- প্রকাশ্যে নিলাম ডাক নেই
- যোগসাজশে মালামাল বিক্রি
- সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি জরুরী
এম ফেরদৌস, উখিয়া :
সরকারকে রাজস্ব বঞ্চিত করে নিজের পকেট ভারি করতে কাস্টমস গুদামের মালামাল লুটপাট করে বেচা-বিক্রিতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন কাস্টমস কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ।
কক্সবাজারের উখিয়ারঘাট বালুখালী কাস্টমস্ শুল্ক গুদামে রাখা জব্দকৃত বিভিন্ন মালামাল রাতের আঁধারে কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে স্থানীয় আবুল হোসনের সহযোগীতায় মালামাল পাচার ও কমমূল্যে পন্য বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে।
কাস্টমসের আলোচিত বিতর্কিত চিহ্নিত দালাল আবুল হোসেনের সাথে সিন্ডিকেট করে দায়িত্বরত কাস্টমস কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ গুদামের মালামাল নিলাম ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে মনগড়া বেচা-বিক্রি করে নিজের পকেট ভারি করতে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
প্রকাশ্যে নিলাম দিলে তার পকেটে কোন টাকা ডুকে না তাই তিনি এসব কারঁসাজি করে রাঁতের আধাঁরে গুদামের মালামাল সরিয়ে আবুল হোসেনকে দিয়া বেচা-বিক্রি করান বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
১৯ শে সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ৯ টার দিকে জব্দকৃত গুদামের জমা মাল ৭৫ বস্তা ইউরিয়া সার রাতের আধাঁরে প্রকাশ্যে নিলাম ডাক ছাড়া গোপনীয়ভাবে উখিয়ার এক ব্যবসায়ীকে বিক্রি করে দিয়েছেন কাস্টমস কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ। সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব না দিয়ে তিনি তার পকেট ভারি করতে এই সার রাতাঁরাতি বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ তুলেন স্থানীয় ব্যবসায়ীকরা।
এরকম অনেক মুল্যবান মালামাল তিনি বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে নিলাম ডাক ছাড়া বেচা বিক্রি করে রাজস্ব খাতে নামমাত্র অর্থ দিয়ে নিজের পকেটে নিয়েছেন দ্বিগুণ টাকা। এমন কর্মকাণ্ড অহরহ ঘটিয়েছে এই কর্মকর্তা।
এ ঘটনা নিয়ে কাস্টমস কর্মকর্তা আব্দুস সামাদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সারগুলো রাখাতে গুদামের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছিল তাই এই সার গুলো তড়িঘড়িতে বিক্রি করা হয়েছে। সারের বিষয় যেহেতু আমি উখিয়ার কৃষি অফিসার ও আমার উর্ধতন কর্মকর্তাকে অবগত করেছি। তারপর এক ব্যবসায়ীকে সারগুলো বিক্রি করেছি। টাকা সরকারের রাজস্বখাতে জমা করা হবে।
এ বিষয় নিয়ে উখিয়া উপজেলার কৃষি অফিসার নেজাম উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সার বিক্রির বিষয়ে কাস্টমস কর্মকর্তা আমার সাথে যোগাযোগ করছিল। আমি বলেছি জব্দকৃত সার গুলো উখিয়ার সকল সার ব্যবসায়ীকে জানিয়ে প্রকাশ্যে নিলাম ডাকের মাধ্যমে বিক্রি করে দিলে অসুবিধা নেই। গোপনীয়ভাবে রাতাঁরাতি ইচ্ছাকৃত একজনকে সারগুলো বিক্রি করে দিতে বলার এখতিয়ার আমার নেই। আমি এমন কথা বলিনি।
জানা যায়, ঘুমধুম হয়ে মায়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশের চোরাকারবারী ও ব্যবসায়ীরা দেশীয়পন্য, চাল,ডাল,তেল,নানান প্রকার সার, গরু-মহিষ, মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন মালামাল এপার ওপার আদান প্রদান করার সময় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিজিবির হাতে মালামাল আটক ও মালিকবিহীন পন্যগুলো জব্দ করতে দেখা যায়।
এসব মালামাল গুলো জব্দ তালিকা ও বর্ণনা অনুযায়ী কাস্টমস্ শুল্ক গুদামে জমা প্রদান করেন বিজিবির কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী জমে থাকা মালামাল স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ২কিলোমিটারের ভিতর প্রচারণা চালিয়ে প্রকাশ্যে নিলাম ডাক দেওয়া হয়। কিন্তু উখিয়ার এই কাস্টমস কর্মকর্তা এসবের তোয়াক্কা করেন না। তার স্বেচ্ছাচারিতায় সব ধরণের অনিয়ম নিয়মে পরিনত করেছেন। জব্দকৃত গুদামের জমা মাল গুলো তিনি প্রকাশ্যে নিলাম ছাড়া বেচা-বিক্রি করে আসছেন দীর্ঘদিন যাবত।
অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে জব্দকৃত মালামালগুলো নিয়মিত কাস্টমস কর্মকর্তার গুদামে জমা পড়ে। এসব মালামাল জমা পড়ার খবর পেলেও নিলাম বা বিক্রির খবর পান না কেউ।
তার বিভিন্ন কারসাঁজিতে নামমাত্র কিছু অর্থ চালানের মাধ্যমে জমা দেখায় সরকারি রাজস্ব খাতে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী যদি এসব মালামাল প্রকাশ্যে নিলাম ডাক হতো রাজস্ব খাতে আরো দ্বিগুণ টাকা জমা পড়তো বলে মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যাক্তি জানায়, এক সময় নিলাম ডাক দিলে এলাকায় মাইকিন করতে শুনা যেতো। মাইকিন শেষে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে প্রকাশ্যে নিলামের মালামাল বিক্রি করা হতো। দীর্ঘদিন যাবত এই স্বচ্ছ কর্মকাণ্ডগুলো দেখি না। ভাবছিলাম আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর দেশে দুর্নীতি অনিয়ম বন্ধ হবে কিন্তু দেশে এখন যা চলতেছে তার উলটো।
বিভিন্ন ব্যবসায়ীকরা বলছে, দেশের এমন ক্লান্তিলগ্নেও সরকারি রাজস্ব মেরে দিচ্ছেন এই অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ। সারাদেশে বিভিন্ন দপ্তর গুলো সংস্কারের কাজ চলছে অথচ উখিয়ার কাস্টমস অফিসের দুর্নীতি অনিয়মের সংস্কার হচ্ছে না। এর প্রধান কারণ কক্সবাজার জেলা কাস্টমসের সহকারী কমিশনার নিজেই উখিয়া কাস্টমসের দুর্নীতির সাথে জড়িত রয়েছে। না হলে তিনি এসব ঘটনা জানার পরেও কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
মুঠোফোনে অনেকবার চেষ্টা করেও কক্সবাজার জেলা কাস্টমসের সহকারী কমিশনারের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-