উখিয়ার প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে গলাকাটা বাণিজ্য

 

রফিক উদ্দিন বাবুল,অতিথি প্রতিবেদক 

উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে নামসর্বস্ব লাইসেন্সের ব্যানারে গড়ে উঠা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চলছে গলা কাটা চিকিৎসা বানিজ্য। এসব হাসপাতাল গুলোতে অদক্ষ নার্স, আয়াসহ বিভিন্ন ডিগ্রিধারী চিকিৎসকের নামসম্বলিত সাইনবোর্ড লাগানো হলেও মূলতঃ সরকারি প্রশিক্ষন প্রাপ্ত চিকিৎসকের অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে উখিয়ার ২০ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গড়ে উঠেছে প্রায় ৫শতাধিক ফার্মেসি। যেসব ফার্মেসির নেই কোন বৈধতা, নেই কোন ফার্মাসিষ্ট। দেদারসে বেছাকিনা হচ্ছে অখ্যাত কোম্পানির তৈরি করা নিম্ন মানের ঔষুধ সামগ্রী।

অশিক্ষায় কুশিক্ষায় বেড়ে উঠা বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্টীর ব্যাপক চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী ক্যাম্পের আনাচে কানাচে ঠাই নিয়ে এসব ফার্মেসি গুলোতে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা চলছে বলে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা সূত্রে জানা গেছে।

সদ্য বদলী হয়ে যাওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন এ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ জনপদ কোটবাজার এলাকায় প্রতিষ্টিত দুটি প্রাইভেট হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে অপারেশন টিউটারসহ অদক্ষ অযোগ্য নার্স আয়া দ্বারা রোগিদের চিকিৎসা দেওয়ার অপরাধে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করার পর উখিয়ার বেশ কয়েকটি নামীদামী হাসপাতাল ও ক্লিনিক কিছু দিনের জন্য উধাও হয়ে গিয়েছিল।

ইউএনও মাঈন উদ্দিন এসময় কুতুপালং ক্যাম্পে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে ফার্মেসির বৈধতা ও ফার্মাসিষ্ট না থাকার ইস্যু নিয়ে বেশ কয়েকজন ফার্মেসি মালিককে জেল জরিমানার শাস্তি বিধান করলেও তাদের অবৈধ বানিজ্য থামেনি।

গতকাল শুক্রবার কুতুপালং মধুরছড়া, লম্বাশিয়া, বালুখালী পানবাজার, থাইংখালী হাকিম পাড়া, তাজনিমারখোলা ময়নাঘোনা ক্যাম্প ঘুরে রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সহজ সরল রোহিঙ্গাদের সাথে অভিনব প্রতারনার মাধ্যমে কথিপয় অসাধু রোহিঙ্গা মেয়াদ উর্ত্তীন্ন, নি¤œমানের ঔষুধ সামগ্রী বিক্রি করছে। নামবিহীন একটি ফার্মেসিতে গিয়ে দেখা যায়, ১৬/১৭ বছর বয়সী এক যুবক মহিলার কোমরে ইনজেকশন ফুস করছে।

সাংবাদিক দেখার সাথে সাথে সে ইনজেকশন খুলে ফেলে দ্রুত সটকে পড়লেন। আমিনা খাতুন (৫৫) নামের ওই মহিলা জানান, তার সারা শরিল ব্যাথায় জর্জরিত। তাই চিকিৎসার জন্য ঔষুধের দোকানে এসেছে। সে জানায় তার কাছ থেকে ট্যাবলেট জাতীয় ঔষুধ চেয়েছিলাম। কিন্তু সে জোর করে ইনজেকশন ফুস করছে। পাশে বসা একজন রোহিঙ্গা যুবক জানালেন, ইনজেকশন মারলে বেশি টাকা আদায় করতে পারে এজন্য এখানকার ফার্মেসি ওয়ালারা রোগি আসার সাথে সাথে স্যালাইন অথবা ভিটামিন জাতীয় ইনজেকশন ফুস করেন।

সাংবাদিকদের তৎপরতা দেখে অন্যান্য ফার্মেসি ওয়ালারা তাৎক্ষনিক ভাবে দোকান বন্ধ করে সটকে পড়েছে। রোহিঙ্গা মাঝি আয়ুবুল্লাহ জানান, তাদের অপচিকিৎসার কারনে অনেক রোহিঙ্গা রোগীর অবস্থা চরম অবনতি হয়েছে। অনেকেই মারা গেছে।

উখিয়া ফার্মেসি মালিক সমিতির সভাপতি ডাঃ আব্দুল জব্বার জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেসব ফার্মেসি গড়ে উঠেছে ওইসব ফার্মেসিতে তল্লাসি অভিযান চালালে একটি দোকানেরও বৈধতা পাওয়া যাবেনা। তাজনিমারখোলা রেডক্রিসেন্ট পরিচালিত চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রের প্রশিক্ষন প্রাপ্ত নার্স ছেনুয়ারা জানান, রোহিঙ্গারা ফার্মেসির অবৈধ চিকিৎসা নিয়ে যখন সরিলের অবনতি দেখা দেয় তখন ওইসব রোগীরা তাদেও দ্বারস্থ হয়।

এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুকে পুজি করে উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে আকর্ষনীয় ব্যানারে বিভিন্ন ডিগ্রীধারী চিকিৎসকের নাম দিয়ে গলাকাটা চিকিৎসা বানিজ্য চালিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, এসব প্রাইভেট হাসপাতাল ও বেঙের ছাতারমত গর্জে উঠা ক্লিনিকে ভ্রাম্যমান অভিযান চালানোর প্রক্রিয়া চলছে।