কক্সবাজারে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে রেকর্ড: ৯ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু

বিশেষ প্রতিবেদক •

কক্সবাজার জেলায় ১৫ মার্চ রেকর্ড মৃত্যুর মিছিল বয়ে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমন মৃত্যুর ঘটনা আর ঘটেনি । জেলার জন্য এটি শংকার বিষয় বলে দাবি করেছেন সতেনমহল।

১৫ মার্চ বুধবার কক্সবাজার শহর,চকরিয়া,উখিয়া ও ঈদগাঁও উপজেলায় পৃথক ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তিন রোহিঙ্গা সহ রেকর্ড ৯ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা,আত্বহত্যা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ও গুলিতে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জন,আত্মহত্যায় ২ জন,বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ও গুলিতে ২জনের মৃত্যূ হয়।

জানা যায়, বুধবার (১৫মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বানিয়ারছড়ার আমতলী এলাকায় যাত্রীবাহি গ্রীন লাইন পরিবহণের বাসের ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন।

নিহতরা হলেন- বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ফাইতং ৩নং ওয়ার্ডের আমতলী পাড়ার মো.বশির আলমের ছেলে মো.আরমান শাকিল (২৪) এবং একই ওয়ার্ডের খুরপাইনঝিরির মো.আবু মোছার ছেলে মো.ইসমাইল সিদ্দীকি (৩৫)।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে চিরিংগা হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ ইমন চৌধুরী বলেন, গ্রীন লাইন (ঢাকামেট্টো ব-১৫-২৮২১) পরিবহণের যাত্রীবাহি বাস ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাচ্ছিল।এসময় মোটরসাইকেল আরোহী আরমান ও ইসমাইল মোটরসাইকেলে করে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল।যাত্রীবাহি গ্রীন লাইন পরিবহণের বাসটি আমতলী এলাকায় পৌছলে একটি গাড়িকে ওভারটেক করতে গিয়ে মোটর সাইকেলকে ধাক্কা দেয়।এতে মোটরসাইকেল আরোহীরা গুরুতর আহত হলে হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ওইসময় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষনা করেন।

একই দিন, উখিয়ার ৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের গুলিতে আবদুর রশিদ নামের এক রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবক নিহত হন। নিহত আবদুর রশিদ(৩০) উখিয়ার কুতুপালং ৮ নম্বর ক্যাম্পের আবুল বশরের ছেলে। তিনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতেন।

১৪ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ হারুন অর রশিদ বলেন, সকাল ৮টার দিকে ৮ নম্বর ক্যাম্পের ওয়েস্ট ব্লকে কিছু সন্ত্রাসী স্বেচ্ছাসেবক রশিদকে গুলি করে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

একই তারিখ বুধবার রাত ৯ টা ও সাড়ে ৯ টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উখিয়ার টিভি টাওয়ার ঢালুতে ট্রাক ও পিকআপ মুখোমুখি সংঘর্ষ ও এম্বুলেন্স উল্টে ৩ জন নিহত ২ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। নিহত একজনের পরিচয় ফারদিন রাফি (২৫) পালংখালি ইউনিয়নের থাইংখালীর ৫ নং ওয়ার্ড় আশার পাড়া গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে ।গুরুতর আহত অবস্থায় ২ জনকে হাসপাতালে প্রেরণ করেছে প্রত্যক্ষদর্শীরা।

স্থানীয়রা জানান,বুধবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে টিভি টাওয়ার ঢালুতে ট্রাক ও পিকআপ সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে পিকআপ চালক নিহত হওয়ার আধা ঘন্টা পর একটি এম্বুলেন্স উল্টে বাবা-ছেলে নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন।প্রাথমিক ভাবে তারা রোহিঙ্গা বলে পরিচয় পাওয়া গেছে। উখিয়া হাইওয়ে পুলিশের ওসি সাইফুল ইসলাম পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

অপরদিকে কক্সবাজার শহরে পৃথক ঘটনায় ২ জনের মৃত্যূ হয়। এর মধ্যে বুধবার রাত ১০টার দিকে কক্সবাজার শহরের টেকপাড়া চৌমুহনী এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সারভ দিনার নামে এক কিশোর মারা যায়। নিহত কিশোর সারভ দিনার টেকপাড়া চৌমুহনী নিবাসি ওসমান গণি পুতুর ছোট ছেলে। দিনারের অকাল মৃত্যূতে পরিবার ও এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

একই তারিখ বুধবার রাত ১১ টার দিকে কক্সবাজার শহরের কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোনের আল মারওয়া আবাসিক হোটেল থেকে শারমিন আক্তার নামে এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করে করা হয়। খবর পেয়ে বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হোটেলের ১৩১ নম্বর কক্ষ দরজা ভেঙ্গে ২৬ বছর বযসী ওই তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওরনার সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল তাঁর লাশ।তার বাড়ি গোপলগঞ্জ বলে জানিয়েছে মোটেল কর্তৃপক্ষ।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আলামত সংগ্রহ করে।রাত ১টার দিকে ময়না তদন্তের জন্য লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এছাড়াও, ১৫ মার্চ বুধবার কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের নাপিত খালী নতুন অফিস এলাকায় বাবাকে ভিডিও কলে রেখে মেয়ের আত্মহত্যা ঘটনা ঘটে।