১৬ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি প্রথম ইয়াবা মামলা

সমকাল **

ফাইল ছবি

ইয়াবা ট্যাবলেট প্রথম ধরা পড়ে ২০০২ সালের ডিসেম্বরে, রাজধানীর গুলশানের নিকেতনে। হাতেনাতে গ্রেফতার হয় সফিকুল ইসলাম ওরফে জুয়েল নামের এক মাদক ব্যবসায়ী। এ ঘটনায় জুয়েলকে আসামি করে গুলশান থানায় মামলা করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সে সময়ের পরিদর্শক এনামুল হক। দেশের প্রথম ইয়াবা মামলাটি আজও নিষ্পত্তি হয়নি, সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। ১৫ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র দু’জন সাক্ষ্য দিয়েছেন আদালতে। অপর সাক্ষীদের একের পর এক সমন জারি করেও আদালতে হাজির নিশ্চিত করা যায়নি। তাদের মধ্যে নয়জন সাক্ষী সরকারি কর্মকর্তা। তবে সাক্ষীদের দাবি, সমন তাদের কাছে পৌঁছায়নি কখনও।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিএনসির পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন ভুঁইয়া সমকালকে বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রথম ইয়াবা উদ্ধার মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে গর্ববোধ করি। চাঞ্চল্যকর এ মামলা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করেছি। এতে চার মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাদের অভিযুক্ত করে ২০০৩ সালে চার্জশিট দাখিল করা হয় আদালতে। যেহেতু এটি প্রথম ইয়াবা উদ্ধারের মামলা, এ মামলার আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করি।’

এজাহার থেকে জানা গেছে, ২০০২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় ডিএনসির একটি দল গুলশানের নিকেতনের ‘এ’ ব্লকের ১২৯ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলার পশ্চিম পাশের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায়। মাদক ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম ওরফে জুয়েলকে গ্রেফতার করা হয় সেখান থেকে। জব্দ করা হয় হেরোইনসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক, মাদক সেবনের সরঞ্জাম, মোবাইল ফোন, মাদক ব্যবসায় ব্যবহূত একটি প্রাইভেটকার, দুই লাখ ৩৯ হাজার ৮০০ টাকা ও পর্নো সিডি। এর মধ্যে নেশাজাতীয় ১২০টি ট্যাবলেট ছিল, যার গায়ে ডব্লিউ ওয়াই লেখা। এই ট্যাবলেটের নাম ‘ইয়াবা’, তা তখন অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারাও জানতেন না।

মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার সফিকুলকে আসামি করে ১৯ ডিসেম্বর গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন সে সময়ের পরিদর্শক এনামুল হক। তদন্তভারও পড়ে তার ওপর। সফিকুলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদে মাদক ব্যবসায় তিন সহযোগীর নাম প্রকাশ করে সফিকুল। সহযোগীরা হলো সোমনাথ সাহা ওরফে বাপ্পী, মোশফিক রহমান ওরফে তমাল ও এমরান হক।

সফিকুলের দেওয়া তথ্যে একই বছরের ২১ ডিসেম্বর রাত ১১টায় বনশ্রীর ‘ডি’ ব্লকের একটি বাড়িতে অভিযান চালায় ডিএনসি। সেখান থেকে সফিকুলের ওই তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় আরও ৪০২ পিস ডব্লিউ ওয়াই লেখা ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন মাদক। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়। তদন্তের দায়িত্ব পান ডিএনসির পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন ভুঁইয়া। প্রধান আসামি সফিকুল ও তার বাবা সামছুল ইসলাম এবং ভাই শরিফুল ইসলামসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে তদন্ত কর্মকর্তা ২০০৩ সালের ১৪ জানুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে বলা হয়, সফিকুল ও তার তিন সহযোগী সোমনাথ, মোশফিক ও এমরানের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হয়েছে। সফিকুলের বাবা সামছুল ও ভাই শরিফুল মাদক ব্যবসায় সহযোগিতা করে অপরাধ করেছে। সামছুল ও শরিফুল পলাতক ছিল। চার্জশিটে সাক্ষী করা হয় ১১ সরকারি কর্মকর্তাসহ ১৫ জনকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৫ সাক্ষীর মধ্যে দু’জন সাক্ষ্য দিয়েছেন, বাকি রয়েছে ১৩ জনের সাক্ষ্য। তাদের মধ্যে নয়জন সরকারি কর্মকর্তা। এর মধ্যে মামলার বাদী ডিএনসির পরিদর্শক এনামুল হক ও ছানোয়ার হোসেন চাকরি ছেড়েছেন এবং ডিএনসিতে প্রেষণে থাকা তিন কর্মকর্তা নিজ দপ্তরে ফিরে যান। তাদের মধ্যে দু’জন অবসরে গেছেন। বর্তমানে চারজন সাক্ষী ডিএনসিতে কর্মরত রয়েছেন। তারা হলেন ডিএনসির বরিশালের অতিরিক্ত পরিচালক এ এ এম হাফিজুর রহমান, সিলেটের অতিরিক্ত পরিচালক জাহিদ হোসেন মোল্লা, পিরোজপুরের পরিদর্শক আহসান হাবিব ও ডিএনসির প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক দুলাল কৃষ্ণ সাহা। হাফিজুর রহমান ও জাহিদ হোসেন মোল্লা সে সময় সহকারী পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন ঢাকায়। আহসান হাবিব ছিলেন উপপরিদর্শক।

ডিএনসির অতিরিক্ত পরিচালক এ এ এম হাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, ২৫ নভেম্বর শুনানির দিন ছিল। এদিন তিনি আদালতে হাজির হয়েছিলেন সাক্ষ্য দিতে। এর আগে কেন হাজির হননি- এ ব্যাপারে তিনি দাবি করেন, তিনি আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য কোনো সমন পাননি। মামলাটি বিচারাধীন কি-না, তা তিনি জানতেন না। কারণ, মাঝখানে আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে রিট করে বিচারকাজ স্থগিত করে রেখেছিল। সমকালের কাছ থেকে এ মামলার সর্বশেষ অবস্থা তিনি জানতে পারেন।ডিএনসির অতিরিক্ত পরিচালক জাহিদ হোসেন মোল্লা মঙ্গলবার সমকালকে বলেন, এ ঘটনায় তাকে সাক্ষী করার বিষয়ে তিনি জানেন না। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার জানানোর কথা। তবে তাকে কিছুই জানানো হয়নি। তা ছাড়া আদালত থেকেও সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সমন পাননি তিনি।

পরিদর্শক আহসান হাবিব সমকালকে বলেন, দীর্ঘদিন তিনি ঢাকার বাইরে কর্মরত। এ কারণে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলার বিষয়টি তার জানা নেই। সমনও পাননি বলে জানান তিনি।