“ঘোড়ার উল্টো পিঠে রোয়াইঙ্গা “

আলমগীর মাহমুদ

রোয়াইঙ্গা। প্রত্যেক সকালেই যাদের জীবনে যোগ হয়েছে আরো একটি নুতন দুখের। নুতন টেনশনের। নুতন আতংকের। নুতন বিরহের।

শাহ সুজা পরিবার আরাকানে নির্মম হত্যার পর।
১৬৬১ সালের পর থেকে অদ্যাবধি নুতন দুঃখকে শুভেচ্ছা স্বাগতম জানাতে জানাতেই মাতৃভূমির মাথাগুজার ঠাঁইটূকুনও হারিয়েছে যুদ্ধবিনে। হত্যা,ধর্ষণ, লুন্ঠন হয়েছে দেশ পাহারাদারের হাতে।পাহারাদারই ঘরছাড়া করেছে গেরস্তকে। জীবন বাঁচাতে এক কাপড়ে যারা আজ বাংলাদেশে রিফুইজি।

স্বাধীন সার্বভৌম আরাকান ছিল যাদের দেশ। ১৫৮৫ সালে বার্মারাজ বোধপায়া আরাকান আক্রমণ করে।আরাকানকে বার্মার সাথে একীভূত করে।আরাকানীদের জীবনে আসে নুতন পরিচয় ‘বার্মাইয়া'(প্রাচীন বার্মার অধিবাসী)।

আরাকানের বিরাট এক জনগোষ্ঠী ছিল ইসলামের অনুসারী। কামানচি,থাম্বইক্য,জেরবাদী,রোয়াইঙ্গা প্রভৃতি নানা নামে ছিল তাঁদের পরিচিতি। রোয়াইঙ্গা জনগোষ্ঠী ছিল তাদের মধ্যে আরাকানের বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠী।যাদের রয়েছে পৃথিবীবাসীকে ঋণী করা অতীত।

শুধু বাংলা সাহিত্যের দিকে যদি তাঁকাই….

কবির নাম—————কাব্য/পুঁথি
১/দৌলত কাজী——-সতীময়না
২/কোরেশী মাগন ঠাকুর –চন্দ্রাবতী কাব্য

৩/মহাকবি আলাওল –পদ্মাবতী কাব্য,সয়ফুলমুলক বদিউজ্জামান,হপ্ত পয়কর,সেকান্দরনামা,তোহফা বা তত্তোপদেশ,দৌলত কাজীর অসমাপ্ত “সতীময়না লোর চন্দ্রানী ও রাগতালনামা প্রভৃতি।

৪/মরদন —–নসীব নামা।
৫/আবদুল করিম খোন্দকার ——-দুল্লা মজলিশ,তমিম আনচারী ও হাজার মাদায়েল।

৬/আবদুল করিম৷ —-রোসাঙ্গ পাঞ্চালী
৭/আবুল হোসেন —–আদমের লড়াই।

৮/আবদুল করিম—–রাহাতুল কুলুব,আবদুল্লাহর হাজার সাওয়াল,নূরনামা,মধুমালতি,দরীগে মজলিশ।

৯/ইসমাইল সাকের—— বিলকিসনামা।
১০/কাজী মোহাম্মদ হোসেন ——আমীর হামজা,দেওলাল মতি,হায়দর জঙ্গ।
১১/নসরুল্লাহ খন্দকার—-জঙ্গনামা,মুসার সাওয়াল,শরীয়তনামা,হিদায়িতুল ইসলাম।

এই সবই আরাকান রাজসভায় বাংলা সাহিত্যের উপহার।রোয়াইঙ্গাদের ধন।এমনসব সৃষ্টি আলোহীন যুগে যারা ছিল সৃষ্টির উত্তরাধিকারী। তারা আজ কুতুপালং, ময়নারঘোনা,বালুখালী,থেইমখালী,জামতলীর রিফুইজি বাচাইয়ের(ঝুপড়ি) নীচে।

মাথার উপরে তেরপল,পাশে তেরপল,ডানে তেরপল,বায়ে তেরপল।তেরপলই অদৃশ্য করেছে আকাশকে।তারা বেমালুম। খায় ঘুমায়।সন্তান উৎপাদন বিনে কোন কর্মেই তাদের রাখেনি পারদর্শিতার সুযোগ।

বিশ্বমানবতার নমুনা রোয়াইঙ্গাদের রিলিফ দিয়ে পেটের ক্ষুধা মেটানো।
বছরের পর বছর এভাবে পেটের ক্ষুধা মেটানোই যদি মানবতা হয়, হাতগুলো কর্মহীন, মেধা অলস,কর্মদক্ষতা পঙ্গুত্ব বরণ করে।তখন মানবতাবাদী নয়,হত্যাকারীর দলেই উঠবে নাম।নিচিহ্ন হয়ে পড়বে রোয়াইঙ্গা, ইতিহাসের পাঠ্য বিনে কোথাও রইবে না অস্তিত্ব।

অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।সেই শয়তানের কারখানার নিয়ন্ত্রণকারী বনবে তারা।সৃষ্টি হবে আমাদের কর্মে।আসুন নিজের পায়ে কুড়ালমেরে একটা জাতিকে আদর আদর ভাব দেখিয়ে ধ্বংসের চেয়ে ঠিক কাজটি করি।

১৭৯৯ সালে বৃটিশরা আরাকানি রিফুইজিদের এতদঞ্চলে হাত,পা,মাথা কর্মে রেখেছিলেন।সে শিক্ষাটা ধারণ করি।নইলে তীরবিদ্ধ পাখির মত বাঙালী তার খেসারত দিবে।দেশটাকে বাঁচাতে আসুন “ঠিক কাজ সঠিক সময়ে করি”।

লেখকঃ- বিভাগীয় প্রধান (সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ)

উখিয়া কলেজ,কক্সবাজার।
ইমেইলঃalamgir83cox@gmail.com