রাখাইনে বৌদ্ধ বিদ্রোহীদের হামলা, ৭ পুলিশ নিহত

ডেস্ক রিপোর্ট – মিয়ানমারের স্বাধীনতা দিবসে রাখাইন রাজ্যে বৌদ্ধ বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘দ্য আরাকান আর্মি’র (এএ) হামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭ সদস্য নিহত হয়েছেন।

এ সময় তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৪ সদস্যকে ধরে নিয়ে গেছে।

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র এবং হামলাকারী সশস্ত্র গোষ্ঠী এ হামলার কথা নিশ্চিত করেছে।

শুক্রবার ভোরে সমস্যা জর্জরিত রাখাইনের চারটি পুলিশ পোস্টে এ হামলা চালানো হয় বলে খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স, এএফপি ও কাতারের সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

দ্য আরাকান আর্মি দাবি করেছে, ওই হামলার ঘটনায় তাদেরও দুই সদস্য নিহত হয়েছেন।

পশ্চিমাঞ্চলীয় এ রাজ্যে গত ডিসেম্বর থেকেই আরাকান আর্মি ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ জোরদার হতে থাকলে নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়। এখানে বৌদ্ধ ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর স্বায়ত্তশাসন দাবি করে আসছে আরাকান আর্মি।

২০১৭ সালে এই রাখাইনে বর্বর সেনা অভিযানের মুখে সাড়ে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকেই নিহত হন। মুসলিম রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করা হয়।

জাতিসংঘ বলছে, আরাকান আর্মির সঙ্গে সাম্প্রতিক লড়াইয়ের জের ধরে আরও আড়াই হাজার বেসামরিক নাগরিককে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে হয়েছে।

আরাকান আর্মির মুখপাত্র খিন থু খা রয়টার্সকে বলেন, তারা চারটি পুলিশ পোস্টে হামলা চালিয়েছে ও পরে সাত ‘শত্রু’র মৃতদেহ ছিনিয়ে নেয়। নিরাপত্তা বাহিনীর আরও ১৪ জনকে আটক করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

খিন থু খা বলেন, ‘আটকদের বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করব। তাদের কোনো ক্ষতি করব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গত কয়েক সপ্তাহে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যে হামলা চালিয়েছে, তার জবাবেই এ হামলা চালানো হয়েছে।’

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী গত মাসেই দেশটির উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরুর জন্য চার মাস যুদ্ধবিরতির কথা জানিয়েছিল। যদিও রাখাইন এর আওতায় ছিল না।

দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম মঙ্গলবারেও একই গোষ্ঠীর হাতে আরেকটি হামলার খবর দিয়েছিল।

তবে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ঝাও মিন তুন রয়টার্সকে বলেন, শুক্রবার আরাকান আর্মির এই হামলার জবাব দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী।

যে চারটি পুলিশ পোস্টে হামলা হয়েছে, সেগুলো বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া। সেনা মুখপাত্রের ভাষ্যে, নিরাপত্তার স্বার্থে ওই অঞ্চলে সেনা অভিযান অব্যাহত থাকবে।

তবে কতজন এবারের হামলায় নিহত হয়েছে, সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

ঝাও মিন তুন বলেন, ‘ওই এলাকায় বৌদ্ধ নৃ গোষ্ঠীরা বসবাস করে এবং তারা মিয়ানমারের নাগরিক। এরা রাখাইনে থাকলেও রোহিঙ্গা নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের ৭১ বছর পূর্তিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের কয়েক মিনিট পর থেকেই হামলা শুরু হয়।’

যদিও আরাকান আর্মির মুখপাত্র খিন থু খা স্বাধীনতা দিবসের সঙ্গে এই হামলার সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন।

রাখাইনে বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো স্বাধীন নই। এটা আমাদের স্বাধীনতা দিবস নয়।’

আরাকান আর্মির অভিযোগ, পুলিশ পোস্টগুলোকে সামরিক বাহিনী আর্টিলারি হিসেবে ব্যবহার করছে। দুই সপ্তাহ আগে সেনাবাহিনী পুলিশকে যুদ্ধের মধ্যে নিয়ে আসে এবং সারা দিন ধরে সামরিক হেলিকপ্টার থেকে গুলি বর্ষণ করা হয়।

সম্প্রতি যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে, সেটি সামরিক বাহিনী একতরফাভাবে করেছে। রাখাইনে শক্তি বৃদ্ধির জন্যই সেনাবাহিনী এটি করেছে বলেও দাবি সশস্ত্র সংগঠনটির।