননি বলে স্বজনরা দাবি করছেন। নুরুল কবির (নিহতদের মধ্যে একজন) তাদের ডেকে সাগরে নিয়ে গেছে। আর নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও ডাকাতির মামলার তথ্য রয়েছে। সব বিবেচনায় মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলছে। এর বাইরে মাদকসংক্রান্ত একটি বিষয়ও সামনে এসেছে। এটিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

এদিকে ছয়জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করলেও মর্গে রয়ে গেছে চারজনের মরদেহ। ডিএনএ পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে তাদের পরিচয়। তবে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে এ চারজন হলেন, শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম, সাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ, মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ, চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের কবির হোসাইনের ছেলে সাইফুল ইসলাম।