উখিয়ায় পাহাড়খেকো সিন্ডিকেটের নয়া শক্তি বিট অফিসার বজলুর রশীদ

নিজস্ব প্রতিবেদক •

উখিয়ায় বন ধ্বংসের পর পাহাড় কাটার প্রতিযোগিতায় নেমেছে পাহাড়খেকোরা। তারা পাহাড়ের উঁচু উঁচু টিলা কেটে মাটি বিক্রি করছে। আর এ মাটি প্রতিদিন অন্তত অর্ধশত ট্রাকে বিভিন্ন ইটভাটা, পুকুর ভরাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে।

বিশেষ করে রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা ও তুতরবিল ও জালিয়াপালং ইউনিয়নে পাহাড় কাটা ও মাটি বিক্রির ধুম লেগেছে। করোনা ভাইরাসের প্রকোপে সারাদেশ স্থবির হলেও অসাধু এই সিন্ডিকেট থেমে নেই।

এদিকে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সর্বত্র টহল দিচ্ছেন এবং উখিয়া রেঞ্জ অফিসার গাজী মো: শফিউল আজম যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন সফল অভিযান পরিচালনা করে সুনাম কুড়ালেও তারই অধীনে কাজ করা কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে ম্লান হয়ে যাচ্ছে এ সফল অভিযান। এতে সুযোগ ও সাহস পাচ্ছে পাহাড়খেকোরা। যার কারণে অনবরত ধ্বংসজজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে।

তেমনই একটি ঘটনা হলো- ১৯ এপ্রিল (সোমবার) রাত সাড়ে ১১টায় ওয়ালা বিটের বিট অফিসার বজলুল রশিদের নেতৃত্বে রত্নাপালং ইউনিয়নের পালং গার্ডেন এলাকা থেকে মাটি ভর্তি একটি ডাম্পার হাতে নাতে আটক করা হলেও পরবর্তীতে টাকার বিনিময়ে ডাম্পারটি ছেড়ে দেওয়া অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা যায়, বিট অফিসার বজলুল রশিদ ও ডাম্পার মালিক রশিদের সাথে গোপন আলাপ করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ডাম্পারটি ছেড়ে দিয়েছে। এসময় সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাম্পার মালিক রশিদকে সাথে নিয়ে সুকৌশলে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন বজলুল রশিদ।

সরেজমিনে জানা যায়, উখিয়ার জামতলী, গয়ালমারা, জাদিমুরা এলাকায় দেদারছে মাটি কাটা হচ্ছে। ছোট বড় ট্রাক, দিনরাত চড়া দামে এ মাটি বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। এভাবে চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। আর এ পাহাড় কাটায় রয়েছে বিশাল এক দালাল সিন্ডিকেট। যাদের টাকার বিনিময় পাহাড় কাটতে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন এই করে বিট কর্মকর্তা।

অভিযোগ প্রকাশ, ডাম্পার সিন্ডিকেট এবং মাটিখেকো সিন্ডিকেটের সাথে তার রয়েছে বিশাল এক নেটওয়ার্ক। সে ফলিয়াপাড়া এলাকার লেধু মিয়া, আবুল বলির ছেলে প্রকাশ (কালা সোনাইয়া) এবং হেডম্যান শামশুকে ব্যবহার করে রাতারাতি গুনে নিচ্ছেন টাকা।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, প্রতিদিন সে অভিযানে বের হওয়ার নাম করে রাতের বেলায় হিজলিয়া, জাদিমুরা বাগান পাহাড় এলাকায় এসে টাকার জন্য ঘুরাঘুরি করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বজলু মিয়া আসেন অভিযানের নাম করে। কিন্তু যায় পকেটভর্তী টাকা নিয়ে। ম্যানেজ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই চলে তান্ডব। এছাড়াও হিজলিয়া এলাকায় মাটি ও বালি খেকোদের সাথে রয়েছে তার গভীর সম্পর্ক।

এ ব্যাপারে জানতে বিট অফিসার বজলুল রশিদ সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমরা ডাম্পারটি আটক করে ছিলাম ঠিক আছে, তবে ওই ডাম্পারটি ছিলো খালি। তাই আমরা ছেড়ে দিলাম। আমাদের খালি গাড়ি ধরার কোন ক্ষমতা নাই।

ছেড়ে দেওয়া ডাম্পারটি ঠিক ১০ মিনিটের ব্যাবধানে আবারও মাটি ভর্তি একই স্থানে দেখা যাচ্ছে এমন প্রশ্নের প্রতি উত্তরে বিট অফিসার বলেন, দেখেন আমি বাসায় চলে আসছি তারপরও আমি রেঞ্জ অফিসারের সাথে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানাতে পারবো বলে ফোন রেখে দেন।

একই বিষয়ে জানতে উখিয়া রেঞ্জ অফিসার গাজী মো: শফিউল আজমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, মাটি ভর্তি ডাম্পার ধরে খালি বলে ছেড়ে দেওয়ার মত কাজ যদি কোন বিট অফিসার করে থাকেন অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।

এদিকে, এই ধরনের অনৈতিক বিট অফিসার আর কিছুদিন থাকলে বনভুমি সমতল ভূমিতে পরিণত হবে বলে মন্তব্য করেন এলাকাবাসী।

এব্যাপারে এলাকাবাসী রেঞ্জ কর্মকর্তার মাধ্যমে উক্ত বিট অফিসার বজলুর রশীদের বিরুদ্বে সঠিক তদন্তপুর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শাস্তিমুলক বদলী করার জন্য জোর দাবী জানিয়েছেন।