ট্রলারে ১০ লাশের রহস্য দ্রুতই উদ্‌ঘাটন করা হবে: ডিআইজি আনোয়ার

বিশেষ প্রতিবেদক •

কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গের কাছে আজ সোমবার দুপুরে নিহত ১০ জনের লাশের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন মহেশখালী ও চকরিয়ার ১০ থেকে ১২ জন নারী-পুরুষ। তাঁদের কারও ছেলে, কারও স্বামীর লাশ মর্গের ভেতরের একটি কক্ষে রাখা।

আজ দুপুর ১২টার দিকে মর্গে পৌঁছায় পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি দল। এ সময় ডিআইজি ট্রলারডুবির ঘটনায় নিহতদের কয়েকজন স্বজনের সঙ্গে কথা বলেন। স্বজনেরাও ডিআইজির কাছে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। স্বজনদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ট্রলারডুবির ঘটনা উদ্‌ঘাটনে কাজ করছে পুলিশের একাধিক দল। দ্রুত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করে অপরাধীদের আইনে আওতায় আনা হবে।

এ সময় সেখানে সিআইডি ও পিবিআইর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ১০ ব্যক্তিকে ট্রলারের বরফ রাখার কক্ষে আটকিয়ে হাত পা বেঁধে হত্যার ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডিআইজি আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নিহত ১০ জনের মধ্যে চারজনকে তাঁদের স্বজনেরা শনাক্ত করতে পেরেছেন। বাকিদের এখনো শনাক্ত করা যায়নি। লাশের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহে রাখা হবে। স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে লাশগুলোর পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা সুনিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না কীভাবে হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনা ঘটেছে। কারা ঘটিয়েছে। আমাদের ইনভেস্টিগেটররা (তদন্তকারীরা) কাজ করছেন। ঢাকা থেকে সিআইডি, পিবিআইয়ের দল এসে অনুসন্ধান শুরু করেছে। আমরা ঘটনার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের দ্রুত চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।’

কক্সবাজারে মাছ ধরার ছয় হাজার ট্রলার আছে। সব কটির গায়ে নাম লেখা থাকে। যেমন: এফবি আল্লাহর দান, এফবি শেফালী, এফবি কামরুল। কিন্তু ডুবে যাওয়ার ট্রলারের গায়ে নাম লেখা নেই। ট্রলারের কক্ষ থেকে যে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়েছে, লাশগুলোর পরনে ছিল গেঞ্জি ও হাফ প্যান্ট। এতে কোনো সন্দেহ কাজ করছে কি না সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে এ নিয়ে কিছু বলতে পারছি না। ডুবে যাওয়া ট্রলারে নাম নেই কেন এ নিয়ে আমরা বোট মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলছি। সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের সঙ্গেও কথা বলব। সবকিছু জেনে আরও তথ্য পাওয়া গেলে সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড।’

স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর প্রসঙ্গে ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সবারই স্যাম্পল (নমুনা) রাখা হবে। কয়েকজনের লাশ নিতে তাঁদের আত্মীয় স্বজনেরা এসেছেন। তাঁরা চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন। লাশের আর কোনো দাবিদার না থাকলে সে ক্ষেত্রে আমরা যদি সুনিশ্চিত হই, এই লাশ তাঁদের। তাহলে হস্তান্তর করতে আপত্তি নেই।’

জলদস্যুতার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য করেন ডিআইজি আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে মহেশখালীতে অনেক জলদস্যু (৯৬ জন) আত্মসমর্পণ করেছিলেন। তাঁদের অনেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতেও অনেক জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছেন। তাঁরাও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন।

পুলিশ জানায়, গতকাল রোববার বেলা আড়াইটার দিকে শহরের নাজিরারটেক উপকূলে ডুবন্ত একটি ট্রলার থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় ১০টি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস

নিহত ব্যক্তিরা মহেশখালী ও চকরিয়া উপজেলার বাসিন্দা। ওই ট্রলারের মালিক মহেশখালীর বাসিন্দা সামশুল আলম। নিহত ১০ জনের মধ্যে সামশুল আলমও আছেন। পুলিশের সন্দেহ, পূর্বশত্রুতার জের ধরে কেউ গভীর সাগরে পরিকল্পিতভাবে ১০ জেলেকে হত্যা করে ট্রলারটি সাগরে ডুবিয়ে দিতে পারে অথবা জলদস্যুরা গভীর সাগরে ট্রলারের মাছ লুট করে জেলেদের বরফ রাখার কুটিরে (কক্ষে) আটকে রেখে ট্রলারটি ডুবিয়ে দিতে পারে।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়ার রফিক মিয়ার ছেলে শামশুল আলম (২৩), শাপলাপুর ইউনিয়নের মিটাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৮), জাফর আলমের ছেলে সওকত উল্লাহ (১৮), মুসা আলীর ছেলে ওসমাণ গনি (১৭), সাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ (২৩), মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ (১৪), মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে নুরুল কবির (২৮) এবং চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের কবির হোসাইনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৪), শাহ আলমের ছেলে মোহাম্মদ শাহজাহান (৩৫) ও চকরিয়া পৌরসভার চিরিঙ্গা এলাকার জসিম উদ্দীনের ছেলে তারেক জিয়া (২৫)।