এনজিওগুলোকে দুঃসময়ে পাশে পাচ্ছে না মানুষ

ডেস্ক রিপোর্ট •

যারা দিন এনে দিন খায়, লকডাউনকে তারাই সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। গত বছর করোনা মহামারির শুরুর দিকে যখন প্রথমবার লকডাউন দেওয়া হয়, তখন সরকারের পাশাপাশি অনেক ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাধ্যমতো দুস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। পাশে দাঁড়িয়েছিল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোও (এনজিও)। কিন্ত এবারের লকডাউনে বেশির ভাগ এনজিওই দুস্থদের পাশে নেই। এনজিওগুলো বলছে, সরকারি বিধি-নিষেধের কারণে তারা মাঠ পর্যায়ে কোনো কার্যক্রম চালাতে পারছে না।

জামালপুর প্রতিনিধি জানান, লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় মানুষের মাঝে এখনো কোনো এনজিও ত্রাণ বিতরণ শুরু করেনি। জামালপুর জেলায় এনজিওর সংখ্যা শতাধিক। তাদের রয়েছে একটি ‘উন্নয়ন সংঘ’। সংস্থাটির মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক ও জেলা এনজিও সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত বছরের লকডাউনের সময় সরকারি নির্দেশনা পেয়ে জামালপুর জেলায় এনজিওগুলো টানা কয়েক মাস ধরে বিপুল ত্রাণ বিতরণ করেছে। কিন্তু এবার কঠোর বিধি-নিষেধের কারণে এনজিওগুলো বন্ধ। এ কারণে ত্রাণ সহায়তা শুরু করতে পারছি না।’
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি জানান, এই উপজেলায় প্রায় ৩৫টি এনজিও রয়েছে। লকডাউনে এসব এনজিও অসহায় মানুষের পাশে এখন পর্যন্ত দাঁড়ায়নি। ব্র্যাক কমলগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক কামরুজ্জামান জানান, তাঁরা ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছেন না। তবে সদস্যদের জমানো সঞ্চয়ের টাকা ফেরত দিচ্ছেন।

কমলগঞ্জ উপজেলা এনজিও ফোরামের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, ‘আমার জানামতে এখনো কোনো এনজিও ত্রাণ দেয়নি।’

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি জানান, গত বছর লকডাউনের সময় সরকারের পাশাপাশি অনেক এনজিও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এবার তাদের খুব একটা চোখে পড়ছে না। সৈয়দপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় ২৮টির মতো এনজিও রয়েছে। এনজিও ফোরাম সৈয়দপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ম ম রেজাউল করিম জানান, সরকারি নির্দেশে এনজিওগুলোর মাঠ পর্যায়ের সব কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। তাই ত্রাণসামগ্রী বিতরণের কর্মসূচি নেই।
সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, সেখানে দুস্থদের মধ্যে এরই মধ্যে কয়েক দফা ত্রাণ বিতরণ করেছেন স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। তবে কোনো এনজিওর ত্রাণ কার্যক্রম চোখে পড়েনি। উল্টো কিস্তি আদায়ের অভিযোগও পাওয়া গেছে। সীতাকুণ্ড এনজিও ফোরামের সমন্বয়কারী সঞ্জয় চৌধুরী বলেন, উপজেলায় ৩০টির মতো এনজিও সক্রিয় রয়েছে। এবার কোনো এনজিও এখনো ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেনি। লকডাউন দীর্ঘ হলে অবশ্যই এনজিওগুলোর নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

বামনা (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, সেখানে সরকারি-বেসরকারি কিংবা ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবার খুব একটা ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে না। লকডাউন শুরুর আগেই উপজেলা পিআইওর দপ্তর থেকে চাল ও নগদ অর্থ সব ইউনিয়ন পরিষদে বরাদ্দ করা হলেও দুস্থরা তা এখনো হাতে পাননি। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই খাবার সংকটে পড়েছেন।

বামনা উপজেলা শহরের গোলচত্বরের বিভিন্ন চায়ের দোকানে পানি সরবরাহের কাজ করতেন সফিপুর গ্রামের হতদরিদ্র গহর আলীর স্ত্রী সেলিনা বেগম। এখন চায়ের দোকান বন্ধ। সেলিনা বলেন, ‘১০ দিন ধরে কোনো রোজগার নেই। ঘরে যেটুকু চাল ছিল শেষ।’ সেলিনা বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো সহায়তা তিনি পাননি।

বুকাবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সইদুর রহমান সবুজ বলেন, ‘আমার সচিব করোনায় আক্রান্ত। তাই ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি।’ ডৌয়াতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রকৃত অভাবীদের তালিকা করা হচ্ছে। এ জন্য এই বরাদ্দ বিতরণে দেরি হচ্ছে।’

বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, চলমান লকডাউনে সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া আর কেউ দুস্থদের পাশে দাঁড়ায়নি। গত বছর লকডাউনের সময় সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও, রাজনীতিক, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রবাসী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার কেউ নেই।

বানিয়াচং উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন এনজিওর সমন্বয়ক ব্র্যাকের সিনিয়র ব্রাঞ্চ ম্যানেজার সেন্টু গোমেজ জানান, দাতাদের অর্থ সহায়তা বন্ধ থাকায় এখানকার তালিকাভুক্ত ১৮টি এনজিও কোনো সহযোগিতা করতে পারবে না।