২০১৮ সালের সেরা ১০ মুসলিম ব্যক্তিত্ব

অনলাইন ডেস্ক – জর্ডানভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘দ্য রয়েল ইসলামিক স্ট্যাটিজিক স্টাডিজ সেন্টার’ প্রতি বছর ‘দ্য ওয়ার্ল্ডস ফাইভ হানড্রেড মোস্ট ইনফ্লুনসিয়াল মুসলিমস’ শিরোনামে সারাবিশ্বের প্রভাবশালী ও খ্যাতনামা মুসলিম ব্যক্তিত্বদের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। দীর্ঘ নির্বাচনপ্রক্রিয়া ও জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে তারা এই তালিকা তৈরি করে।

জর্ডানের রাজধানী আম্মানে অবস্থিত বেসরকারি এই রিসার্চ সেন্টারটি বিস্তর গবেষণাকর্মের পাশাপাশি বিগত ২০০৯ থেকে এ ধরনের তালিকা প্রকাশ অব্যাহত রেখেছে।

অন্যান্য বারের মতো ২০১৮-তেও তারা জরিপ চালিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকা তৈরি করেছে। সাধারণত ৫০০ সদস্যের তালিকা থেকে প্রথম ধাপে সর্বাধিক প্রভাবশালী ৫০ জন ব্যক্তিত্ব নির্বাচনের পর দ্বিতীয় ধাপে তারচেয়েও অধিক প্রভাবশালী সেরা ১০জন ব্যক্তিত্বকে নির্বাচন করা হয়।

সে ধারাবাহিকতায় তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের বিশ্বের সর্বাধিক প্রভাবশালী সেরা ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। চলুন সংক্ষেপে জেনে নেই তাদের নির্ঘণ্ট ও পরিচয়।

রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান

রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সারাবিশ্বের সর্বাধিক প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকায় প্রথমে রয়েছেন। ২০১৬ ও ২০১৭ সালের তালিকায় তিনি অষ্টম স্থানে ছিলেন। ৬২ বছর বয়সী এরদোয়ান মূলত রাজনৈতিক প্রতিপত্তি ও আধিপত্যের বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হয়েছেন। টানা ১১ বছর তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী থাকার পর ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে তিনি তুরস্কের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
 

সৌদির কিং সালমান

কিং সালমান বিন আবদুল আজিজ বিন আল সৌদ
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। ২০১৬ ও ২০১৭-তে তিনি তৃতীয় স্থানে ছিলেন। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণকারী সালমান ৮০ বছর বয়সে বাদশাহ হিসেবে থাকলেও মূলত তার ছেলে যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান সৌদির যাবতীয় ক্ষমতার অধিকারী (তিনি তালিকার ১৩ নম্বরে রয়েছেন।)। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে সৌদিতে বাদশাহর পদ গ্রহণকারী সালমান বর্তমানে মক্কার মসজিদুল হারাম ও মদিনার মসজিদে নববির তত্ত্বাবধায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
 

কিং আবদুল্লাহ
আয়াতুল্লাহ খোমেনি

কিং আবদুল্লাহ (দ্বিতীয়) ইবনে আল হুসাইন
এই তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছেন জর্ডানের রাজা কিং আবদুল্লাহ দ্বিতীয়। ২০১৭ ও ২০১৬ এর তালিকায় তিনি প্রথম হয়েছিলেন। ৫৪ বছর বয়সী এ রাজা রাজনীতি ও ঐতিহ্যবাহী বংশের বিবেচনায় তালিকায় স্থান পেয়েছেন। রাজত্বের পাশাপাশি বর্তমানে তিনি পার্শ্ববর্তী জেরুজালেমের বিভিন্ন অঞ্চলের দেখভালের দায়িত্বেও রয়েছেন।


আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনি
বিশ্বের প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছেন ইরানের ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব সাইয়েদ আয়াতুল্লাহ আলী আল-খোমেনি। গত দুই বছরের জরিপ-তালিকায় তিনি চতুর্থ স্থানে ছিলেন। ৭৭ বছর বয়সী এ ধর্মীয় নেতা রাজনীতি ও প্রশাসনিক ক্ষমতার কারণে তালিকায় স্থান পেয়েছেন। শিয়া মতাদর্শী খোমেনি বর্তমানে ইরান ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সবোর্চ্চ নেতা।
 

কিং মুহাম্মদ ষষ্ঠ

কিং মুহাম্মাদ ষষ্ঠ
মরক্কোর রাজা কিং মুহাম্মদ ষষ্ঠ তালিকার পঞ্চম স্থানে রয়েছেন। গত দুই বছরও তিনি একই স্থানে ছিলেন। ৫৩ বছর বয়সী এ রাজা রাজনীতি, প্রশাসনিক ক্ষমতা ও দেশীয় সার্বিক উন্নয়নের বিবেচনায় প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তিনি পারিবারিকভাবে সরাসরি মহানবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর বংশধর। গত ৪০০ বছর ধরে কিং মুহাম্মদের পূর্বপুরুষরা মরোক্কো শাসন করে আসছেন।
 

বিচারপতি মুফতি তাকি উসমানি

বিচারপতি শায়খ মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানি
বিশ্ববিখ্যাত স্কলার ও পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক মুফতি তাকি উসমানি রয়েছেন তালিকার ষষ্ঠ স্থানে। গত দুই বছরের তালিকায় তিনি ছিলেন ২২ নম্বরে। তার দেশ পাকিস্তান। ৭৩ বছর বয়সী বরেণ্য এই ব্যক্তিত্ব সামগ্রিক জ্ঞান-অভিজ্ঞানে অগাধ পাণ্ডিত্য, কর্মখ্যাতি ও পারিবারিক আভিজাত্যের বিবেচনায় তালিকায় স্থান পেয়েছেন। ইসলামী আইনশাস্ত্র ও অর্থনীতির অঙ্গনে মাইলফলকের ভূমিকা রয়েছেন দীর্ঘকাল ধরে। উর্দু, বাংলা, ইংরেজি ও আরবি ভাষায় তার গ্রন্থাদি রয়েছে।
 

আলী হুসাইন সিস্তানি

সাইয়েদ আলী হুসাইন সিস্তানি
এই তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছেন ইরানের শিয়া বিপ্লবী নেতা সাইয়েদ আলী হুসাইন সিস্তানি। ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৭ সালেও তিনি সপ্তম স্থানে ছিলেন। তবে ২০১৬ সেরা দশের বাইরে ছিলেন। ৮৬ বছর বয়সী এ ব্যক্তিত্ব শিক্ষাজ্ঞান ও বংশক্রমের বিবেচনায় এবারো শীর্ষ তালিকায় স্থান পেয়েছেন।

শায়খ হাবিব উমর



শায়খ হাবিব উমর বিন হাফিজ 
অষ্টম স্থানে রয়েছেন শায়খ হাবিব উমর বিন হাফিজ। তিনি ইয়েমেনের তারিমে অবস্থিত ‘দারুল মুস্তাফা’ সংস্থার পরিচালক। প্রিয় নবী (সা.)-এর জীবনীভিত্তিক বিভিন্ন রচনাকর্ম ও আয়োজনের কারণে তিনি বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণকারী এই ব্যক্তিত্ব তালিকায় এবারই প্রথম স্থান পেয়েছেন।
 

শেখ মুহাম্মদ আল-তৈয়ব

অধ্যাপক ড. শেখ আহমদ মুহাম্মদ আল-তৈয়ব 
২০১৭ সালে প্রথম ও ২০১৬ সালে দ্বিতীয় স্থানে থাকা মিশরীয় অধ্যাপক ড. শেখ আহমদ মুহাম্মদ আল-তৈয়ব এবার নবম স্থানে রয়েছেন। প্রশাসনিক কার্যক্রম ও ক্ষমতার কারণে তিনি তালিকায় স্থান পেয়েছেন। বর্তমানে তিনি আল-আজহার ইউনিভার্সিটির প্রধান শায়খ এবং আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের গ্র্যান্ড ইমাম। এর আগে প্রায় সাত বছর আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও মিশরের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
 

শায়খ সালমান আল-আওদাহ

শায়খ সালমান আল-আওদাহ
তালিকার দশম স্থানে রয়েছেন সৌদির বিখ্যাত স্কলার ও শিক্ষাবিদ শায়খ সালমান আল-আওদাহ। তিনি এবারই প্রথম তিনি তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তার জন্ম ১৯৪২ সালের ১ জানুয়ারি। সৌদি রাজপরিবারের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলায় ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর তিনি একবার গ্রেফতারও হয়েছিলেন। গ্রন্থকার হিসেবে তিনি বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন।