মরহুম মাওলানা ছগির আহমদ (রহঃ) এর ১৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

২০০৪ সালের ২৮ জুলাই আজকের এই দিনেই কক্সবাজার দক্ষিণাঞ্চলের আলেম কুলের শিরোমণি রুমখাঁ পালং ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ছগির আহমদ (রহঃ) প্রভুর ডাকে সাড়া দেন।

ক্ষনজন্মা মহাপুরুষ হযরত মাওলানা ছগির আহমদ (রহঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী…

জগতে প্রতিনিয়ত এমন অনেক ঘটনা ঘটছে যা আমরা স্বাভাবিক ও স্রষ্টার অপার লীলারুপে মেনে নেই।কারো জন্ম, মৃত্যু সাময়িকভাবে আনন্দ ও বেদনার সঞ্চার করলেও সামগ্রিকভাবে হৃদয়ে গভীরভাবে রেখাপাত করে না। দৃষ্টির গোচরে -অগোচরে কত ফুল যে ঝরে যায়, কিংবা উর্মিমুখর তরঙ্গরাজির বুদবুদ কিভাবে যে মিলিয়ে যায়,কজনেই বা তার খবর রাখে।

কিন্তু জগতে এমন কিছু ঘটনাবলীও সংগঠিত হয় যা হৃদয় ও মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে।স্বাভাবিক পর্যায়ের হলেও তা আমাদের ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়ে যায়।

মহাপুরুষ ও মহামনীষীগণের আগমন ঘটে মানব সমাজের প্রতি মহান রাব্বুল আলামীনের নিতান্ত করুণা ও মেহেরবানী স্বরুপ।

মানব সৃষ্টির প্রকৃত উদ্দেশ্য তথা সৃষ্টি রহস্য অনুধাবন করতে সক্ষম হওয়া যায় মহাপুরুষগণের সাধনা,দর্শন,শিক্ষা-দীক্ষা ও বর্ণাঢ্য জীবনের ঘটনা প্রবাহ দ্বারা।যারা প্রভু প্রদত্ত প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট মানব সমাজকে প্রদান করেন সীরাতে মোস্তাকিমের দিশা। মহাপুরুষগণ তাই মানবসমাজের জন্য অপরিহার্য ও অমূল্য ধন।

পৃথিবীতে তাদের শুভাগমন যেভাবে পরম কাংখিত ও আনন্দ সংবাদ তদ্রুপ তাদের তিরোধান মানব সমাজের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও দুঃসংবাদ।সুশীল সমাজ তাদের বিয়োগ ব্যাথায় হন আবেগ আপ্লুত ও উদ্বেলিত। তাদের ইন্তেকালে যে শুন্যতার সৃষ্টি হয় তা আদৌ পূরণ হয়না।

জন্ম ও বংশ পরিচয়
——————————
মাওলানা ছগির আহমদ (রহঃ) ১৯২৯ সালে কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের মাতবর পাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।

পিতা- তমিম গোলাল মাতবর ও মাতা-ফাতেমা বেগম।তার পিতা তমিম গোলাল মাতবর ছিলেন তৎকালীন সময়ের উখিয়ার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের অন্যতম। মাতা ছিলেন একজন দ্বীনদার, পরহেজগার,খোদাভীরু মহিলা।

শৈশবকাল
—————-
শৈশবে মরহুম মাওলানা ছগির আহমদ (রহঃ) ছিলেন ভদ্র, শান্ত,শিষ্ট প্রকৃতির অমায়িক আচার-আচরণের অধিকারী।এলাকার আবাল বৃদ্ধা,বণিতা সবার নিকট ছিলেন তিনি প্রিয়ভাজন ও আস্হাভাজন।

শিক্ষাজীবন
——————
বিদ্যান পিতার ঔরসে, বিদুষী মায়ের গর্ভে জন্ম বিধায় জন্মলগ্ন থেকেই হযরত মাওলানা ছগির আহমদ (রহঃ) এর অসাধারণ মেধা ও চারিত্রিক গুণাবলী পরিপুষ্ট হতে থাকে। বাল্যকাল থেকেই তিনি প্রখর মেধার অধিকারী ছিলেন।প্রাথমিক শিক্ষার হাতেকড়ি হয় মরহুম মাওলানা
রশিদ আহমদ (রহঃ) এর কাছে।

প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে ভর্তি হন রাজাপালং এমদাদুল উলুম ফাযিল মাদ্রাসায়। অত্র মাদ্রাসা হতে দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম শ্রেণী তথা ফাস্ট ডিভিশনে উত্তীর্ণ হন ও উম্মুল মাদারীস চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে ফাযিল এবং চট্টগ্রামের দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম শ্রেণী তথা ফাস্ট ডিভিশনে উত্তীর্ণ হন। ছাত্র হিসেবে তিনি ছিলেন প্রকট মেধার অধিকারী।জীবনের প্রতিটি প্রতিযোগীতামুলক পরীক্ষায় তিনি তার অপারজেয় মেধা ও প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন।

বিবাহ বন্ধন ও সন্তান সন্ততি
—————————————-
মাওলানা ছগির আহমদ (রহঃ) ৬ ভাই ৪ বোনের মধ্যে ৫ম।তিনি নিদানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম ইয়াকুব আলী মাস্টারের কন্যা বশিরা বেগমের সাথে ১৯৬০ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
তাদের ঔরসে ৭ মেয়ে ও ১ ছেলে জন্মগ্রহণ করেন। যথাক্রমে -তাহেরা বেগম,সুফিয়া বেগম,সাজেদা বেগম, ছালেহা বেগম,উম্মে কুলছুম, মোমেনা, হুমাইরা ফারজানা ও মোহাম্মদ নোমান।

কর্মজীবন
————–
লেখাপড়া শেষ করে ১৮৮৯ ইং সনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া রত্নাপালং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ১৯৬০ সালে যোগদান করেন। ১৯৯৬ সালে অবসরের আগ পর্যন্ত অত্র প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন।

মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় অবদান
————————————-
হযরত মাওলানা ছগির আহমদ (রহঃ) বরেণ্য আলেমদের শীর্ষ কাতারের এক মহান ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
বিরল প্রতিভার অদম্য মেধাবী ও তীক্ষ্ণধী সম্পন্ন এই মনীষীর দ্বারা সমাজের তৃণমুল পর্যায় থেকে সর্ব্বোচ্চ স্থর পর্যন্ত সবাই উপকৃত হয়েছেন।অবহেলিত ও অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত রুমখাঁ পালং নামক গ্রামকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতে ব্রতী হন।

নিজ পরিবার ও এলাকার কয়েকজন মহান ব্যক্তি যথা- মাওলানা অজি উল্লাহ, সুলতান আহমদ সওদাগর, মরহুম ইব্রাহীম আজাদ, সৈয়দ বখতিয়ার আহমদ চৌং, মরহুম হাজী হামিদ উল্লাহ (সওঃ),আলহাজ্ব আজিজুর রহমান,আলহাজ্ব মাহমুদুল হক চৌধুরী, আলহাজ্ব আলী আহমদ, মরহুম ছৈয়দ আহমদ(ছৈয়দা মাইজ্জা),মরহুম রশিদ আহমদ ডিলার,আলহাজ্ব আব্দুল শুক্কুর সহ আরো নাম অজানা দেশে বিদেশে অবস্থানরত ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় ১-১-১৯৮৩ সনে রুমখাঁ পালং ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।

জীবনে ৮বার যথাক্রমে- ১৯৬৯, ১৯৮৩, ১৯৮৪, ১৯৮৮, ১৯৯৪, ১৯৯৭, ১৯৯৯, ২০০১ সালে পবিত্র হজ্বব্রত পালন করেছেন।

প্রবাসীদের কাছে মাদ্রাসার জন্য হাত পেতেছেন,
মাদ্রাসার সফলতা কামনায় পবিত্র কাবার গিলাফ ধরে কান্নাকাটি করেছেন।

অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাধনায় সৃষ্ট ইলমে নববীর বাগান থেকে অমীয় সুধা পান করে অগনিত শিক্ষার্থীরা দেশ বিদেশের আনাচে কানাচে তাওহীদের ঝান্ডা সমুন্নত করেছেন।

ইসলামি শিক্ষার প্রসারে তার অবদান
—————————————————
মাওলানা ছগির আহমদ (রহঃ) আরবী ভাষার সুপন্ডিত ও অনুপম প্রতিভার অধিকারী ছিলেন।ব্যক্তি জীবনে স্কুল শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন অতিবাহিত করলেও তিনি সবসময় দ্বীনি শিক্ষার প্রসারে অনন্য অবদান রাখেন।

অসংখ্য মসজিদ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে রুমখাঁ বাজার হেফজ খানা, রুমখাঁ বাজার পান্জেগানা,মওলানা আব্দুল গণী পাড়া পান্জেগানা।

তাছাড়া তিনি কোর্ট বাজার স্টেশন জামে মসজিদের সভাপতি ও রুহুল্লার ডেভা হেফযখানার সভাপতি ছিলেন। বায়তুশ শরফের প্রাণপুরুষ মাওলানা আব্দুল জব্বার (রহঃ) ইন্তেকালের এক বছর আগে হযরতকে বায়তুশ শরফ কক্সবাজার দক্ষিণ অঞ্চলের সকল প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মনোনীত করেন।তার হাতে গড়া ছাত্র যারা বিভিন্ন অঙ্গনে এবং জাতীয় জীবনে বিরাট অবদান রাখছেন।

সমাজ সংস্কার ও সমাজ সেবায় ভুমিকাঃ
——————————————————-
বেদআত ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন। জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত কোরআনের বাণী প্রচারে ব্রত ছিলেন। সমাজ সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন।প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সমাজ সেবামুলক কর্মকান্ডে সফলভাবে ভূমিকা রাখেন।

অন্তিম মুহূর্তে অলৌকিকতার বিস্ফোরণ
——————————————————–
“কারামত” আওলিয়ায়ে কেরামের স্বাতন্ত্রিক বৈশিষ্ট।আল্লাহ পাকের প্রিয় বান্দাদের ক্ষেত্রে স্বভাবতঃ এমন কিছু আলৌকিক ঘটনা ঘটে,যা সাধারণ লোকের পক্ষে ঘটানো সম্ভব নয়। যা রাব্বুল আলামীনের নিকট তার প্রিয় বান্দাদের মক্ববুলিয়তেরই বহিঃপ্রকাশ। মাওলানা ছগীর আহমদ (রহঃ)’র ক্ষেত্রেও এমন অনেক কারামতের বহিঃপ্রকাশ হয়েছে পার্থিব জীবনের অন্তিম মুহুর্তে। এ রকম বহু কারামতের সমাহার ঘটলেও প্রবন্ধ-কলেবর দীর্ঘ হওয়ার ভয়ে একটাতেই পরিতৃপ্ত হলাম।

শত-সহস্র মানুষের আধ্যাত্নিক রাহবার হযরত মাওলানা শাহ আবদুল হাই (দাঃবাঃ)(খুটাখালীর পীর)’র পীর ভাই ছিলেন মওলানা ছগির আহমদ (রহঃ)।তার জীবদ্দশায় উভয়ের সম্পর্ক ছিল গভীর।ভাতৃতুল্য সম্পর্ক।

উভয়েই এক শায়খের খলীফা।তাই হৃদ্যতাপূর্ণ ভালবাসায় ছিল টইটম্বুর। ২৮ই জুলাই ২০০৪। কে জানে!তিনি আজ মহান রাব্বুল আলামীনের সাক্ষাতে ধন্য হবেন,চির-আবাসস্হল জান্নাতের অতিথি হতে যাচ্ছেন। বেহেশতের হুররা তার আগমনের প্রতীক্ষার প্রহর গুণছেন।

রাব্বুল আলামীনের নির্ধারিত ফেরেশতারা দাড়িয়ে আছেন তাকে স্বর্গীয় অভ্যর্থনা জানাতে। কিন্তু এমন নিষ্ঠাবান ওলীদের খবর তার প্রিয় মানুষটিকে রাব্বুল আলামীনের

পক্ষ হতে অবগত করানোর মত লোমহর্ষক ঘটনা সত্যিই বিরল। রাত ১.২০ মিনিট তার রাব্বে কারীমের সাক্ষাতের শুভ মুহুর্ত। ঐ রাত্রেই তার পীর ভাই মাওলানা আব্দুল হাই(দাঃবাঃ)’র গাড়ীর ড্রাইভারের স্বপ্নের মাধ্যমে রাব্বুল আলামীন যেন তাকে জানানোর ফন্দি আঁটলেন তার প্রিয় বান্দার মিলন সংবাদ। ঐ রাত্রে গাড়ীর ড্রাইভার স্বপ্নে দেখেন,মাওলানা ছগীর আহমদ (রহঃ) একটি মাটির নতুন ঘর তৈরি করে ঐ ঘরে দাওয়াত দিচ্ছেন তার পীর ভাই মাওলানা আব্দুল হাই (দাঃবাঃ)কে।
এদিকে রাত ৩টার দিকে মৃত্যু সংবাদ নিয়ে হযরতের
পরিবারের পক্ষ হতে ফোন করা হলে আব্দুল হাই (দাঃবাঃ)গাড়ীর ড্রাইভারকে ডাকেন। আর গাড়ীর ড্রাইভার এই সংবাদ পেলেই অবাক! অনর্গল বলে দিল তার স্বপ্নের কথা।

অবশেষে তার পীর ভাই মাওলানা আব্দুল হাই (দাঃবাঃ)গাড়ী নিয়ে রওয়ানা দিলেন তার প্রিয় ভাইয়ের আখেরী বিদায় জানাতে। আসলে এই ধরনের অলৌকিক ঘটনাই বলে দেয়,রাব্বুল আলামীনের প্রিয় বান্দার কথা। যাতে রয়েছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা। কেমন সোনালী জীবনের অধিকারী হলেই এ ধরণের সুসংবাদ বহনকারী ঘটনা ঘটে?যা মক্ববুলিয়্যাতের স্বাক্ষর বহন করে।

আধ্যত্নিকতা
—————–
সত্যের এ মহান সাধক আধ্যাত্নিকতার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই।রেখে গেছেন সমসাময়িক যুগে অগ্রণী ভুমিকা।যার অক্লান্ত পরিশ্রমে পথভুলা অনেকেরই মিলেছে সঠিক দিশা,সম্পর্ক গড়তে পেরেছে রাব্বে কারীমের সাথে। সাথে। ইসলামের আলো প্রতিটি মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌছে দেওয়াই ছিল তার জীবনের মহান ব্রত।

এজন্য তিনি শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় পরিতৃপ্ত হননি।ইলমে জাহেরীর পাশাপাশি চর্চা করেন ইলমে বাতেন তথা আধ্যাত্নিক শিক্ষারও। উম্মুল মাদারীস চুনতি হাকীমিয়া কামিল মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালেই তিনি ঐতিহাসিক দরবারে গারাঙ্গিয়া আলিয়ার আলা হযরত বড় হুজুর হযরত শাহ মাওলানা আব্দুল মজীদ (রহঃ)’র সাথে আধ্যাত্নিক সম্পর্ক গড়ে তুলেন।এবং তার থেকেই ক্রমান্বয়ে তাসাউফের সবক নিতে শুরু করেন।

অতঃপর তিনি চুনতি মাদ্রাসা হতে দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হলেও মনেপ্রাণে দরবারে গারাঙ্গিয়ার মায়া ছাড়তে পারেননি।

কেননা আপন শায়েখকে কেই বা কাছে পেতে না চায়! ফলে দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালেও বড় হুজুর (রহঃ)’র সাথে সম্পর্ক অটুট রাখেন।ঘনঘন আসতেন হযরতের নিকট।ধারাবাহিকভাবে তাসাউফের সবক নিতে কোনমতেই ত্রুটি ছিলনা তার। যদ্দরুণ তার নম্র,ভদ্র ও মার্জিত আচরণ,একনিষ্ঠতা ও খোদাভীরুতারর প্রতি মুগ্ধ হয়ে কামিল পাশ করার পরেই তাকে চার ত্বরিকার (মুজাদ্দেদীয়া, চিশতীয়া, কাদেরীয়া, নক্বশবন্দিয়া) খেলাফত দানে ধন্য করেন হযরত শাহ আব্দুল মজীদ (রহঃ)(প্রকাশ বড় হুজুর)।অতঃপর তার ইন্তেকাল পর্যন্ত তিনি হুজুরের সাথে সু সম্পর্ক বজায় রাখেন।

হযরতের ইহলোক ত্যাগ
———————————-
মরহুম মাওলানা ছগির আহমদ (রহঃ) ২৮ জুলাই ২০০৪ ইং রাত ১.২০ মিনিটে নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বেস ত্যাগ করেন। ইন্না………রাজেউন।

তিনি মৃত্যুকে খুব বেশী ভয় করতেন। মৃত্যুর আগেই তিনি মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহন করেন।
কাফন দাফনের ব্যবস্হা মৃত্যুর আগেই করে রাখেন। তিনি মৃত্যুকে চিনেছেন, মৃত্যুর ইলহাম হয়তো হযরতের কাছে এসেছিল যার কারণেই মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্তে মৃত্যুর নির্দিষ্ট সময় বারবার জিজ্ঞাসা করেছিলেন। এমন এক মহান ব্যক্তিত্বকে হারাতে মন কখনো চায়নি তবু হারাতে
হল।জগতে কেউ চিরন্তন নয়। আয়ু শেষ হতেই সকলকে আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হয়,এটাই তার অমোঘ নীতি।

কিন্তু হযরতের মৃত্যুতো কেবল একজন প্রিয় ব্যক্তিকে হারানো নয় বরং এলমে ওহীর একটি আলোক স্হর চোখের আড়াল হওয়া। যে ক্ষতি অপূরণীয় হয়ে থাকবে চিরক্ষণ। আমাদের অবনতিমুখি শিক্ষাব্যবস্হা দ্বারা স্হলাভিষিক্ত কেউ হবেন তা কল্পনাও করা যায়না।

নিকট ও দুর অতীতে যারা চলে গেছেন তাদের স্হান শূন্যই রয়ে গেছে। আসলে এমন বিজ্ঞ আলেমে দ্বীনের অন্তর্ধান ধরাপৃষ্ঠে থেকে ইলমে ওহী বিদায় গ্রহনের ক্রমধারা। হযরতের বিরহ বেদনায় ও পরবর্তী পরিস্হিতি অনুধাবনে আমাদের অনুভুতি ছিল ঠিক তেমনি,যেমন হযরত ফাতেমা (রাঃ) নবীজির বিয়োগান্তে তার বিখ্যাত কবিতায় এভাবে প্রকাশ করেছেন-“ছুব্বাত আলাইয়া
মাসাইবু লাউ আন্নাহা-ছুব্বাত আলাল আইয়্যাম ছিরনা লায়ালিয়া” অর্থাৎ আকাশ ভেঙ্গে যতেক বিপদ ঠেকল শিরে খুইয়ে তোমার দিবস হত তিমির নিশি রেখে রবি বেদনা ব্যাথায়। বিশাল আয়তনে আকাশদ্বার যাদের হারিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে তাদের তরে এই সামান্য দেহের কান্নায় রক্ত ঝরানো মোটেও কঠিন ছিলনা।সেই মুহুর্তে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব কঠিন ছিল। কিন্তু পবিত্র কোরআনের ধৈর্য্যের নির্দেশ ও সুফল সম্বলিত আয়াত সমুহ আমাকে স্বাভাবিক করতে সক্ষম হয়।

আমার অবস্হাটি কবির ভাষায় এভাবে ব্যক্ত হয়-
“নয়ন যদি সুযোগ পেত বইয়ে দিতে রোধির ধারা
কোরআন এসে করল বারণ ধৈর্য ধরো স্বজন হারা”
মরহুম মওলানা ছগির আহমদ (রহঃ) আজ আমাদের মাঝে নেই কিন্তু রয়ে গেছে তার স্বর্ণালী আদর্শ,যা যুগ যুগ ধরে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে এ অধমের বিনীত আরজ, তিনি যেন হযরতকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করেন আমীন।

খাইরুল আমিন
বি.এ,অনার্স,এম.এ
চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়