দুর্নীতির অভিযোগে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মেম্বারদের অনাস্থা

সংবাদদাতা, রানীনগর (নওগাঁ)

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার পারইল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান জাহিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

গত সোমবার (১৮ জুলাই) পারইল ইউপির ১১ জন মেম্বার একযোগে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এমনকি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থাও জানিয়েছেন মেম্বাররা।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এক দপ্তর থেকে পারইল ইউনিয়ন পরিষদ সংস্কারের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই কাজের পিআইসি বানানো হয় ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হেলাল হোসেনকে। কিন্তু তাকে কাজ করতে না দিয়ে নিজেই কাজ করে বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করে নেয় চেয়ারম্যান। পরে মেম্বারদের সে কাজের কোনো হিসাবও দেয়নি তিনি।

এরপর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পারইল হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় সরকারি বরাদ্দের ৭০ হাজার টাকার মধ্যে ৪০ হাজার টাকা মাদ্রাসায় ও এতিমখানায় দিয়ে বাকি ৩০ হাজার টাকা অত্মসাৎ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদ।

আরও পড়ুন: গণভবন ঘেরাও করতে এলে বিএনপিকে চা খাওয়াবো: হাসিনা

অভিযোগে আরও বলা হয়, এডিপির বরাদ্দের ২ লাখ টাকার মধ্যে চেয়ারম্যান রিং পাইপ দিয়েছেন ছোট-বড় মিলে মাত্র ৪৫টি, ফুটবল দিয়েছেন ৪০টি আর ৪টি ব্যাটবল দিয়ে বরাদ্দের কাজে অনিয়ম করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আবার টিআর বরাদ্দের কাজের ৫০ হাজার টাকার মধ্যে ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বারকে দিয়ে রাস্তা সংস্কারের কাজ করে নিয়ে মহিলা মেম্বারকে সাড়ে ২৭ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা চেয়ারম্যান আত্মসাৎ করেছেন। টিআর বরাদ্দের আরও ৫০ হাজার টাকার মধ্যে ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বারকে দিয়ে রাস্তা সংস্কারের কাজ করিয়ে নিয়ে মেম্বার জয়েনুলকে মাত্র ১৮ হাজার টাকা দেওয়ার পর বাকি টাকা আর দেননি চেয়ারম্যান।

এছাড়া গত ৭ জুলাই ভিজিএফ এর চাল বিতরণের দিন পাঁচ বস্তা চাল চেয়ারম্যান বিক্রি করেন এবং নিজে চালের স্লিপ বিতরণ করে তালিকায় নাম না থাকা সর্তেও নিজের লোকজনের মাঝে চাল বিতরণ করেন। ফলে তালিকায় নাম থাকার পরেও ইউপির বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রায় ৯৬ জন চাল পাননি। ইউনিয়ন পরিষদে বরাদ্দ আসা বিভিন্ন কাজ মেম্বারদেরকে দেওয়ার পর মেম্বারদের কাছ থেকে চেয়ারম্যান জাহিদের কমিশন দাবি করার অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।

পারইল ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন, মিজানুর, ইদ্রিস, জয়েনুল হকসহ আরও মেম্বাররা জানান, পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ যোগদানের পর থেকেই নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে। ফলে পরিষদে দিন দিন নানা ঝামেলার সৃষ্টি হয়। চেয়ারম্যানের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে আমরা ১১ জন মেম্বার একযোগে গত ১৮ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

তারা আরও জানান, আমরা মেম্বাররা অনাস্থা জানিয়েছি। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা। দ্রুত অভিযোগের তদন্ত করে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে ইউপির মেম্বাররা কঠোর আন্দোলনে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পারইল ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান জাহিদ।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।